নয়া দিল্লি: ওয়াকফ বোর্ড আইনে সংশোধন আনতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। আজ, বৃহস্পতিবার সেই বিল পেশ করা হয়। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী কিরণ রিজিজু এদিন সংসদে উল্লেখ করেন, এই বিল কোনও বিভেদ তৈরির করার জন্য আনা হয়নি। কোনও ধর্মীয় সংগঠনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাও এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য নয়। তবে এদিন সংসদে বিলের তীব্র বিরোধিতা করেন বিরোধী দলের সাংসদরা। তাঁদের দাবি, হিংসা ছড়ানোই এই বিলের উদ্দেশ্য।
১৯৯৫-এর ওয়াকর বোর্ড অ্যাক্টে বদল আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কী এই ওয়াকফ সম্পত্তি? কী কী সংশোধন আনার চেষ্টা চলছে?
সেই স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিকেই ওয়াকফ সম্পত্তি বলা হয়, যা দলিলের মাধ্যমে আল্লাহর নামে করে দেওয়া হয়। সেই সম্পত্তি চ্যারিটির বা সেবার কাজে ব্যবহার করা হয়। নথিপত্রের যুগ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে এই পদ্ধতি প্রচলিত আছে।
সাধারণত কোনও জনসেবার কাজে ব্যবহৃত হয় এই জমি। অথবা কেউ উত্তরসূরী হিসেবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। এই সম্পত্তি কখনও হস্তান্তর করা যায় না। সাধারণত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবর, মসজিদের জন্য, গরিব মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য জমি ব্যবহার করা হয়।
ওয়াকফ সম্পত্তির যাদের দায়িত্বে থাকে, আইনি ভাষায় তারাই ওয়াকফ বোর্ড। ১৯৬৪ সালে তৈরি হয় সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল। দেশ জুড়ে ওয়াকফ বোর্ডগুলি এই কাউন্সিলের নজরদারিতে চলে। সম্পত্তি নিয়ে ওয়াকফ বোর্ড ছাড়াও রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও সম্পত্তির বিষয়ে কথা বলে এই কাউন্সিল। প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিতে পারে। ওয়াকফ বোর্ড কেমন কাজ করছে, তাদের ব্যাপারে অডিট রিপোর্টও তৈরি করতে পারে এই কাউন্সিল।
১৯৯৫ সালে একটি আইন তৈরি হয়, যা সংশোধন হয় ২০১৩ সালে। সেই আইনে ওয়াকফ বোর্ডকেই ক্ষমতা দেওয়া হয়, যাতে তারাই ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত করতে পারে।
১. এই বিল মূলত ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতায় রাশ টানতে চাইছে। নতুন সংশোধনীতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ওয়াকফ সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে ডিস্ট্রিক্ট কালেকটরের অফিসে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে, যাতে সম্পত্তির সঠিক মূল্যায়ন হয়।
২. আইন কার্যকর হওয়ার আগে বা পরে যদি কোনও সরকারি সম্পত্তি ‘ওয়াকফ সম্পত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে, সংশোধনী আনলে, তা আর ওয়াকফ সম্পত্তি থাকবে না। ডিস্ট্রিক্ট কালেকটর ঠিক করবে, সেটা ওয়াকফ সম্পত্তি নাকি সরকারি জমি। সেই সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।
৩. সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর চাইলে ডিস্ট্রিক্ট কালেকটর কোনও বদল আনতে পারেন ওই জমির রেভিনিউ রেকর্ডে। রিপোর্ট দিতে পারবেন রাজ্য সরকারকে। রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট না পেশ করা পর্যন্ত ওয়াকফ প্রপার্টি বলে গণ্য করা যাবে না।
৪. ওয়াকফ বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও বিতর্ক থাকলে হাইকোর্টে আবেদন করা হবে।
৫. এতদিন পর্যন্ত কোনও নথি না থাকলেও, মৌখিকভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত করা যেত। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ওয়াকফনামা অর্থা নথি না থাকলে সেই জমি বিতর্কিত বলেই ধরে নেওয়া হবে।
৬. যে কোনও সময় ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে অডিট করতে পারবে ক্যাগ, নয়া সংশোধনীতে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকতে পারে সেই ক্ষমতা।