নয়া দিল্লি: বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি), এক ঐতিহাসিক রায়ে ইলেকটোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, সংবিধানে যে তথ্য জানার অধিকার এবং বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে এই প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। এই প্রকল্পের আওতায় বন্ডের মাধ্যমে বেনামে রাজনৈতিক দলগুলিকে তহবিল প্রদান করা যেত। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে, পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়েছে। গত বছরের ২ নভেম্বর, শুনানি শেষ হয়েছিল। এদিন, রায় ঘোষণার শুরুতেই প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান. এই মামলার বিষয়ে দুটি মতামত রয়েছে বেঞ্চে। একটি তাঁর নিজের, অপরটি বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার। তবে, দুজনেই একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ঠিক কী কারণে, ইলেকটোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট? আসুন দেখে নেওয়া যাক –
– সংবিধানের ১৯(১)(ক) অনুচ্ছেদে, নাগরিকদের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এদিন, রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পটি, এই বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করছে।
– শুনানির সময় সরকারের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, আগে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলিকে তহবিল আকারে কালো টাকা দেওয়া হত। এই ভাবেই কালো টাকা সাদা করত অসাধু ব্যবসায়ীরা। এই কালো টাকার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নির্বাচনী বন্ডের বড় ভূমিকা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কালো টাকা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় নয় নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প।
– নির্বাচনী বন্ড যারা কিনছে, তাদের পরিচয় গোপন রাখা নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন করে। কালো টাকার ব্যবহার ঠেকাতে আমরা তথ্য জানার অধিকারকে লঙ্ঘন করব, এটা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। ছয় বছর ধরে এই প্রকল্পে কারা কারা বন্ড কিনেছে, তাদের নাম প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে।
– শীর্ষ আদালত বলেছে, গোপনীয়তা ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। রাজনৈতিক মতামত এবং রাজনৈতিক সংযোগ গোপন রাখাও তার মধ্যে পড়ে। সবসময় নীতি পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যেই রাজনৈতিক দলগুলিকে তহবিল দেয় না মানুষ। ছাত্রছাত্রী এবং দিনমজুরদের মতো ব্যক্তিরাও রাজনৈতিক দলগুলিকে তহবিল প্রদান করে থাকে। শুধুমাত্র কিছু কিছু অবদানের পিছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকে বলেই, রাজনৈতিক দলগুলিতে তহবিল প্রদানের ক্ষেত্রে নাগরিকদের গোপনীয়তা অস্বীকার করা ঠিক নয়।
– নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প চালুর জন্য, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং আয়কর আইন-সহ বিভিন্ন আইনে যে সংশোধনীগুলি করা হয়েছিল, সেগুলিকেও অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
– এই প্রকল্প চালুর জন্য যেভাবে কোম্পানি আইনের সংশোধন করা হয়েছে, তার সমালোচনা করেছে শীর্ষ আদালত। রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলে কর্পোরেট অনুদান, সম্পূর্ণরূপে ব্যবসায়িক লেনদেন বলে জানিয়েছে আদালত। বিশেষ উদ্দেশ্যেই সংস্থাগুলি অনুদান দিয়ে থাকে। এই অবদানের মাধ্যমে সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করতে পারে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। তাছাড়া, কোম্পানি আইনের সংশোধনীর ফলে, কর্পোরেট সংস্থাগুলি লাগাম ছাড়া অর্থ দিতে পারে রাজনৈতিক দলগুলিকে। এটা স্বেচ্ছাচারী এবং অসাংবিধানিক বলে জানিয়েছে আদালত। এর ফলে, সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়।