Madhyamik Review Result: নজিরবিহীন! রিভিউ করতেই পাল্টে গেল সাড়ে ১২ হাজার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর নম্বর, উঠছে প্রশ্ন
Madhyamik Review Result: এবছর ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল মাধ্যমিক। শেষ হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এবার ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৯৪। যা আবার আগের বছরের তুলনায় ৬২ হাজারেরও বেশি। ফল প্রকাশিত হয়েছিল ২ মে।

কলকাতা: স্ক্রুটিনি-রিভিউয়ের রেজাল্ট সামনে আসতেই মাধ্যমিকের ফলাফলে বড়সড় বদল। নম্বর পরিবর্তিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পড়ুয়ার। অন্যদিকে মেধাতিলকাতেও উঠে এসেছে প্রায় ১০ জন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে নিজেই সে কথা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এক্কেবারে এই বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর নম্বর বদলে সামগ্রিকভাবে সম্পূর্ণ খাতা দেখার প্রক্রিয়া নিয়েই উঠে যাচ্ছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। চাপানউতোর শিক্ষামহলের অন্দরেও।
ব্রাত্য বসুর পোস্ট বলছে, স্ক্রুটিনি ও রিভিউয়ের রেজাল্ট সামনে আসতেই দেখা যাচ্ছে ১২ হাজার ৪৬৮ জনের নম্বর পরিবর্তিত হয়েছে। অসফল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ২৩৮ জনের নম্বর পরিবর্তিত হয়েছে। এক থেকে দশের মধ্যে থাকা মেধাতালিকায় স্থানাধিকারীদের সংখ্যা ৬৬ থেকে হয়ে গিয়েছে ৭৫।
এবছর ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল মাধ্যমিক। শেষ হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এবার ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৯৪। যা আবার আগের বছরের তুলনায় ৬২ হাজারেরও বেশি। গোটা রাজ্যে মোট ২ হাজার ৬৮৩টি পরীক্ষাকেন্দ্রে হয়েছিল পরীক্ষা। ২ মে সামনে এসেছিল মাধ্যমিকের ফলাফল। এবার সেই রেজাল্টেই স্ক্রুটিনি-রিভিউয়ের পর বড়সড় বদল।
— Bratya Basu (@basu_bratya) June 18, 2025
কী বলছে শিক্ষক মহল?
গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি। তাঁর স্পষ্ট কথা, খাতা দেখায় মারাত্মক গাফিলতি যে হয়েছে তা স্ক্রুটিনির রেজাল্টই বলে দিচ্ছে। তিনি বলছেন, “শিক্ষকের অভাব অনেকাংশেও দায়ী। অন্য বিষয়ের শিক্ষকদের ইংরাজির খাতা দেখতে দেওয়া হয়েছে। এরকম প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। ঠিক করে খাতা না দেখে রেজাল্ট বের করা হলে এমন পরিবর্তন তো হবেই। আগামীদিনে যাতে এ ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে দায়িত্ব নিয়ে দেখতে হবে।” একইসঙ্গে তাঁর আরও দাবি, স্ক্রুটিনি করার ক্ষেত্রে ফি আগের থেকে দ্বিগুণ, তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তার ফলে অনেক পড়ুয়াই চাইলেও অর্থাভাবের কারণে স্ক্রুটিনি করতে পারেনি। তাঁর কথায়, আরটিআই-র মাধ্যমে নতুন আবেদন জানালেও তা অনেক সময়সাপেক্ষ। তার জন্য ৫০০ টাকা মতো জমা দিতে হয়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা শিক্ষাবিদ নন্দিনী মুখোপাধ্যায় যদিও খাতা দেখা নিয়ে শিক্ষকদের হাতে থাকা সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তিনি। তিনি বলছেন, শিক্ষকদের উপর সময়ের চাপ সৃষ্টি নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। খাতা দেখার জন্য যে সময়টুকু দেওয়া দরকার সেটা নিশ্চয় দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে যদি তাঁকে মিড ডে বিল থেকে নানা কিছু বিতরণের কাছে শিক্ষকদের লাগানো হচ্ছে। তাই খাতা দেখার পরিস্থিতি, সময় নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই এই সময়কালেই আবার সুপ্রিম নির্দেশে রাজ্য চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষকের। তা নিয়ে প্রশাসনিক-রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর এখনও চলছে। যদিও এই জটিলতা তৈরি হওয়ার আগে অনেকটাই খাতা দেখা হয়ে গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন চন্দন মাইতি। যদিও তিনি বলছেন, “অনেক অযোগ্য শিক্ষক পড়িয়েছেন, খাতাও দেখেছেন। আমাদের কাছে যোগ্য-অযোগ্যদের স্পষ্ট কোনও তালিকা সামনে না আসার কারণে আমরা তো তাঁদের চিহ্নিত করতে পারিনি। সব মিলিয়ে খাতা দেখার গাফিলতি চূড়ান্তভাবে হয়েছে।” অন্যদিকে নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের গলাতেও খানিক একই সুর। তিনি বলছেন, “যোগ্য-অযোগ্যের ডামাডোলে যাঁরা পড়ে গিয়েছেন তাঁরা এই সময় কতটা মনোযোগ দিয়ে খাতা দেখতে পেরেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে! কতজন শিক্ষককে কত খাতা দেওয়া হয়েছে সেই তথ্য না থাকলেও এই যে ২৫ হাজার শিক্ষককে নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে তাঁদের যদি এই সময়ের মধ্যে খাতা দেখা শেষ করতে হয়ে থাকে তাহলে ঠিকঠাকভাবে দেখা কখনওই সম্ভব নয়।”
