কলকাতা: খাস কলকাতায় থানায় এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে চুরির মোবাইল কেনার অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ, থানায় ডেকে মারধর করা হয়েছে। এরপর ওই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক ব্যক্তিকে মৃত বলে ঘোষণা করে। মৃতের নাম অশোক সিং। বয়স ৪২ বছরের আশপাশে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে মেডিক্যাল কলেজের সামনে। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পরিবারের লোকেরা।
মৃত যুবকের পরিবারের সদস্যদের দাবি, “একটা মোবাইলকে কেন্দ্র করে থানায় অভিযোগ এসেছিল। থানা থেকে ফোন করা হয়েছিল। থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। থানায় মোবাইল জমা করতে গিয়েছিল। ওকে পাঁচজন পুলিশ মিলে মেরেছে। আমি দশ মিনিটের মধ্যে থানায় ঢুকেছি। ঢুকে দেখি, ও শেষ হয়ে গিয়েছে। নাক-মুখ রক্ত বের হচ্ছিল। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। পুলিশ থানায় নিয়ে আসার পর ডাক্তার বলছে মরে গিয়েছে।”
বিক্ষোভের মধ্যে ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে পৌঁছে গিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার। বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু পরিবারের বিক্ষুব্ধ সদস্যরা কোনও কিছু শোনার মতো পরিস্থিতিতে নেই। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উদ্দেশে বলছেন, “আপনারা আর পারছেন না, এবার আইন আমরাই হাতে নিয়ে নেব।”
ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন ডিসি সেন্ট্রাল দীনেশ কুমারও। মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বক্তব্য, অভিযোগ বোঝার চেষ্টা করেন তিনি। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ডিসি সেন্ট্রাল তাঁদের আশ্বস্ত করেন, সব থানায় সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তদন্ত করে দেখা হবে। কিন্তু বিক্ষোভ অব্যাহত পরিবারের লোকেদের। তাঁদের বক্তব্য, ‘পুলিশ চাইলে দু’মিনিটে সিসিটিভি ফুটেজ সরিয়ে দিতে পারে।’
এদিকে বুধবার রাতের এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। সিবিআই তদন্তের দাবিও তুলতে শুরু করেছে বিজেপি। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসিকে ক্লোজ় করার দাবি তুলেছেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। মেডিক্যাল কলেজে বা কলকাতা পুলিশের কোনও মর্গে যাতে কোনওভাবে ময়নাতদন্ত না হয়, সেই দাবিও তুলেছেন সজল। তাঁর দাবি, কমান্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, আজ সকালে নর্থ ডিভিশন থেকে ফোন করে অশোক সিংকে বলা হয়, যে মোবাইলটি তিনি ব্যবহার করছেন সেটি তিনি কোথায় পেলেন? ফোনটি থানায় জমা দিয়ে আসতে বলা হয়। পরে ওই ব্যক্তি তাঁর পরিচিত এক ব্যক্তিকে ফোন করে পুরো বিষয়টি জানান। বলেন, ফোনটি তিনি ২০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন এবং পুলিশ তাঁকে জমা দিতে বলছে। অপর প্রান্তের ব্যক্তি তাঁকে বলেন, জমা দিয়ে দিতে। দ্বিতীয় ব্যক্তি তাঁকে এও জানায় যে তাঁর এক পরিচিত পুলিশে কর্মরত। এরপর ৫.৪৫ নাগাদ ওই ব্যক্তি গিয়ে নিদিষ্ট ওই পুলিশকে খোঁজ করে ও না পেয়ে জানতে চায় এরপর কী করবে? একটু পরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। ইতিমধ্যে অশোক সিং বলেন, তিনি জল খাবেন এবং তার মধ্যেই মাথা ঘুরে পরে যান। পুলিশ সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তের যা যা পদ্ধতি আছে সব নজর রেখে ময়নাতদন্ত হবে।