কলকাতা: আদালত নির্দেশ দিয়েছিল রবীন্দ্র সরোবরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। রবীন্দ্র সরোবরে কোনওরকম আবর্জনা জমতে দেওয়া যাবে না, ২০১৮ সালেই নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। অথচ কোথায় কী? আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সরোবরেই তৈরি হয়েছে ভ্যাট, ফেলা হচ্ছে আবর্জনাও। আগুনও জ্বালানো হচ্ছে আবর্জনায়। দূষণে হাঁসফাস করছে দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস। তারই প্রতিবাদে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে চিঠি দিলেন পরিবেশবিদরা। চিঠি দেওয়া হয়েছে কেএমডিএ-এর সিইও অন্তরা ভট্টাচার্যকেও।
পরিবেশ কর্মী সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল বা এনজিটি আদালত নির্দেশ দিয়েছে রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে নোংরা জমানো যাবে না। নোংরা পরিষ্কার করতে হবে। কেএমডিএ এক কনট্রাক্টরের সঙ্গে চুক্তিও করে নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু সে কিছুতেই তা করে না। নোংরা নোংরার মতোই পড়ে থাকে। কোনও মতে নোংরাগুলো ঠেলে দেওয়ালের দিকে জমা করে রাখে। এখন শীতকাল। এভাবে যদি শুকনো পাতাগুলোকে এক জায়গায় জমা করা হয় যে কোনও সময় আগুন লেগে যেতে পারে।”
পরিবেশ কর্মীদের দাবি, বার বার বিভিন্ন জায়গায় বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই এবার পরিবেশবিদরা চিঠি দিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। একই সঙ্গে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা কেএমডিএ’র সিইও অন্তরা আচার্যকেও লিখিতভাবে বিষয়টি জানান তাঁরা। এই ভ্যাট স্থানান্তরের জন্য তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে আবারও মামলা করতে চলেছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তিনি এসে এই গোটা এলাকার ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছেন।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, “রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে দীর্ঘদিন ধরে জঞ্জাল স্তূপাকারে পড়ে রয়েছে। ওখানে মূলত দু’ধরনের জঞ্জাল। গাছের পাতা তো রয়েছেই। সঙ্গে আশেপাশের চার পাঁচটা ক্লাবে হাজার হাজার মানুষ আসেন। তাঁদের খাওয়াদাওয়া অনেক কিছুই চলে। সুতরাং এখানে জঞ্জালটা ঠিকমতো পরিষ্কার হওয়া যেমন জরুরি। একই সঙ্গে নজরে রাখা দরকার কেন এত নোংরা হচ্ছে।”
সুভাষ দত্তের কথায়, “রবীন্দ্র সরোবর এখন একটা ক্লাব সরোবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনোদনের জায়গা। এটা জাতীয় সরোবরের মর্যাদা যেমন পেয়েছে। এভাবে চললে তা যে সেই কৌলিন্য হারাবে তাও বলাই যায়। এটা একটা জাতীয় দূষণের উৎস হয়ে দাঁড়াবে। যা দেখা যাচ্ছে, তাতে সে পথেই এগোচ্ছে। এখানে শুধু পরিযায়ী পাখিই নয়, সারা বছর অনেক পাখি থাকে। অনেক মাছ আছে। এখানে একটা জীব বৈচিত্র্য রয়েছে। রবীন্দ্র সরোবরকে যে ভাবে দেখাশোনা করা উচিৎ এটা কিন্তু একেবারেই হচ্ছে না। এর জন্য পরিবেশ আদালতে আমি আবার নতুন করে মামলা করছি।”