AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ির দরজায় তালা! কোলের শিশুকে ‘বিক্রি’ করতে এসে করুণ কাহিনী শোনালেন মা-বাবা

Parnashree: পর্ণশ্রী এলাকায় শুক্রবার হঠাৎই শোরগোল শুরু হয়। স্থানীয় এক রিকশা চালক ও তাঁর স্ত্রী তিন মাসের সন্তানকে একজনের বাড়িতে দিতে যান।

ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ির দরজায় তালা! কোলের শিশুকে 'বিক্রি' করতে এসে করুণ কাহিনী শোনালেন মা-বাবা
নিজস্ব চিত্র।
| Edited By: | Updated on: Aug 20, 2021 | 9:58 PM
Share

কলকাতা: এ এক যন্ত্রণার করুণ চিত্র। ঘরে অতগুলো পেট! কিন্তু তা ভরানোর মতো সামর্থ্য় নেই। অভাবের তাড়নায় অনেক সময়ই পরিবারের সব থেকে ছোট সদস্যকে বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবেন মা-বাবা। অনেকে সেই ভাবনায় সফলও হন। কেউ আবার হাতেনাতে ধরা পড়ে যান। শুক্রবার বেহালার পর্ণশ্রীতেও এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। যদিও অভিযুক্ত মা-বাবা জানিয়েছেন, বিক্রি নয় শিশু সন্তানকে দান করে দিচ্ছিলেন তাঁরা। এদিকে যিনি শিশুটিকে নিতে আসেন, তাঁর দাবি মোটা টাকার বিনিময়েই তিনি শিশুটিকে পেয়েছেন।

পর্ণশ্রী এলাকায় শুক্রবার হঠাৎই শোরগোল শুরু হয়। স্থানীয় এক রিকশা চালক ও তাঁর স্ত্রী তিন মাসের সন্তানকে একজনের বাড়িতে দিতে যান। তাতেই সন্দেহ হয় লোকজনের। শুরু হয় হইচই। এরপরই ওই শিশুর মা-বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে আসে সমাজের হাড়গিলে চেহারাটা। ওই শিশুর বাবা জানান, রিকশা চালান তিনি। ইদানিং একেবারেই আয় হচ্ছে না। করোনা, লকডাউনে বিকল্প আয়ের সমস্ত পথই বন্ধ। রোজগার নেই, বাড়ি ভাড়া দিতে পারেননি। এরপরই বাড়ির মালিক দরজায় তালা দিয়ে দেন।

এদিকে ওই যুবকের তিন মাসের একটা ছেলে রয়েছে। তার আগে রয়েছে বছর তিন চারেকের একটি মেয়ে। সন্তান, স্ত্রীকে নিয়ে রিকশায় করেই দিনভর ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। ওই যুবকের কথায়, “বাচ্চাটাকে খাওয়াতে পারছি না, রাস্তায় থাকছি। ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম, তাও তালা মেরে দিয়েছে। চার পাঁচদিন বউ, মেয়েকে নিয়ে চেয়ে চিন্তে যেটুকু খেতে পেরেছি। ওই অবধিই। ভেবেছিলাম বাচ্চাটাকে কারও কাছে কয়েকদিন রাখব। লোকজন ভাবছে বিক্রি করতে এসেছি।”

বুকের কাছে ছোট্ট ছেলেকে আগলে ধরে অসহায় মা জানান, “আমরা পাঁচ রাত ধরে রাস্তায়। খেতে পাই না। লোকে যা দিচ্ছে তাতে আমি বা মেয়ে খাচ্ছি। কিন্তু বাচ্চাটাকে কী খাওয়াব। দুধ কিনে খাওয়াব সে ক্ষমতাও নেই। বাচ্চাটাকে খাওয়াতে পারি না বলেই এখানে রাখতে এসেছিলাম। বর রিকশা চালায়। ভাড়া নেই। আর আমাদের কোথায় রেখে লোক তুলবে? তাই রাখতে এসেছিলাম।”

যদিও সরকার মাঠ কলোনি লাগোয়া যে বাড়িতে শিশুটিকে রাখতে এসেছিল সেই পরিবারের এক সদস্য জানান, তাঁদের এক আত্মীয় নিঃসন্তান। তিনি শিশুটিকে নিতে চান। এর বিনিময় ৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথাও বলেন তাঁরা। পর্ণশ্রী পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত মা-বাবার কথায় বেশ কিছু অসংলগ্নতা রয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে এদিন রাতে অবশ্য পুলিশ জানিয়েছে, বাচ্চাটিকে বিক্রি করতে চাননি বাবা-মা। তবে অভাবে ৪ দিন ধরে পেটে দানাটুকু পড়েনি বাচ্চাটির! ওভাবেই তাকে নিয়ে জায়গায় জায়গায় ঘুরছিলেন বাবা বাপ্পা জানা ও মা পুনম। রাস্তাতেই কাটছিল দিন-রাত।

তারপর এদিন সরকার মাঠ লাগোয়া কলোনিতে তাঁদের পরিচিত একজনের কাছে বাচ্চাটিকে রাখতে চেয়েছিলেন বাবা-মা। যাতে বাচ্চাটি একটু খেতে পায় এটাই ছিল তাঁদের আবেদন। ইত্যবসরে এলাকার বেশ কয়েকজন বাচ্চাটিকে কেনবার ইচ্ছে প্রকাশ করে। যদিও পুলিশ এসে তাঁদের বিরত করে বলে দাবি। পরবর্তীতে বাপ্পা জানার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় পুলিশ মারফত খবর পান। তাঁরা এসে বাপ্পার পরিবারের পাশে দাঁড়ান। আপাতত বাপ্পার পরিবার তাঁদের আত্বীয়দের কাছেই আছেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ। আরও পড়ুন: প্রাথমিকের নিয়োগ নিয়ে ফের জট! মামলা দায়ের কলকাতা হাইকোর্টে