কলকাতা: মিল্লি আল আমিন কলেজে চলতে থাকা টানা অচলাবস্থা নিয়ে এবার সরাসরি রাজ্যপালের দ্বারস্থ হলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (Baisakhi Banerjee)। শোভন-বৈশাখী দুজনেই শুক্রবার বিকেল চারটে নাগাদ রাজ্যপাল জাগদীপ ধনখড়ের (Jagdeep Dhankhad) সঙ্গে দেখা করতে রাজভবনে হাজির হন। সূত্রের খবর, প্রায় দেড় ঘণ্টা শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল। মিল্লি আল আমিন কলেজের পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপালের কাছে তদন্তের আবেদনও জানান।
গত ২০ জুন মিল্লি আল আমিন কলেজের টিচার ইনচার্জের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন বৈশাখী। তারপর থেকে ওই কলেজে টিচার ইনচার্জের পদে কেউ নেই। ওই পদ ও বৈশাখীর রাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে শাসক-বিরোধী তরজা শুরু হয়েছে বহুদিন ধরেই। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয় কয়েকদিন আগে। যখন ওই কলেজের কয়েকজন ছাত্রী প্ল্যাকার্ড হাতে কলেজের সামনে বিক্ষোভে বসেন। তাঁদের দাবি, কলেজে এখনও পরীক্ষা হয়নি তাই অবিলম্বে কলেজ কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অন্ধকারে চলে যাচ্ছে।
এই নিয়ে চাপানউতোর চলছিল, কিন্তু ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) এক মন্তব্যে আগুনে ঘি পড়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মিল্লি আল আমিন কলেজের টিচার ইনচার্জ কে উপড়ে ফেলে দেওয়া উচিত।’ পুর নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কারোর নাম না নিলেও তাঁর নিশানায় যে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সেটা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি। ফিরহাদ হাকিমের এই মন্তব্যের পর এই কার্যত নড়েচড়ে বসেন বৈশাখী। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মনস্থির করেন, এই বিষয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চাইবেন। সেই মতো গতকাল রাজ্যপালের কাছে সময় চান দেখা করার জন্য। এদিন বিকেলে সময় দিয়েছিলেন রাজ্যপাল।
দেখা করে গোটা বিষয়টিতে রাজভবনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন ক্ষুব্ধ শোভন ও বৈশাখী। দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে শোভন বলেন, কলেজ কখনও অ্যাজেন্ডা পূরণের জায়গা হতে পারে না। অন্যদিকে বৈশাখীর দাবি, শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কলেজের সমস্যা মেটাতে তিনি একাধিকবার দরবার করেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তাঁর আরও প্রশ্ন, ফিরহাদ হাকিম যাঁর নিজের তিন কন্যা রয়েছে। তিনি কোন অভিসন্ধিতে আমার বিষয়ে এই ধরনের কথা বলছেন?
কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদকে উদ্দেশ্য করে ওপেন চ্যালেঞ্জ করার কায়দায় শোভন-বান্ধবী বলেন, “বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপড়ে ফেলা সহজ নয়। যে বাঘটা ঘুমিয়ে ছিল তাকে ঘুমিয়ে থাকতে দিন। বাঘের ঘুম ভাঙানোর কোনও প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু জেগেছি যখন, বাংলার মানুষের থেকে উত্তর নিয়ে ছাড়ব। ফিরহাদ হাকিম সাহেবের কোন অধিকার আছে যে আমাকে আমার কলেজ থেকে উৎখাত করবেন বলছেন? আমি মুখ্যমন্ত্রী কাছে জানতে চাইব, তাঁর মন্ত্রিসভার একজন সদস্যে এহেন হীন মন্তব্য কীভাবে করেন? ফিরহাদ হাকিমকে বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”
আরও পড়ুন: ‘অধিকারী এফেক্ট’? পূর্ব মেদিনীপুরের এসপিকে বদলি করল নবান্ন
ফিরহাদ হাকিম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে বলেও দাবি করেছেন বৈশাখী। তার কথায় এবার আমি ওই এলাকায় গেলে আক্রান্ত হব না তার কি গ্যারান্টি রয়েছে। ওই কলেজেরই আরেক শিখ অধ্যাপিকা সম্পর্কেও নানা ধরনের বিদ্বেষমূলক কথা বার্তা বলা হচ্ছে বলে দাবি করেন বৈশাখী।
রাজভবন থেকে বেরোনোর পর সাংবাদিকরা শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কেও প্রশ্ন করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়েরকে। তিনি বিজেপিতে গেলে তৃণমূলের আদৌ কোন ক্ষতি হবে? পরবর্তী পরিস্থিতিই বা কেমন হবে। উত্তরে ধোঁয়াশা না কাটিয়ে শোভন জানান, শুভেন্দু নিজের মত নিজে ব্যক্ত করবেন। শুভেন্দুকে ছোটো থেকে দেখেছি। আমি শিশিরদাকে জানি। শিশিরদা আমাকে বড় ছেলে বলত। শুভেন্দু অধিকারী যেখানে গেল, বা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস হোক বা ভারতীয় জনতা দল হোক। প্রত্যেকে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রাণ সংশয় নিয়ে দলের জন্য কাজ করে। সেই সম্মান তাঁদের দেওয়া উচিত। শুভেন্দু রাজনৈতিক সংগঠক, পরীক্ষিত সৈনিক।