কলকাতা: সীমান্ত প্রহরা এড়িয়ে ভারতে প্রবেশ যতটা কঠিন, এদেশের পরিচয়পত্র পাওয়া কি ততটাই সহজ? বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সেলিম মাতব্বরের গ্রেফতারির পর এই প্রশ্নটা আরও জোরাল হল। কীভাবে বাংলাদেশি সেলিমের হাতে এল ভুয়ো আধারকার্ড, কীভাবে ভুয়ো নথি দিয়ে পেল ভারতীয় পাসপোর্ট? যথাযথ তথ্য অনুসন্ধান কি করেনি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন? তা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।
পাকিস্তানি সেনার ভয়াবহ অত্যাচারের হাত থেকে ওপার বাংলাকে মুক্ত করতে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার সূর্য উঠেছিল বাংলাদেশে। সেখান থেকে ঘুন পোকার মতো ধীরে ধীরে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকছে ভারত ভূমে। আর সেই তালিকায় নবতম সংযোজন সেলিম মাতব্বর।
প্রায় ২ বছর নিশ্চিন্তে ভারত ভূমে কাটানোর পর অবশেষে তদন্তকারীদের জালে সেলিম। ভারতীয় পরিচয়পত্রে তিনি নদিয়ার বাসিন্দা, নাম রবি শর্মা। তিনি আবার BNP নেতা। কিন্তু কীভাবে BNP নেতা সেলিম মাতব্বর ধীরে ধীরে রবি শর্মা হয়ে উঠলেন? কীভাবে তাঁর হাতে এল ভারতীয় পরিচয়পত্র? এই সব প্রশ্ন ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই চরম চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করায়।
বাংলাদেশের নাগরিক সেলিম মাতব্বরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন, ২০২৩ সালে ভারত বাংলাদেশের নদিয়া জেলার সীমান্ত অবৈধভাবে পার করে এদেশে প্রবেশ করেছিলেন। আর সেক্ষেত্রে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন, উত্তর ২৪ পরগনার এক এজেন্ট। পরবর্তীকালে হাবড়ার বাসিন্দা ওই এজেন্টই সেলিমকে ভুয়ো নথি তৈরি করে দিয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
বিষয়টিকে ইস্যু করেছে বিজেপি। সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “বারাসত এখন সবথেকে বড় হাব। ওখান থেকে আধার কার্ড, ফেক কার্ড তৈরি হয়ে যাচ্ছে। রাজারহাটেও আছে একজন। ওরাই ঢুকিয়ে দিচ্ছে মৌলবাদীদের।”
রবি শর্মা নাম নিয়ে নদিয়ার একটি ঠিকানায় বাস করা শুরু করেছিলেন সেলিম। কিছুদিনের মধ্যেই ভুয়ো নথি ব্যবহার করে দিল্লির একটি ঠিকানায় আধার কার্ড বানিয়ে ফেলেন তিনি। এক সময়ে তাঁর হাতে চলে আসে ভারতীয় পাসপোর্টও।
এই সেলিমের সঙ্গে কোনও জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র রয়েছে কিনা, সেটা এখন তলিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। শনিবার রাতেই পার্ক স্ট্রিট থানায় গিয়ে এসটিএফ সদস্যরা সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অনুপ্রবেশ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “এই ধরনের দুষ্টু চক্রগুলো সক্রিয়। পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গ বলে লাভ নেই। কেন্দ্রীয় এজেন্সি, স্বরাষ্ট্রদফতরকে সক্রিয় হতে হবে। ব্যর্থতা কেন্দ্রের।”
ইতিমধ্যেই বিএনপি-র সদস্য় সেলিম মাতব্বর সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের কাছে একটি চিঠি করেছে কলকাতা পুলিশ।