Anubrata Mondal: ‘লুকোচুরি’র ‘ব্রত’কথা: ৬ মাস ‘খেললেন’ অনুব্রত, ‘ভয়ঙ্কর খেলে’ জালে তুলল সিবিআই

Anubrata Mondal: তিনি মন্ত্রী, সাংসদ কিংবা বিধায়ক নন। কিন্তু, রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই শোনা যায়, বীরভূমে তৃণমূলের শেষ কথা তিনিই। বীরভূমে ঘাসফুলে কে কোন আসনে প্রার্থী হবেন, তা তিনিই ঠিক করেন। সম্প্রতি তৃণমূলের সাংগঠনিক স্তরে রদবদল হয়েছে। একাধিক জেলার সভাপতি বদল করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু, বীরভূমের জেলা সভাপতি পদে রয়ে গিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। সেই অনুব্রত মণ্ডলকে আজ গ্রেফতার করেছে সিবিআই।

Anubrata Mondal: 'লুকোচুরি'র 'ব্রত'কথা: ৬ মাস 'খেললেন' অনুব্রত, 'ভয়ঙ্কর খেলে' জালে তুলল সিবিআই
অনুব্রত মণ্ডল (ফাইল ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 11, 2022 | 6:06 PM

বীরভূম ও কলকাতা: সিবিআইয়ের সঙ্গে ‘লুকোচুরি’। কখনও গরু পাচার মামলায় সমন পেয়েছেন। কখনও কয়লা পাচার মামলায় তলব। কখনও বা ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় ডাক। গত ৬ মাসে বারবার সিবিআইয়ের ডাক পেয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। কিন্তু, বীরভূমের ‘কেষ্ট’ বেশিরভাগ সময় সেইসব তলব নানা কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছেন। শেষপর্যন্ত আজ সেই ‘লুকোচুরি’ শেষ হল। গরু পাচার মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে রাজ্য রাজনীতি যখন তোলপাড়, তখন পিছন ফিরে দেখা যাক এই ৬ মাসের ‘লুকোচুরি’ খেলা।

গরু পাচার মামলায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে বারবার ডেকে পাঠায় সিবিআই। কিন্তু, একবারই মাত্র সেই ডাকে সাড়া দেন কেষ্ট। সিবিআই তাঁকে আসতে হবেই বলে নোটিস পাঠিয়েছে। এমনকী, নিজাম প্যালেসে চিকিৎসকের ব্যবস্থা করেছে। তারপরও দেখা মেলেনি তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির।

এমনও দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তলব পেয়ে বীরভূম থেকে কলকাতার চিনার পার্কে বাড়িতে আগের দিন পৌঁছে যান তিনি। পরদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর পর তাঁর গাড়ি মাঝপথ থেকে রাস্তা বদলায়। নিজাম প্যালেসের বদলে অনুব্রত পৌঁছে যান এসএসকেএম-এ।

চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে তলব করে সিবিআই। তিনি অবশ্য আসেননি। শারীরিক অসুস্থতার জন্য আসতে পারেননি বলে জানান তাঁর আইনজীবীরা। ওই মাসের ২৫ তারিখে ফের তাঁকে ডাকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ওইসময় শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে বোলপুরের হাসপাতালে ভর্তি হন কেষ্ট। চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষার পর তাঁকে ছেড়ে দিলেও নিজাম প্যালেসে তাঁর আসা হয়নি।

গত ১৫ মার্চ ফের তলব পৌঁছয় অনুব্রতর কাছে। সেবারও আসেননি তিনি। কারণ, হিসেবে অবশ্য তাঁর আইনজীবীরা জানান, সিবিআইয়ের জেরা থেকে রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন অনুব্রত। যেহেতু মামলাটি বিচারাধীন, তাই হাজিরা দিতে পারবেন না।

গত ৬ এপ্রিল ফের তলব করা হয় অনুব্রতকে। এবার আগের দিন চিনার পার্কের বাড়িতে তিনি পৌঁছে যান। অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার হয়ত সিবিআইয়ের ডাকে সাড়া দেবেন কেষ্ট। নির্দিষ্ট দিনে বাড়ি থেকে বেরও হন তিনি। কিন্তু, মাঝপথে থেকে তাঁর গাড়ি এসএসকেএম-র উদ্দেশে মোড় নেয়। উডবার্ন ব্লকে ভর্তি করা হয় তাঁকে। মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়। ফলে নিজাম প্যালেসে আর যাওয়া হয়নি অনুব্রতর। সেইসময় অবশ্য তিনি বলেছিলেন, সিবিআই চাইলে হাসপাতালে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে পারে।

১৭ দিন হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফেরার পরই ফের সমন পান অনুব্রত। এবারও অনুব্রত জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে আসা হয় নয়। কারণ, তাঁর শরীর যথেষ্ট দুর্বল। হাঁটাচলা করতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে সিবিআইয়ের অপেক্ষা বাড়তেই থাকে।

অবশেষে গত ১৯ মে অনুব্রত নিজেই জানান, গরু পাচার মামলায় সিবিআইকে তদন্তে সহযোগিতা করতে চান। নিজাম প্যালেসে পৌঁছে যান তিনি। টানা চারঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই জিজ্ঞাসাবাদের পর অসুস্থতা বোধ করায় এসএসকেএম-এ পৌঁছে যান তিনি।

গত ২৭ মে ফের তলব করা হয় তাঁকে। এবারও অসুস্থতার কথা বলেন অনুব্রত। চিকিৎসকরা তাঁকে ১৫ দিনের বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে অবশ্য জানান, সিবিআই আধিকারিকরা চাইলে তাঁর বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।

গরু পাচার মামলায় গত ৮ অগস্ট ফের অনুব্রতকে তলব করে সিবিআই। শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে কেষ্ট জানান, অন্য দিন থাকে যেন ডাকা হয়। সিবিআই অবশ্য সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি। গত ৮ অগস্ট এসএসকেএম হাসপাতালে আসেন অনুব্রত। কিন্তু, তাঁর শারীরিক পরীক্ষার পর হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় অনেকে ভেবেছিলেন, নিজাম প্যালেসে যাবেন কেষ্ট। তবে তিনি তা করেননি। ফিরে যান বীরভূম।

গতকাল ফের অনুব্রতকে তলব করেছিল সিবিআই। কিন্তু, নিজাম প্যালেসে আসেননি তিনি। তাঁর আইনজীবীরা জানান, অনুব্রতকে ১৪ দিনের বেড রেস্ট দিয়েছেন চিকিৎসক। জানা যায়, অনুব্রতকে সাদা কাগজে বেড রেস্টের কথা লিখে দিয়েছিলেন বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী।

এত ‘লুকোচুরি’র পরও শেষরক্ষা হল না। আজ সকালে অনুব্রত বাড়ি পৌঁছে যান সিবিআই আধিকারিকরা। সিআরপিএফ জওয়ানরা ঘিরে ফেলেন তাঁর বাড়ি। শেষমেশ গ্রেফতার করা হয় অনুব্রতকে।