Calcutta High Court: জাতীয় সঙ্গীত মামলায় আদালতের মুর্হুমুহু প্রশ্নে ‘শরশয্যায়’ রাজ্য
Calcutta High Court: বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগ ঘিরে গত কয়েকদিনে তপ্ত হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি। তৃণমূল যেমন অভিযোগ জানিয়েছে, বিজেপিও আইনি পথে তা মোকাবিলা করতে চায়। এদিন ফুটেজ দেখার পর বিচারপতি বলেন, এইসব ফুটেজই তো কেস ডায়েরিতে থাকবে।

কলকাতা: জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা মামলার তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। তদন্ত প্রক্রিয়ায় এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ থাকছে আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশ দিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। এদিনের শুনানিপর্বে গত ২৯ নভেম্বরের বিধানসভার ভিডিয়ো ফুটেজ দেখেন বিচারপতি। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘যে ক্যামেরার ফুটেজ আমি দেখতে পাচ্ছি সেখানে শুধু শাসকদলের ফুটেজই আমি দেখছি। আর কারও জমায়েত দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে বিজেপি বিধায়করা জাতীয় সঙ্গীত শুনতে পাবেন কী করে?’
রাজ্যের তরফে আইনজীবী ছিলেন কিশোর দত্ত। তিনি জানান, সেই ফুটেজ অন্য ক্যামেরায় আছে। এরপরই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘যদি একটি ক্যামেরায় দু’টি জমায়েত দেখাই না যায় তাহলে শোনার প্রশ্ন কী করে ওঠে?’ বিচারপতি সেনগুপ্ত মন্তব্য করেন, ‘অভিযোগের স্বপক্ষে প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না।’
বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগ ঘিরে গত কয়েকদিনে তপ্ত হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি। তৃণমূল যেমন অভিযোগ জানিয়েছে, বিজেপিও আইনি পথে তা মোকাবিলা করতে চায়। এদিন ফুটেজ দেখার পর বিচারপতি বলেন, এইসব ফুটেজই তো কেস ডায়েরিতে থাকবে।
মামলার শুনানি চলাকালীন বিজেপির তরফে বলা হয়, বিধানসভায় ধরনা কর্মসূচি রাজ্য সরকারের কর্মসূচিতে ছিল না। এই কর্মসূচি তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে নেওয়া হয়েছিল এবং অভিযোগপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যে মন্ত্রীরা ধরনায় অংশগ্রহণ করছেন বলে লেখা নেই, লেখা রয়েছে তৃণমূল বিধায়ক বলে। একইসঙ্গে বিজেপির তরফে সওয়াল করা হয়, প্রথমে ধরনা শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর বিজেপি স্লোগান দিতে শুরু করে। তারপরে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার রাস্তা অবরোধ করে বলে অভিযোগ। সবার শেষে জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়। তখন বিজেপি বিধায়করা উঠে দাঁড়াননি বলে অভিযোগ। জাতীয় সঙ্গীত শুরু হবে এই মর্মে আগে থেকে জানানো হয়নি কেন?
বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘যদি কাছাকাছি দু’টি কর্মসূচি হয় তাহলে একটি কর্মসূচির বিধি কি অন্য কর্মসূচির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে? যদি কোথাও হঠাৎ করে জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়ে যায় এবং তার পাশের বাড়িতে যদি কোনও বয়স্ক লোক শুয়ে থাকেন, তাহলে তাকে কি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াতে হবে? যদি এফআইআর দায়ের না হতো তাহলে এসব প্রকাশ্যে আসত না।’
বিজেপির তরফে এদিন আইনজীবী ছিলেন রাজদীপ মজুমদার। বিজেপির তরফে সওয়াল করা হয়, ‘তৃণমূলের কর্মসূচি থেকে বলা হচ্ছিল ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, নরেন্দ্র মোদী চোর হ্যায়’। তারপর হঠাৎ করেই জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়। এই দেখুন ভিডিও। আমরা আদালতকে অনুরোধ করব, যদি জাতীয় সঙ্গীত যথাযথ ভাবে না গাওয়া হয়ে থাকে তাহলে যাঁরা গাইছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হোক।’ এ নিয়ে দু’টি এফআইআর হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এমনকী জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় কাঁসর- ঘণ্টা বাজানো হয়েছে এই মর্মেও কয়েকজন বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে।
রাজ্যের আইনজীবী যদিও জানান, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে এই মর্মে লাউড স্পিকারে ঘোষণা হয়েছিল। বেশ কিছু সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে এবং ভিডিয়ো ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। বিচারপতির মন্তব্য, প্রাথমিকভাবে আদালত মনে করে যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ নেই, সেখানে এফআইআরও খারিজ করা যায়। ১০ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
