কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাঁর জায়গায় নতুন সভাপতি নিয়োগ করার ভার দেওয়া হল রাজ্যের কাঁধেই। যতদিন না নতুন নিয়োগ হচ্ছে, ততদিন সভাপতির কাজ দেখবেন রত্না বাগচী। অন্যদিকে মঙ্গলবার বেলা ২টোয় মানিক ভট্টাচার্যকে আদালতে তলব করা হয়েছে। বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মানিক ভট্টাচার্যের কাছ থেকে চাইবে আদালত। টেটে না বসেও চাকরি পাওয়ার অভিযোগে মামলা হয় হাইকোর্টে। সেই নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দেয় আদালত। একইসঙ্গে এই নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি চাওয়া হয়। সোমবার বোর্ড বেশ কিছু নথি দেয়। তবে সেগুলি ২০১৭ সালের কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর পর্যবেক্ষণ, যাবতীয় বিষয় দেখার দায়িত্ব ছিল বোর্ড সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের উপর। অথচ যেভাবে সভাপতি সেগুলি আদালতকে দিয়েছেন, কোথাও তা আদালতকে বিভ্রান্ত করার শামিল। সে কারণেই মানিক ভট্টাচার্যকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
এর আগেও একাধিক একাধিকবার মানিক ভট্টাচার্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আদালত। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেই গত ১৩ জুন নির্দেশ দেওয়া হয়, মানিক ভট্টাচার্যকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে বসতে হবে। সেইমতো সিবিআইয়ের দফতর নিজাম প্যালেসে গিয়েওছিলেন তিনি। তবে সোমবার আদালতে তাঁর তথ্য দাখিল নিয়ে ফের প্রশ্ন ওঠে। আদালত মনে করছে, কোথাও যেন একটা ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টা চলছে।
এদিনই প্রাথমিক নিয়োগে সিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয় সিএফএসএলকে যাবতীয় নথি পাঠাতে হবে। যেখানে ২০১৭ সালের কাগজপত্র সঠিক কি না সেটা জানাবে সিবিআই। বোর্ডের দুই কর্তা অভীক মজুমদার ও ঋত্বিক মল্লিকের সই সিএফএসএল খতিয়ে দেখবে। কারণ, তাঁদের সইয়ের নিচে কোনও তারিখের উল্লেখ নেই। প্রাথমিক বোর্ডের তরফে এদিন যে সমস্ত কাগজ জমা দেওয়া হয়েছে, তা কতটা ঠিকঠাক তা নিয়েও প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে আদালতে। এমনকী বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বোর্ডের বৈঠক নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। আদৌ কোনও বৈঠক হয়েছিল কি না তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৪ সালে টেটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালে ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী টেট দেন। ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তার ফল প্রকাশিত হয়। অভিযোগ, এই প্যানেলের এক বছর পর ২০১৭ সালে আরও একটি অতিরিক্ত প্যানেল প্রকাশ করা হয়। প্রাইমারি বোর্ড জানায়, উত্তরপত্রে ১ নম্বর বাড়ানো হয়। সে কারণেই ফের প্যানেল প্রকাশ। কারণ, হিসাবে দেখানো হয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে একটি প্রশ্ন ভুল ছিল। অভিযোগ, এই ১ নম্বর পান ২৭৩ জন। আদালত জানতে চায়, ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র এই ক’জনকে কেন এই নম্বর দেওয়া হল? দ্বিতীয় প্যানেল প্রকাশের কারণ কী ছিল? নম্বর বাড়ানো, নতুন প্যানেল ঘোষণার বিষয়ে কেন কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হল না? বোর্ডের উত্তর সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায়, তদন্তের ভার দেওয়া হয় সিবিআইকে।