কলকাতা: জ্বর, শ্বাসকষ্ট, মৃত্যু,বাবা-মায়ের বুক ফাটা কান্না- গত কয়েকদিনে রাজ্যের বিসি রায় শিশু হাসপাতাল (B C Roy Hospital) চত্বরে পা রাখলেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠছে। শিশু মৃত্যু কোনওভাবেই রোখা সম্ভব হচ্ছে না। পরিসংখ্যান বলছে, শ্বাসকষ্টের সমস্যায় প্রত্যেক দিন গড়ে ৬-৭ জন করে শিশুর মৃত্যু (Child Death) হচ্ছে। মঙ্গলবারের পর বুধবারও শিশুমৃত্য়ু হয়েছে বাংলায়। বিসি রায় হাসপাতালে এক জন ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও ১ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কেন কলকাতার সরকারি হাসপাতালে এই হারে শিশুমৃত্যু? পর্যালোচনা করতে গিয়ে চিকিৎসকদের কথাতেই উঠে আসছে ‘রেফার রোগ’ তত্ত্ব। মঙ্গলবারের একটি কেস স্টাডিও তার প্রমাণ। বুধবারই বিসি রায় শিশু হাসপাতালে পরিদর্শনে আসেন রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ও সদস্য অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছেন, সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।
শিশুদের রেফার নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। হুগলির বৈচী গ্রামের দশ মাসের এক শিশু সায়ন পালকে দোলের দিন আনা হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জানা যাচ্ছে, তাকে যখন আনা হয়, তখন পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। এরকম ভাবে রেফার নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, কেন শিশুর শারীরিক অবস্থা একটু স্থিতিশীল না করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে? এর আগে নবান্নে এই বিষয়টিই উল্লেখ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভবনের তরফেও ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বারবার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘শেষ মুহূর্তে রেফার নয়।’ কিন্তু পরিস্থিতি যে এক ফোঁটাও বদলায়নি, তার প্রমাণ মিলছে হাতেনাতেই।
বুধবারই বিসি রায় শিশু হাসপাতালে পরিদর্শনে আসেন রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ও সদস্য অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছেন, সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসকও রয়েছেন প্রচুর, কোথাও একটি বেডে দুটি শিশুর থাকার মতো ঘটনা ঘটছে না। দুর্ব্যবহারের অভিযোগও সঠিক নয়। কেন রেফার রোগ বেশি? কমিশনের বক্তব্য, যেহেতু আম জনতা মনে করছেন, এখানে চিকিৎসা পরিষেবা ভাল, তাই এখানেই নিয়ে আসছেন তাঁরা।
বিসি রায় হাসপাতালে ৭ দিনে মৃত্যু ৪২ শিশুর
১ মার্চ
চিকিৎসাধীন ৩৬৫
নতুন ভর্তি ৬২
মৃত্যু ০৫
২ মার্চ
চিকিৎসাধীন ৩৪৩
নতুন ভর্তি ৮১
মৃত্যু ০৭
৩ মার্চ
চিকিৎসাধীন ৩৫৫
নতুন ভর্তি ৭২
মৃত্যু ০৫
৪ মার্চ
চিকিৎসাধীন ৩৪৯
নতুন ভর্তি ৫৮
মৃত্যু ০৭
৫ মার্চ
চিকিৎসাধীন ৩৫২
নতুন ভর্তি ৬৭
মৃত্যু ১১
৬ মার্চ
চিকিৎসাধীন ৩২৬
নতুন ভর্তি ৭২
মৃত্যু ০৬
৭ মার্চ
চিকিৎসাধীন ৩১২
নতুন ভর্তি ৫১
মৃত্যু ০১
জানুয়ারি-এ পর্যন্ত রাজ্যে শ্বাসকষ্টে মোট মৃত্যু ১২০
বিসি রায় শিশু হাসপাতাল: ৬১
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ১৮
আরজি কর: ২৫
চিত্তরঞ্জন সেবা সদন: ১
পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ ১
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ১
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ ২
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ২
ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ ৭
পিয়ারলেস ২
শিশু মৃত্যুর হার নিয়ে কী বলছেন চিকিৎসকরা?
চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায় চৌধুরীর বক্তব্য, “যেভাবে দেখা হচ্ছে শিশুমৃত্যুর হার, তাতে বলব, এমন নয় যে অনেক বেশি মৃত্যু। পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যে শিশুগুলির মৃত্যু হয়েছে, তাতে কেবল অ্যাডিনো ভাইরাস নয়, বাচ্চাগুলোর হয়তো আরও অনেক শারীরিক সমস্যা ছিল। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। বাচ্চা অসুস্থ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রাজ্যে ভাল পরিকাঠামো রয়েছে।”
অন্যদিকে আবার আরেক চিকিৎসক অনির্বাণ দোলুইয়ের বক্তব্য, “আমরা যেভাবে কোভিডের সময়ে মাস্ক ব্যবহার করতাম, তা করা হচ্ছে না। স্কুলগুলোও খুলে গিয়েছে। এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিশু হাসপাতালে যথেষ্ট বেডের অভাব রয়েছে। যেভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সাবধনতা নিতেই হবে। আর সেই কারণেই সরকার ও স্বাস্থ্য দফতরকে আলাদা করে নির্দেশিকা জারি করতে হয়েছে।”