কলকাতা: বিট্টু সর্দার। বছর তিরিশের এই যুবক চিংড়িহাটা এলাকার ত্রাস। সারাদিন নেশায় আসক্ত থাকা, টাকা না পেয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা বাসিন্দাদের মারধর, গালিগালাজ, নানারকম অসামাজিক কাজের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল তার বিরুদ্ধে। কিন্তু এবারের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের দিন এক যুবকের গলায় কাঁচি ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগের পর বিট্টু সর্দারের ওপর ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা এলাকা। পুলিশি গ্রেফতারির আগে সেই রোষেরই শিকার বিট্টু। রাস্তায় ফেলে এলোপাথাড়ি মারধর, রক্তাক্ত হল এলাকার ত্রাস বিট্টু। উদ্ধারের করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পুলিশও, রবিবার দিনভর ঘটনাকে ঘিরে তপ্ত থাকল খাস কলকাতার চিংড়িহাটা এলাকা।
কে এই বিট্টু সর্দার?
পুলিশের খাতায় আগে থেকেই নাম ছিল বিট্টুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, চিংড়িহাটার শান্তিনগর এলাকাকে অশান্ত করে তুলতে এই একটাই নাম যথেষ্ট। এলাকায় ত্রাস বলেই পরিচিত ছিল সকলের কাছে। মারধর করা থেকে তোলাবাজির মতো সমস্ত অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শান্তিনগরের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, যখন তখন টাকা চাইত বিট্টু, না দিলেই মারধরও করত। এলাকায় বিট্টুর এই ধরনের কাণ্ড ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
যদিও এলাকায় পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ বিট্টুকে ঘিরে। এর আগে গ্রেফতারও হয়েছে বিট্টু। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, টাকা দিয়ে বেরিয়ে আসত বিট্টু। আর থানা থেকে ছাড়া পেতেই শুরু করত গুন্ডামি। চার বছর আগে ঠিকানা বদল করে বিট্টু। সেখানেও অভিযোগ, নেশার কারণেই সে এই গন্ডগোল করত। নেশার টাকা না পেলেই বিট্টু হয়ে উঠত ভয়ানক। দু’বার বিট্টু পরিবার নেশা মুক্তি কেন্দ্রেও পাঠায়। পরে ফিরে এসে ফের নেশা ধরে বিট্টু। আর টাকা কম পড়লেই শুরু করত সবজিওয়ালা বা স্থানীয়বাসিন্দাদের ওপর জুলুম। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা, এটাও বলছেন, কোনও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সেভাবে ছিল না সে।
সম্প্রতি চিংড়িহাটায় ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। জগদ্ধাত্রী পুজোয় ভাসানে ডিজে বাজানোকে কেন্দ্র করে বচসার জেরে এক যুবকের গলায় কাঁচি ঢুকিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। তারপরই বেপরোয়াভাবে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় বিট্টুকে। তারপর স্থানীয় বাসিন্দারাই বিট্টুর ওপর চড়াও হয়। রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় তাকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। পুলিশ গিয়ে বিট্টুকে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়। জনতার রোষের থেকে বাঁচাতে তাকে ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পুলিশ। উত্তেজিত এলাকাবাসী সেই ট্যাক্সিতেও ভাঙচুর চালায়। মৃত সাহেবের পরিবার এখনও ক্ষোভে ফুঁসছে। বিট্টু সর্দারের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। এলাকা আজ শান্ত, কিন্তু পুলিশের ওপর ক্ষোভ থেকেই যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।