কলকাতা: একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ আর জি করে! শিক্ষার পর এবার স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও বড়সড় দুর্নীতি? টাকার বিনিময়ে চাকরির অভিযোগে যখন তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তখন অভিযোগ উঠল, সরকারি চিকিৎসকদেরও বদলির জন্য দিতে হয় টাকা। এমন অভিযোগ জানিয়ে দুটি চিঠি লিখেছেন আরজি করের প্রাক্তন নন মেডিক্যাল ডেপুটি সুপার আখতার আলি। একটি চিঠি লিখেছেন রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখায়, অন্যটি রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনে পাঠানো হয়েছে। বদলি দুর্নীতির কারবারি হিসেবে আর জি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের নাম সামনে এনেছেন আখতার আলি। আখতার আলির নিশানায় রয়েছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পদে কর্মরত এক মহিলাও।
আখতার আলি বলেন, “সন্দীপ ঘোষের কথা কেউ না শুনলে তাঁকে অবৈধভাবে বদলি করে দেওয়া হত। সেই লিস্ট তৈরি হত আরজি করেই।” স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “তনুশ্রী মণ্ডলকে গাড়ি পাঠানো হত। তিনি এলে ২-৩ ঘণ্টা ঘর বন্ধ করে আলোচনা চলত প্রিন্সিপ্যালের ঘরে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বদলির নির্দেশিকা বেরত।” তাঁর দাবি, সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে ঠিক মতো ‘ডিল’ হলে চিকিৎসকদের ভাল জায়গা বেছে পোস্টিং দেওয়া হত।
আখতার আলির অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া নিতে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের কাছে গিয়েছিলেন TV9 বাংলার প্রতিনিধি। প্রতিক্রিয়া তো মেলেনি, উল্টে TV9 নাইন বাংলার প্রতিনিধি যাতে অধ্যক্ষের অফিসে ঢুকতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে অ্যাকাডেমিক ভবনের কোলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেন রক্ষীরা। আর এক অভিযুক্ত অর্থাৎ স্বাস্থ্য ভবনে একসময় কর্মরত মহিলা আধিকারিকের কাছে গেলে ক্যামেরার সামনে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি তিনি। পরে হোয়াটস অ্যাপে তিনি তাঁর বক্তব্য জানিয়েছেন।
ওই প্রাক্তন মহিলা আধিকারিক বলেছেন, “স্বাস্থ্য ভবনে দীর্ঘ ১০ বছর প্রশাসনিক পদে কাজ করার সুবাদে শুধু সুনাম অর্জন করেছি। টাকার জন্য কোনও দিন কিছু করিনি। স্বাস্থ্য শিক্ষায় চিকিৎসকদের বদলির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য এবং স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। এখানে টাকার লেনদেনের প্রশ্ন আসে কী ভাবে! আমার সময়কালে বদলি সংক্রান্ত সব নথি আমার কাছে রয়েছে। আখতার আলি পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বদনাম করছেন।”
এর আগে স্বাস্থ্য দফতরের বদলি নীতিকে কাঠগড়ায় তুলে আত্মঘাতী হয়েছিলেন চিকিৎসক অবন্তিকা ভট্টাচার্য। গত মে মাসে রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে বদলির অভিযোগের কথা বলেছিলেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন এবং তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি। তৃণমূলপন্থী সংগঠনের এক জুনিয়র চিকিৎসক নেতার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে বদলির অভিযোগ তুলে পুলিশের ডিজি-কে চিঠিও দিয়েছিলেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে ইডি ও সিবিআই দিয়ে তদন্তের আর্জি জানাচ্ছেন বিরোধী সংগঠনগুলি।