কলকাতা: শনিবার বিকাল চারটে পর্যন্ত নবান্নের সামনে ধরনায় বসতে পারবেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। স্পষ্ট করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা খেল রাজ্য। আর এটাকে বড় জয় হিসাবে দেখছেন আন্দোলনকারীরা। নবান্নের সামনে ডিএ আন্দোলনকারীদের ধর্না নিয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে টানটান উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ধর্নাস্থল নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ। চলছে স্লোগান, উঠছে ‘বল হরি বোল’ ধ্বনি। পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কিতেও জড়ান তাঁরা।
কৌস্তুভ বাগচি এলেন আন্দোলনকারীদের মঞ্চে।
অবস্থানের জায়গা ঘিরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দীর্ঘক্ষণ ধরে চলল টালবাহানা। অবশেষে নবান্ন বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস টার্মিনাসে সরে আসছেন বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীরা। তবে আদালতের তরফে নির্ধারিত জায়গায় নয়। দীর্ঘ টালবাহানা, আলোচনার পর অবশেষে পুলিশের তরফে নির্ধারিত জায়গাতেই অবস্থানে বসার জন্য রাজি সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
ডিভিশন বেঞ্চে ধাক্কা খেল রাজ্য। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ শর্তসাপেক্ষে ডিএ আন্দোলনকারীদের ধরনা কর্মসূচিতে অনুমতি দেয়। শনিবার বিকাল চারটে পর্যন্ত নবান্নের সামনে ধরনায় বসতে পারবেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। এটাকে ‘বড় জয়’ হিসাবেই দেখছেন আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারীরা।
আরেক আন্দোলনকারী বলেন, “ওঁরা যা ধাঁতানি খেয়েছেন, আগামী দিনে ওঁদের চাকরি থাকবে কিনা সন্ধিহান। পুলিশ আমাদের মারাত্মক প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ওরা বলছে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের দেখাক ৫ কিলোমিটারের মধ্যে একজন সাধারণ মানুষ রয়েছেন। ওদের অভিযোগ করল কে? ১৪৪ ধারা থাকলে এত গাড়ি চলছে, আওয়াজ হচ্ছে না? গুলি মারলে মারুক, আমরা সরব না।”
আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন ভাস্কর ঘোষ। তিনি বলেন, "পুলিশের তরফ থেকে প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। আর ওদের ওখানে অনেক ভিড়। গিয়ে আই কার্ড দেখতে চান। দেখবেন অনেকেই আই কার্ড দেখাতে পারবেন না। অনেকেই পুলিশ নন।"
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, “যে কথাগুলো বলা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য যাবে। তার আগে যদি আমাদের প্রভোক করে কিছু করা যায়। যে সব আইনকানন আর যেসব পথ দিয়ে তাঁরা যাবেন, সেগুলো আমাদের ঘাঁটা। কারণ আমরা সরকারি কর্মী। ওঁদের তো কন্ট্রোল আমরাই করি। এখানে জনবসতি কোথায়? কাকে ঢুকতে দেন ওঁরা? কেবল মাত্র পাখিকে আটকানোর উপায় নেই। তাই আটকাতে পারে না ওঁরা। এখানে মানুষ কোথায়? “
আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা পুলিশকে ঘিরে প্রশ্ন করতে থাকেন, “একজন সাধারণ নাগরিককে নিয়ে আসুন, কে বলছে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে।” পুলিশকে ঘিরেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কলকাতা পুলিশ মাইকিং করা শুরু করে। পুলিশ মাইকিং করে বলতে থাকে, “এখানে ধরনা মঞ্চের কোনও অনুমতি নেই। আপনারা এখানে বসে সাধারণ মানুষকে সমস্যার মধ্যে ফেলছেন।” যে পুলিশ কর্তা মাইকিং করছিলেন, ঠিক তাঁর সামনেই আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন করেন, “কে বলছে অনুমতি নেই? আদালতের অনুমতি রয়েছে।” ঢাক পিটিয়ে, বাটি বাজিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। তাঁরা পুলিশকে আদালতের রায়ের কপি দেখান। কিন্তু পুলিশও তাঁদের বক্তব্যে অনড় থাকে। ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় এলাতায়। পুলিশের সঙ্গে বেশ খানিকটা ধস্তাধস্তিও হয় আন্দোলনকারীদের।
পুলিশের বক্তব্য, যে জায়গায় আন্দোলনকারীরা ধরনায় বসতে চাইছেন, সেখানে বসলে, সাধারণ পথচারীদের সমস্যা হবে। সেক্ষেত্রে পুলিশ যে জায়গাটি তাঁদের জন্য বেছে দিচ্ছে, সেটি নবান্নের আরও কাছে। কিন্তু তা নিয়েই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বচসা বাধে পুলিশের।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সেই ডিএ নিতে অস্বীকার করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, এই ভিক্ষার তাঁদের প্রয়োজন নেই। নবান্নের সামনে ধরনায় বসার জন্য আগেই আদালতের থেকে অনুমতি নিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। আদালতে তাঁরা জানিয়েছিলেন নবান্নে বাসস্ট্যান্ডের সামনে ব্রিজের নীচে তাঁরা ধরনায় বসবেন। কিন্তু এই জায়গায় ধরনায় বসতে দিতে চাইছে না কলকাতা পুলিশ।