৭ বছরে মার্চের শহরে উষ্ণতম দিন, কালবৈশাখী কবে আসবে? ভোট আবহে প্রশ্ন জনতার

সৈকত দাস |

Mar 31, 2021 | 9:37 PM

বুধবার আলিপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৩৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া দফতরের হিসেব বলছে, ২০১৪ সালের পর মার্চে পারদের এতটা উত্থান এই প্রথম। ১৫ বছরের উষ্ণ-তালিকায় চার নম্বরে থাকছে মহানগরের তাপমাত্রা।

৭ বছরে মার্চের শহরে উষ্ণতম দিন, কালবৈশাখী কবে আসবে? ভোট আবহে প্রশ্ন জনতার
প্রতীকী চিত্র

Follow Us

কমলেশ চৌধুরী: ভোটের উত্তাপে ফুটছে বাংলা। তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে চৈত্রের গরমও। তাপপ্রবাহে কার্যত সেদ্ধ হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল। কলকাতাতেও তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি। চল্লিশের দোরগোড়ায় পারদ। বুধবার আলিপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৩৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া দফতরের হিসেব বলছে, ২০১৪ সালের পর মার্চে পারদের এতটা উত্থান এই প্রথম। ১৫ বছরের উষ্ণ-তালিকায় চার নম্বরে থাকছে মহানগরের তাপমাত্রা।

কলকাতায় তপ্ত মার্চ

আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড বলছে ১৯৪১ সালের ২৩ মার্চ কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.১ সেলসিয়াস। ২০০৬ সালের ২৬ মার্চ শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৪ সালের ৩০ মার্চ ছিল ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২২ মার্চ, ২০১০ সালে শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড গড়ে হয়েছিল ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চলতি বছরের ৩১ মার্চ শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শেষ ছয় বছরে কেমন গরম ছিল?

২০১৫ সালে মার্চ মাসে উষ্ণতম ৩৬.৮ সেলসিয়াস। ২০১৬ সালে ছিল ৩৬.৩ সেলসিয়াস, ২০১৭ তে উষ্ণতম দিনে পারদ চড়েছিল ৩৫.৯ ডিগ্রিতে, ২০১৮ ও ২০১৯ এ যথাক্রমে ৩৫.৫ এবং ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবং ২০২০ সালে মার্চের উষ্ণতম দিন ছিল ৩৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বুধবার আলিপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৩৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এদিকে মার্চ মাস শেষ। কালবৈশাখী ছাড়াই, বৃষ্টি ছাড়াই শুকনো শহর কলকাতা। মার্চে গড়ে একটি কালবৈশাখী হয় কলকাতার। ৩৫.২ মিলিমিটার বৃষ্টিও হওয়ারও কথা। কিন্তু কিছুই জোটেনি বরাতে। উল্টে বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে গরম হাওয়া ঢুকছে। আকাশ পরিষ্কার থাকায় ছড়ি ঘোরাচ্ছে তেজি রোদও। সবমিলিয়ে মাঝ-চৈত্রেই দহন-বেলা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। মঙ্গলবারই মেদিনীপুরের তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বুধবার সেখানে পারদ ছিল ৪২.৪ ডিগ্রিতে। বাঁকুড়ায় তাপমাত্রা ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি, পানাগড়ে ৪০.১ ডিগ্রি। আলিপুরের মতো দমদমেও তাপমাত্রা পৌঁছয় ৩৯.৩ ডিগ্রিতে। সল্টলেকে ৩৯ ডিগ্রি। উষ্ণ এবং অস্বস্তিকর আবহাওয়ার একচ্ছত্র দাপট। এই বাংলাতেই আবার অন্য ছবি- ভারী বৃষ্টির সতর্কতা উত্তরবঙ্গে। উত্তর-পূর্ব ভারতে বন্যা, ধসের আশঙ্কা। বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়ায় মত্‍স্যজীবীদের জন্য সতর্কতাও জারি করা হয়েছে।

কিন্তু দুই বাংলায় দু’রকম ছবি কেন?

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘বায়ুচাপের ফারাকের জন্য এই মুহূর্তে দখিনা-পশ্চিমি বাতাস বইছে। বঙ্গোপসাগর থেকে এই বাতাস জলীয় বাষ্প নিয়ে সরাসরি চলে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে। তার পর পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে।’ কালবৈশাখীর জন্য অন্ততপক্ষে তিনটে শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন। এক, ছোটনাগপুরের মালভূমি তেতে উঠতে হবে। দুই, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ওই অঞ্চলে পৌঁছতে হবে। তিন, ওই জলীয় বাষ্প নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত তুলে দিতে হবে, যাতে বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি হতে পারে। এই মুহূর্তে প্রথমটি বাদে কোনও শর্তই পূরণ হয়নি। কালবৈশাখীও তাই বেপাত্তা।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফার ভোট রাজ্যে। এ দিনের জন্যও তাপপ্রবাহের সতর্কতা বজায় থাকবে বেশ কয়েকটি জেলায়। যার মধ্যে রয়েছে বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হাওড়া। শুক্রবার থেকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। রবিবার হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় বিক্ষিপ্ত ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত জোরালো নয় সম্ভাবনা। ফলে স্পষ্ট, অস্বস্তিকর গরমের হাত থেকে সহসা রেহাই নেই। মার্চে কলকাতার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.৫ ডিগ্রি। এ বার হল ৩৫.৩ ডিগ্রি। আমজনতার প্রশ্ন, মার্চেই যদি এই হাল নয়, তাহলে এপ্রিল-মে মাসে কী হবে?

পুরোনো রেকর্ড ঘেঁটে আবহবিদরা বলছেন, শেষবার ২০০৬ সালে মার্চে কলকাতার তাপমাত্রা চল্লিশের উপরে উঠেছিল। সে বার ২৬ মার্চ আলিপুরের পারদ পৌঁছছিল ৪০.৬ ডিগ্রিতে। তার পর, মার্চের উষ্ণতম দিন ২০১৪ সালে। ৩০ মার্চ পারদ উঠেছিল ৩৯.৯ ডিগ্রিতে। তথ্য বলছে, সে বছর এপ্রিলে কলকাতার তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১.২ ডিগ্রিতে। পাঁচ দিন পারদ ছিল ৪০ ডিগ্রির উপরে। এ বারও কি সেটাই অপেক্ষা করছে বরাতে?

আরও পড়ুন: আমি আপনাদের পাহারাদার, দশ বছর ধরে আমিই পাহারা দিয়েছি: জ্যোতিপ্রিয়

বুধবার প্রকাশিত মৌসম ভবনের সামার আউটলুক বলছে, দেশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে এপ্রিল-মে-জুনের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরেই থাকবে। তবে দক্ষিণবঙ্গে তিন মাসের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ০.৩২ ডিগ্রি কম থাকতে পারে। এই পরিসংখ্যান দেখে অবশ্য কোনও একটি মাসের ভবিষ্যত্‍ বোঝা মুশকিল। এক আবহবিদের কথায়, ‘নিয়মিত ঝড়-বৃষ্টি হলে তবেই এই পূর্বাভাস মিলবে।’

Next Article