কলকাতা: দেখে বোঝার উপায় নেই জীবনদায়ী ওষুধ আসলে জাল, ভেজাল। হার্ট, কিডনি, গ্যাস, ডায়াবেটিসের সমস্যায় যেসব ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার হয়, খুব চেনা নাম, সেই ওষুধের জাল ব্যবসার রমরমা এ রাজ্যে। খাস কলকাতায়। কলুটোলা স্ট্রিটে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোলার অরগাইজেশনের (CDSCO) অভিযানে বাজেয়াপ্ত হল ২ কোটি টাকার জীবনদায়ী ওষুধ। অথচ সবই জাল! একটি ঘিঞ্জি গুদামে লোকানো ছিল সেসব। অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে উদ্ধার হয়েছে সেই জাল ওষুধ। গ্রেফতার করা হয়েছে অসীম সাধু নামে এক ব্যক্তিকে। কেন্দ্রীয় সংস্থার এসব সাফল্যে খুশি ওষুধ ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষও বলছেন, এমন অভিযান বারবার হোক। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলারের ভূমিকা নিয়ে। কলুটোলা স্ট্রিটের মতো শহরের আর কোথায় কোথায় এরকম জাল ওষুধের আস্তানা আছে, তা খুঁজে বের করতে স্বাস্থ্য দফতর কী ভূমিকা নিচ্ছে? এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিবের কাছে জানতে চাওয়া হলে উত্তর মেলেনি। অন্যদিকে স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোলের ডিরেক্টর তপনকান্তি রুদ্রের কাছ থেকেও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
গত জানুয়ারি মাসে ১০ লক্ষ টাকার নকল ওষুধ উদ্ধার হয়। সেই মামলার রেশ ধরেই কলুটোলার ওই ঘরের খোঁজ পায় তারা। গত ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই সিডিএসসিও বিশেষ অভিযান চালায়। ৮২ নম্বর মওলানা শওকত লেনের তিনতলায় পৌঁছন দফতরের আধিকারিকরা। নিজেদের ক্রেতা বলে পরিচয় দিয়ে জানতে চান, কোথায় ওষুধ বিক্রি হয়। একজন ঘর দেখিয়েও দেন। এরপরই অসীম সাধুর মুখোমুখি পড়েন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, সিডিএসসিওর তদন্তকারীদের ছবি আগে থেকেই ছিল অসীম সাধুদের কাছে। তাই বিপদ বুঝে অন্য দিকে ওই আধিকারিকদের পাঠিয়ে দেন অভিযুক্ত। এরপর অন্য তলায় নেমে আসেন আধিকারিকরা। পরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পারেন ভুল পথে চালনার চেষ্টা করা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ফের তিনতলার সেই ঘরের সামনে যান সিডিএসসিওর আধিকারিকরা। কিন্তু ততক্ষণে সেই ঘরের কোলাপসিবল গেটে তালা পড়ে গিয়েছে। দরজা বন্ধ। প্রায় দেড় দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেন ঘর সিল করা হবে। সেই সময়ই সঙ্গে থাকা এক মহিলা আধিকারিকের খটকা লাগে। তিনি জানান, ঘর ভিতর থেকে বন্ধ। বাইরে তালা ঝুলিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরপরই ধাক্কাধাক্কিতে দেখা যায় ভিতরে একজন লুকিয়ে আছেন। গেটের তালা ভেঙে ঢুকে এরপরই অসীম সাধুকে হাতেনাতে ধরেন। ১৮ তারিখ পর্যন্ত জেল হেফাজত হয়েছে তাঁর। তদন্তকারীরা জানতে চান, এই চক্রের শিকড় কত দূর ছড়িয়েছে।
বাগরি মার্কেট বা মেহতা বিল্ডিংয় শহরে কার্যত ওষুধের হাব। সেসব জায়গা থেকে সরিয়ে এই জালচক্র তাদের ব্যবসা নিয়ে এসেছে শহরের ঘিঞ্জি এলাকায়। লাইসেন্সহীন গুদামে কোটি কোটি টাকা মূল্যের জাল ওষুধ মজুত করা হয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, শহরের ঘিঞ্জি এলাকাকে ব্যবহার করে কারবার চলছে এ ধরনের মারণ ব্যবসার। শুধু একটি জায়গায় দু কোটি টাকার জাল ওষুধ! এ রকম গুদাম আরও রয়েছে বলে মত তাঁদের। সেখান থেকে কোথায় কোথায় যেত এই জাল ওষুধ? কোথায় তৈরি হচ্ছে মারণ ওষুধ? তা কী ভাবে চলে যাচ্ছে খোলা বাজারে? সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে এ সব প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া জরুরি বলে মনে করছে সিডিএসসিও।
এ বিষয়ে প্রাক্তন রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলার অধ্যাপক কৃষ্ণাংশু রায় বলেন, “এমনও হতে পারে, আমাদের রাজ্যে তৈরি হচ্ছে না, অন্য রাজ্যে তৈরি হচ্ছে। আমাদের রাজ্যে চালান হচ্ছে। এটা আন্তঃরাজ্য বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব দেখভাল করার। তবে সাবধান সকলকে হতে হবে। যিনি ওষুধ কিনছেন, যিনি বিক্রি করছেন তাদেরও সতর্ক হবে।”