কলকাতা : সারাদিন কাঠফাটা গরমে পুড়লেও সন্ধ্যা নামলেই আকাশ ঢাকবে মেঘে। গাছের ডালগুলোতে তৈরি হবে তুমুল অস্থিরতা। ফিরবে ছেলেবেলার আম কুড়নোর স্মৃতি। তার নামই কালবৈশাখী। সারাদিনের তীব্র গরমে কিছুটা স্বস্তি দেয় এই ঝড়। কিন্তু মার্চ মাস পেরিয়ে এপ্রিলের বেশ কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেলেও দেখা নেই কালবৈশাখীর। এই পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক নয়, তা স্পষ্টতই জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। রাজ্যের আবহাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে বর্ণনা করছেন মৌসব ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, ২০২২-এর মার্চে যে আবহাওয়া দেখা গিয়েছে, তা নজিরবিহীন। গত ১২২ বছরের ইতিহাসে এমন কোনও মার্চ মাস বাংলা দেখেনি, যখন কোনও ঝড় হয়নি।
মার্চ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যেই। এপ্রিল মাসের বেশ কয়েকটা দিন পেরিয়ে গিয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা না দিলেও একটা অস্বস্তি রয়েই যাচ্ছে। আর সেই অস্বস্তি কাটাতে পারে একমাত্র কালবৈশাখী। সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ১২২ বছর পর এবারই প্রথম কোনও কালবৈশাখীর দেখা মেলেনি। তিনি জানিয়েছেন, ২ টো নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু তার মধ্যে কোনওটাই আমাদের উপকূলের দিকে পৌঁছয়নি, ফলে সেখান থেকে কোনও বৃষ্টি পায়নি রাজ্য।
সাধারণত এই সময় ছোট নাগপুর মালভূমিতে নিম্নচাপ তৈরি হয়। এবার তেমন কিছুও ঘটেনি। আবহাওয়াবিদের মতে, যদি ঝাড়খণ্ডে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত দেখা দিত, তাহলেও ঝড়-বৃষ্টি হত এ রাজ্যে। কারণ প্রত্যেকবার কালবৈশাখীর উৎস তৈরি হয় ওই অঞ্চলেই।
আবহাওয়া দফতরের এই কর্তার দাবি, মার্চে কলকাতায় অন্তত ৪ টে কালবৈশাখী হয়, জেলায় সেই সংখ্যাটা আরও বেশি। এপ্রিলে অন্তত ৭ টা ঝড় হয়, আর মে তে ১১। কিন্তু মার্চ মাস শুষ্ক থাকার পর এপ্রিলের অন্তত ১০ তারিখ অবধিও তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দক্ষিণবঙ্গে আগামী ৫ দিন কোনও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
এ ভাবে কালবৈশাখীর অভাব থাকার কারণ বোঝাতে গিয়ে সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা উষ্ণায়ন ও ক্লাইমেট চেঞ্জ অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা তলছে বহুদিন ধরেই। তবে সেই উষ্ণায়নের প্রভাব এবার আঞ্চলিক স্তরে পড়ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, আগে বিশ্বের মাপকাঠিতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হত, আর এখনও কার্যত ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে সেই গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এই আবহাওয়া তারই প্রভাব বলে মনে করছেন সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিকে, হাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, উত্তরের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হবে আগামী ২৪ ঘণ্টায়। আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের ওপরের দিকের পাঁচ জেলায় দু-এক জায়গায় ভারী বৃষ্টিও হতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তবে নীচের দিকের তিন জেলা – উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদায় বৃষ্টি অনেকটাই কম থাকবে। দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে আপাতত বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
আরও পড়ুন : Jalpaiguri News: গরীব টোটো চালককে তৃণমূল শ্রমিক নেতার নিদান; মানতে না পেরে আত্মহত্যা, দাবি স্ত্রীর