কমলেশ চৌধুরী: বামফ্রন্টকে গদিচ্যুত করতে ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ’ স্লোগান তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই ডাকই কিছুটা বদলে ‘চুপচাপ পদ্মে ছাপ’ করে দিয়েছে বিজেপি। উল্টোটাও হয়েছে। ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ স্লোগান তুলেছিলেন বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং। সেটাই হুবহু ব্যবহার করে পরে ‘ভাগ মোদী ভাগ’ আওয়াজ তোলে তৃণমূল। কিন্তু এই প্রবণতাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে ‘খেলা হবে’ স্লোগান। বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী থেকে দিলীপ ঘোষ, তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডল থেকে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, কংগ্রেস থেকে বাম– সবার মুখেই এক স্লোগান। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘হোক না একটা খেলা’! অথচ, ভোটের মুখে বাংলার নেতা-নেত্রীদের মুখে মুখে ঘুরছে যে শব্দবন্ধ, তা আদতে বাংলাদেশের ‘ফসল’, পশ্চিমবঙ্গের নয়। ‘হোক কলরব’, ‘জয় বাংলা’র মতোই!
৮ বছর আগে খালেদা জিয়ার বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামির বিরুদ্ধে প্রচার করতে গিয়ে ‘খেলা হবে’র স্লোগান দিয়েছিলেন আওয়ামি লিগের নেতা, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামিম ওসমান। ইউটিউবে ভাইরাল সেই ভিডিও। পদ্মাপারে দেওয়া তাঁর স্লোগান গঙ্গাপারে ঢেউ তুলেছে দেখে কী বলছেন শামিম? জানালেন TV9 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
প্রশ্ন: ইউটিউবে আমরা আপনাকে দেখেছি উত্তেজিত হয়ে ‘খেলা হবে’র স্লোগান দিতে। কী কারণে এমন স্লোগান তুলেছিলেন?
উত্তর: যখন এই কথাগুলো বলেছিলাম, তখন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামি ‘জ্বালাও পোড়াও’ আন্দোলন করছিল। মানুষকে পুড়িয়ে মারছিল! ২০১৩-১৪-র সেই সময়, নির্বাচনের আগে ৮৫ জন মারা গিয়েছিল। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলাম, আমরা বলেছিলাম, এটা গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। বলেছিলাম, তারা যদি এই জায়গা থেকে না সরে, তা হলে আমরাও খেলব। যে ভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করেছে, আমরাও সেই লড়াই করব। এটাই বলতে চেয়েছিলাম আমি।
প্রশ্ন: এটা কি হুঁশিয়ারি দেওয়া নয়?
উত্তর: না, আমি হুঁশিয়ারি দিইনি। আগে-পরে অনেক কথা ছিল। শুধু ওইটুকু অংশই তুলে ধরা হয়েছিল।
আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, আপনি মারের বদলে মার দিয়ে রাজনীতিতে বেশি ক্ষণ টিকতে পারবেন না। রাজনীতিতে থাকতে হলে জনগণকে নিয়েই সোচ্চার হতে হবে। জনগণের চেয়ে বড় শক্তি কেউ হতে পারে না। জনগণের দাবি থেকেই এত কথাগুলো এসেছিল।
প্রশ্ন: খেলা হবে বলতে ঠিক কী হবে? সারা দিন এই স্লোগান শুনতে শুনতে কিছুটা ভয়েই রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের আমজনতা। অনেকের মনে প্রশ্ন, তবে কি রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে? আপনার কী মনে হয়?
উত্তর: দেখুন আমরা কিন্তু রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করেছি। যারা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিল, তারা যখন এরকম আস্ফালন দেখাচ্ছিল, তখন আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সন্তান, তাদের ভিতরে বিদ্রোহী মনোভাব আসারই কথা! আসলে কর্মীকে যদি সাহসী করতে হয়, এরকম স্লোগান দিতে হয়। যেমন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা। এই স্লোগান দিয়েই মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছেন। আপনারা দেখবেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬, আমাদের যারা নির্যাতন করেছে, কারও বিরুদ্ধে আমরা আইন হাতে তুলে নিইনি। হত্যার পরিবর্তে হত্যায় রাস্তায় হাঁটিনি। বঙ্গবন্ধুকেও যারা খুন করেছিল, তাদেরও বিচার প্রচলিত আইন মেনে হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার মুখের স্লোগানই পশ্চিমবঙ্গে ঢেউ তুলছে। আপনার প্রতিক্রিয়া?
উত্তর: (হেসে) পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তো আমাদের বঙ্গের তেমন পার্থক্য নেই! আমার মায়ের দেশ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ। বর্ধমানে জন্ম। মায়ের আত্মীয় ছিলেন বিধানসভার স্পিকার হাবিবুল্লা সাহেব (সৈয়দ আব্দুল মনসুর হাবিবুল্লা), গনি খান চৌধুরী সাহেবরা।
২০০১, ২০০৬-এর সময় দু’বার ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে থাকতে হয়েছিল। ২০০১-এর ১৬ জুন বাংলাদেশের যে সবচেয়ে বড় বোমা বিস্ফোরণ হয়, তাতে আমি-সহ অনেকেই জখম হয়েছিলাম। ২০ জন মারা গিয়েছিল। অভিযুক্তরা পরে স্বীকার করেছিল, শামিম ওসমান ওদের প্রাইম টার্গেট ছিল। এর পরই ওদের টার্গেট ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হই। ২০০৬ সালে যখন দেশে ফিরি, তখন আবার হামলা হয়। আবার দেশ ছাড়তে হয়। সে সময় একজন মানুষের স্নেহ, ভালোবাসা পেয়েছি, আমার বাবার খুব কাছের লোক ছিলেন, তিনি হলেন ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কোনও দিন ভুলব না তাঁর কথা।
প্রশ্ন: ভোটের বাংলাকে কোনও বার্তা?
উত্তর: আমি সামান্য মানুষ। তবু বলছি, আপনারা তখনই জয়ী হবেন, যখন পশ্চিমবঙ্গের আগামী নির্বাচন হবে, সে দিন যদি একটি মানুষেরও প্রাণহানি না হয়, একটিও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে না হয়, কারও সঙ্গে কারও সংঘর্ষ না হয়। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চেয়েও বড় যুদ্ধ হল, মানুষের ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখা। আমি চাইব এই স্লোগানটা শান্তির পক্ষে হয়, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হয়, উন্নয়নের পক্ষে হয়। তবেই আমি খুশি হব।
আমি বলব খেলা হবে-র আগে শব্দবন্ধ লাগিয়ে নিতে। শান্তির পক্ষে খেলা হবে বা খেলা হবে শান্তির পক্ষে। তবেই স্লোগানটা অর্থবহ হবে।
কমলেশ চৌধুরী: বামফ্রন্টকে গদিচ্যুত করতে ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ’ স্লোগান তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই ডাকই কিছুটা বদলে ‘চুপচাপ পদ্মে ছাপ’ করে দিয়েছে বিজেপি। উল্টোটাও হয়েছে। ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ স্লোগান তুলেছিলেন বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং। সেটাই হুবহু ব্যবহার করে পরে ‘ভাগ মোদী ভাগ’ আওয়াজ তোলে তৃণমূল। কিন্তু এই প্রবণতাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে ‘খেলা হবে’ স্লোগান। বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী থেকে দিলীপ ঘোষ, তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডল থেকে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, কংগ্রেস থেকে বাম– সবার মুখেই এক স্লোগান। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘হোক না একটা খেলা’! অথচ, ভোটের মুখে বাংলার নেতা-নেত্রীদের মুখে মুখে ঘুরছে যে শব্দবন্ধ, তা আদতে বাংলাদেশের ‘ফসল’, পশ্চিমবঙ্গের নয়। ‘হোক কলরব’, ‘জয় বাংলা’র মতোই!
৮ বছর আগে খালেদা জিয়ার বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামির বিরুদ্ধে প্রচার করতে গিয়ে ‘খেলা হবে’র স্লোগান দিয়েছিলেন আওয়ামি লিগের নেতা, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামিম ওসমান। ইউটিউবে ভাইরাল সেই ভিডিও। পদ্মাপারে দেওয়া তাঁর স্লোগান গঙ্গাপারে ঢেউ তুলেছে দেখে কী বলছেন শামিম? জানালেন TV9 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
প্রশ্ন: ইউটিউবে আমরা আপনাকে দেখেছি উত্তেজিত হয়ে ‘খেলা হবে’র স্লোগান দিতে। কী কারণে এমন স্লোগান তুলেছিলেন?
উত্তর: যখন এই কথাগুলো বলেছিলাম, তখন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামি ‘জ্বালাও পোড়াও’ আন্দোলন করছিল। মানুষকে পুড়িয়ে মারছিল! ২০১৩-১৪-র সেই সময়, নির্বাচনের আগে ৮৫ জন মারা গিয়েছিল। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলাম, আমরা বলেছিলাম, এটা গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। বলেছিলাম, তারা যদি এই জায়গা থেকে না সরে, তা হলে আমরাও খেলব। যে ভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করেছে, আমরাও সেই লড়াই করব। এটাই বলতে চেয়েছিলাম আমি।
প্রশ্ন: এটা কি হুঁশিয়ারি দেওয়া নয়?
উত্তর: না, আমি হুঁশিয়ারি দিইনি। আগে-পরে অনেক কথা ছিল। শুধু ওইটুকু অংশই তুলে ধরা হয়েছিল।
আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, আপনি মারের বদলে মার দিয়ে রাজনীতিতে বেশি ক্ষণ টিকতে পারবেন না। রাজনীতিতে থাকতে হলে জনগণকে নিয়েই সোচ্চার হতে হবে। জনগণের চেয়ে বড় শক্তি কেউ হতে পারে না। জনগণের দাবি থেকেই এত কথাগুলো এসেছিল।
প্রশ্ন: খেলা হবে বলতে ঠিক কী হবে? সারা দিন এই স্লোগান শুনতে শুনতে কিছুটা ভয়েই রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের আমজনতা। অনেকের মনে প্রশ্ন, তবে কি রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে? আপনার কী মনে হয়?
উত্তর: দেখুন আমরা কিন্তু রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করেছি। যারা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিল, তারা যখন এরকম আস্ফালন দেখাচ্ছিল, তখন আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সন্তান, তাদের ভিতরে বিদ্রোহী মনোভাব আসারই কথা! আসলে কর্মীকে যদি সাহসী করতে হয়, এরকম স্লোগান দিতে হয়। যেমন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা। এই স্লোগান দিয়েই মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছেন। আপনারা দেখবেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬, আমাদের যারা নির্যাতন করেছে, কারও বিরুদ্ধে আমরা আইন হাতে তুলে নিইনি। হত্যার পরিবর্তে হত্যায় রাস্তায় হাঁটিনি। বঙ্গবন্ধুকেও যারা খুন করেছিল, তাদেরও বিচার প্রচলিত আইন মেনে হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার মুখের স্লোগানই পশ্চিমবঙ্গে ঢেউ তুলছে। আপনার প্রতিক্রিয়া?
উত্তর: (হেসে) পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তো আমাদের বঙ্গের তেমন পার্থক্য নেই! আমার মায়ের দেশ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ। বর্ধমানে জন্ম। মায়ের আত্মীয় ছিলেন বিধানসভার স্পিকার হাবিবুল্লা সাহেব (সৈয়দ আব্দুল মনসুর হাবিবুল্লা), গনি খান চৌধুরী সাহেবরা।
২০০১, ২০০৬-এর সময় দু’বার ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে থাকতে হয়েছিল। ২০০১-এর ১৬ জুন বাংলাদেশের যে সবচেয়ে বড় বোমা বিস্ফোরণ হয়, তাতে আমি-সহ অনেকেই জখম হয়েছিলাম। ২০ জন মারা গিয়েছিল। অভিযুক্তরা পরে স্বীকার করেছিল, শামিম ওসমান ওদের প্রাইম টার্গেট ছিল। এর পরই ওদের টার্গেট ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হই। ২০০৬ সালে যখন দেশে ফিরি, তখন আবার হামলা হয়। আবার দেশ ছাড়তে হয়। সে সময় একজন মানুষের স্নেহ, ভালোবাসা পেয়েছি, আমার বাবার খুব কাছের লোক ছিলেন, তিনি হলেন ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কোনও দিন ভুলব না তাঁর কথা।
প্রশ্ন: ভোটের বাংলাকে কোনও বার্তা?
উত্তর: আমি সামান্য মানুষ। তবু বলছি, আপনারা তখনই জয়ী হবেন, যখন পশ্চিমবঙ্গের আগামী নির্বাচন হবে, সে দিন যদি একটি মানুষেরও প্রাণহানি না হয়, একটিও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে না হয়, কারও সঙ্গে কারও সংঘর্ষ না হয়। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চেয়েও বড় যুদ্ধ হল, মানুষের ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখা। আমি চাইব এই স্লোগানটা শান্তির পক্ষে হয়, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হয়, উন্নয়নের পক্ষে হয়। তবেই আমি খুশি হব।
আমি বলব খেলা হবে-র আগে শব্দবন্ধ লাগিয়ে নিতে। শান্তির পক্ষে খেলা হবে বা খেলা হবে শান্তির পক্ষে। তবেই স্লোগানটা অর্থবহ হবে।