কলকাতা: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা শুরু করেছিল শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত। তা অয়ন শীলের হাত ধরে আপাতত গিয়ে ঠেকেছে পুরসভার ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, পুরসভা নিয়োগের ক্ষেত্রেও হয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি। নেপথ্যে আপাতত অয়ন শীলের হাত থাকাই তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। সঙ্গে অবশ্য এক্ষেত্রেও রয়েছে প্রচুর ‘মিডলম্যান’রা। পুরসভা নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে, জানতেন কি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম? অয়ন শীল সম্পর্কে তাঁর কী মত? বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, “তদন্ত হচ্ছে। আমরা দফতরকেই দেখতে বলেছি, কী কী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সবটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বুধবার ৭০ ওয়ার্ড ভবানীপুরে কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম যান। সেখানে নিকাশি ব্যবস্থা ও আবর্জনা পরিষ্কার সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, নাগরিকরা আবর্জনা ঠিকভাবে ফেলছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখেন। তখনই সাংবাদিকরা তাঁকে দেখে প্রশ্ন করেন, অয়ন শীলের কীর্তি প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যের পুর দফতর আলাদা করে নিয়োগ নিয়ে কোনও তদন্ত করছে? মেয়র বলেন, “আমাদের কাছে যা যা কাগজপত্র আছে রেডি করে রাখতে বলেছি। আদালত তো আমাদের এখনও কিছু অর্ডার দেয়নি। তাই আগ বাড়িয়ে কিছু করব না। সত্যি কোথাও দুর্নীতি হয়েছে কিনা, তা বিচার্য।”
অয়নের সূত্র ধরেই রাজ্যের একাধিক পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির তথ্য ইডির হাতে উঠে এসেছে। ইডি সূত্রে খবর, ২০১৬ সালে ডায়মন্ড হারবার পুরসভায় গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি মিলিয়ে ১৬ জনকে নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে তিনজন আবার ডায়মন্ড হারবারের বাইরের বাসিন্দা বলে অভিযোগ। চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগের জন্য প্রশ্নপত্রের বরাত দেওয়া হয়েছিল অয়ন শীলের সংস্থাকে। অয়ন শীলের অফিস থেকেই উদ্ধার হয়েছে চাকরি বিক্রির নথি। উঠে এসেছে একাধিক মিডলম্যানের নাম। বেশ কয়েকজন এজেন্টের নামের তালিকাও পাওয়া গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। এরকমই নাম হল ‘কানু দা’, ‘লাল’, ‘এমডি’, ‘তপন দা’। জানা যাচ্ছে, এই এজেন্টদের নামে টাকার বিনিময়ে পুরসভায় চাকরি দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেক এজেন্টের ক’জন চাকরিপ্রার্থী, তা যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনই টাকার লেনদেন নগদে নাকি ব্যাঙ্কে হয়েছে, তারও বিবরণ রয়েছে অয়নের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ওই নথিতে। জেরায় ইডি আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের উত্তর দমদম,দক্ষিণ দমদম, বরানগর, কামারহাটি, পানিহাটি ও হালিশহর পৌরসভায় অর্থের বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করা হয়েছিল।
পুরসভাতেও চাকরি বিক্রির অভিযোগ সামনে আসায় স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পুরমন্ত্রী। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।