কলকাতা: জালিয়াতিদের নতুন এক পন্থার পর্দাফাঁস করল পুলিশ। এ এক অভিনব পন্থা। মানে ধরে নিন, আপনার বাড়ি কলকাতা শহরেই। কিন্তু, আপনাকে ‘মুম্বই পুলিশ’ ডেকে পাঠিয়েছে কলকাতা শহরেরই এক হোটেলে। তাও আবার সেখানে সশরীরে কোনও পুলিশ নেই। হোটেলের রুমে বসে থাকা আপনাকে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে ‘মুম্বই পুলিশ’। সম্প্রতি এমনই এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন কলকাতার শরৎ বসু রোডের বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের এক ব্যক্তি।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। ওই ব্য়ক্তির স্ত্রী রাত প্রায় ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ থানায় ছোটেন। জানান, তাঁর স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ ডায়েরি করেন স্বামীর নামে। পুলিশকে তিনি জানান, বিকেল চারটে নাগাদ তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় স্ত্রীকে জানিয়ে যান, মুম্বই পুলিশ নাকি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় ব্যাঙ্কের নথি থেকে শুরু করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিয়ে যান। অনেক রাত পর্যন্তও তিনি বাড়ি না ফেরায় উদ্বিগ্ন স্ত্রী একাধিকবার তাঁর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ফোন ছিল সুইচড অফ। শেষে কী করবেন বুঝতে না পেরে, কলকাতা পুলিশের দ্বারস্থ হন মহিলা এবং গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানান।
এরপরই ওই নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ শুরু করে কলকাতা পুলিশ। সাউথ-ইস্ট ডিভিশনের ডিসি শ্রী ভোলানাথ পাণ্ডের নেতৃত্বে বালিগঞ্জ থানা ও সাউথ-ইস্ট ডিভিশনের সাইবার শাখার একটি দল অভিযানে নামে। কলকাতা পুলিশের দক্ষ অফিসারদের খুব বেশি সময় লাগেনি নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান পেতে। বেপাত্তা ব্যক্তির স্ত্রী নিখোঁজ ডায়েরি করার তিন ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর খোঁজ পায় পুলিশ। বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। শরৎ বসু রোডেই এক হোটেলে উঠেছিলেন তিনি। আর যখন কলকাতা পুলিশের টিম তাঁকে উদ্ধার করে, তখন ভিডিয়ো কনফারেন্সে ‘মুম্বই পুলিশ’-এর সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
গোটা বিষয়টি বুঝতে বেশি দেরি হয়নি কলকাতা পুলিশের দুঁদে অফিসারদের। মুম্বই পুলিশের পরিচয় দিয়ে কেউ যে তাঁর সঙ্গে জালিয়াতি করেছে, তা সহজেই বুঝে যায় পুলিশ। যতক্ষণে কলকাতা পুলিশ ওই হোটেলে পৌঁছয়, ততক্ষণে ওই ব্যক্তিকে মুম্বই পুলিশের পরিচয় দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাঁর থেকে প্যান, আধার নম্বর-সহ বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করে নিয়েছিল সাইবার জালিয়াতরা। যদিও টাকা পয়সার কোনও লেনদেন হওয়ার আগেই কলকাতা পুলিশ উদ্ধার করেন ওই ব্যক্তিকে।
এদিনের এই ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা জানিয়ে ফেসবুকে কলকাতা পুলিশ সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক করে জানিয়েছে, কোনও সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা লিখিত অনুমতি ছাড়া ফোন বা ভিডিও কলের মাধ্যমে কোনও পেশাগত কাজে কখনও জড়াবে না। কলকাতা পুলিশ আরও জানিয়েছে, পুলিশ আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আগে সশরীরে ডেকে পাঠাবে, বা নিজেরাই পৌঁছে যাবে।