কলকাতা: সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাচ্ছে তবুও হাসপাতাল সুপার হাসপাতালে পৌঁছতে পারছেন না! তাঁকে ফোন করা হলে তিনি বারবার বলছেন পরে আসবেন। অথচ এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যেই হাবড়া হাসপাতাল থেকে একের পর এক রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্য মেডিক্যাল কলেজে। মঙ্গলবার এক পাঁচ বছরের শিশুকে তিনটি হাসপাতালে ঘুরতে হয়। গরম জলে মুখের ভিতরটা পুড়ে গিয়েছিল তার। হাবড়া হাসপাতালে ভর্তি করার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর জানানো হয় সেখানে চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। তবে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
বুধবার রাতে হার্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক রোগী। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়। বারাসত মেডিক্যাল কলেজ অথবা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে হবে, এ কথা লিখে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের জন্য কোনও বেড বুকিং করে দেওয়া হয়নি। আদতে হৃদরোগে আক্রান্ত ওই রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়।
কিছুক্ষণ পর আরও এক রোগীকে ট্রান্সফার করা হয়, যিনি হার্টের সমস্যা নিয়ে হাবড়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায়। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হল, হাবরা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার মতো ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে আইসিসিইউ (ICCU)-র জন্য রোগীকে সরিয়ে নিয়ে যান তাঁর পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রত্যেকেই নিজেদের দায়িত্বে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছেন।
সত্যিই কি রোগীর পরিবার নিজের ইচ্ছেয় নিয়ে যাচ্ছে? নাকি নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে? এই প্রশ্ন উঠছে। হাসপাতালে সুপার এই বিষয়ে কোনও কথা বলছেন না। অন্যান্য চিকিৎসকরা হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময় তাঁদের প্রশ্ন করা হলে, তাঁরাও এড়িয়ে যাচ্ছেন। কেউ কোনও উত্তর দিতে রাজি নন। কেউ বলছেন, ‘আমরা ছাত্র’, কেউ বলছেন, ‘আমরা অন্য হাসপাতালের ডাক্তার।’
তবে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার বলছেন, এই হাসপাতালে একাধিক পরিষেবা নেই, সেই কারণে হাসপাতাল থেকে ট্রান্সফার করতে হয় রোগীদের। হাবড়া পুরসভার পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা বলেন, এটা আসলে সাধারণ হাসপাতাল। এখানে ন্যুনতম পরিষেবাটুকু দিয়ে ভাল চিকিৎসার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত করতে হয় রোগীদের। উল্লেখ্য, রেফারের সমস্যা মেটাতে পাইলট প্রজেক্ট শুরু করছে রাজ্য। তারপরও উঠছে একই অভিযোগ।