কলকাতা: মাঝে পাঁচ বছর। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর রাজ্য রাজনীতিতে অনেক বদল হয়েছে। সবচেয়ে নজর কেড়েছে পদ্ম শিবির। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতের সময় রাজ্যের ভোট মানচিত্রে শাসক তৃণমূলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল বিজেপি। তখন শাসকদলের প্রধান প্রতিপক্ষ বাম-কংগ্রেস। পাঁচ বছরে আমূল বদলেছে রাজ্য রাজনীতি। উনিশের লোকসভায় তৃণমূলকে জোর টক্কর দিয়েছে গেরুয়া শিবির। আর একুশের নির্বাচনের পর এখন বিধানসভার বিরোধী দল বিজেপি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েতের দিকে তাই তাকিয়ে সব পক্ষ। সেখানে পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্বের পর উজ্জীবিত রাজ্যের পদ্ম শিবির। পদ্ম নেতারা বলছেন, শাসকের বাধা উপেক্ষা করে মনোনয়নের চিত্র দেখে তাঁরা আশান্বিত।
পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election 2023) শেষ মুহূর্তের প্রচারে জোরকদমে মাঠে নেমে পড়েছে শাসক থেকে বিরোধী, সব দলই। জানা গিয়েছে, বিরোধী দল হিসাবে এবারে ৭৫ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে বিজেপি। তাতেই যেন খুশির হাওয়া দলের অন্দরে। একুশ সালের পর যত নির্বাচন হয়েছে, প্রায় সব কটাতেই বিজেপি তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছিল। সেই দিক থেকে পঞ্চায়েত ভোটে তাঁরা অনেকটাই এগোলেন বলে মনে করেছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।
বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, “আমাদের সাংসদ, বিধায়করা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে এবার মাঠে নেমেছেন। আমাদের সাংগঠনিক পারফর্মেন্সে আমরা সন্তুষ্ট। যদিও আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। এরপরও মনে রাখতে হবে, বহু ব্লকে বিজেপির রেজাল্ট অত্যন্ত ভাল হওয়ার কথা সেখানে আমরা প্রার্থীই দিতে পারলাম না। বসিরহাটের বিস্তীর্ণ জায়গা, দেগঙ্গার মতো জায়গায় আমরা মনোনয়ন দিতে পারিনি।”
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন বিজেপি ৫৬ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। জিতেছিল ১২ শতাংশ আসনে। এদিকে এর এক বছরের মাথায় হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পায় ১৮ সাংসদ। একুশের বিধানসভায় পায় ৭৭ জন বিধায়ক। তৃণমূল স্তর থেকে লড়াই শুরু করে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসাবেও উঠে এসেছে। এদিকে এর মধ্যে দলের মধ্যেই দফায় দফায় নেতৃত্ব বদল হয়েছে। কিন্তু, তারপরও দলের মধ্যে প্রায়শই মাথাচাড়া দিচ্ছিল আদি বনাম নব্যের দ্বন্দ্ব। অস্বস্তি বেড়েছিল দলীয় কর্মীদের। যদিও সেসব ভুলে বর্তমানে পুরোদমে পঞ্চায়েত ভোটে ঝাঁপাতে চলেছে বিজেপি। তারপরই রয়েছে চব্বিশের লোকসভা।
এদিকে এরইমধ্যে আবার বহু কর্মী সমর্থকই তৃণমূল সহ অন্যান্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। অনেকে প্রার্থীও হয়েছেন। এমতাবস্থায় কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন পঞ্চায়েত ভোটে জেতার পর তাঁরা সবাই দলে থাকবেন তো? নাকি যোগ দেবেন শাসকদলে। যদিও বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ স্তরের নেতারা বলছেন এর উত্তর দেবে সময়ই। আপাতত পাখির চোখ পঞ্চায়েত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের উপর রাজ্য নেতৃত্বের অনেকের ভাগ্য নির্ভর করছে। পঞ্চায়েতে ভাল না হলে রাজ্য নেতৃত্ব বেশ কিছু বড়সড় দলবদল হয়ে যেতে পারে। কারণ অবশ্যই নতুন উদ্যোমে লোকসভার লড়াই। এখন দেখার ১১ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের রেজাল্ট কী বলে।