কলকাতা: এ যেন শাঁখের করাত। না দিয়ে উপায় নেই। আর দেওয়ার পর সন্তানের আসক্তি ছাড়াতে কালঘাম ছুটছে বাবা-মায়ের। মোবাইলের হাত ধরে ইন্টারনেট দুনিয়ায় (Mobile Addiction in Students) সন্তানের লাগামহীন অবসরযাপন এখন ঘর ঘর কি কহানি। সেই অবসরযাপনে শাসনের ছড়িতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ছেলেমেয়ে। এই পরিস্থিতিতে সচেতনতার সরণি বেয়ে মোবাইলের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ কায়েমের কথা বলছেন মনোরোগের চিকিৎসকেরা।
মনোবিদরা বলছেন, মোবাইলের আসক্তি শৈশবকে আনস্মার্ট শুধু করছে না, ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকেও ঠেলে দিচ্ছে। সেই অন্ধকার থেকে আলোর পথে উত্তীরণ করার লক্ষ্যে মোবাইলের আসক্তি কাটাতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি ক্লিনিক চালু করল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স। আলোচনা সভায় বিশিষ্ট মনোরোগ চিকিৎসকদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন হেরিটেজ, জুলিয়ান ডে স্কুলের শিক্ষক পড়ুয়ারা।
হেরিটেজ স্কুলের স্টুডেন্টস কাউন্সিলর শ্রুতি চট্টোপাধ্য়ায় বলছেন, “বিগত কয়েক বছর ধরেই পড়ুয়াদের মধ্য়ে মোবাইলের প্রতি আসক্তি ক্রমেই বাড়ছে। পড়ুয়ারা নিজেই বলছে একটা সময়ের পর তাঁরা আর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তবে এক পয়েন্টে এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তা ওরা নিজেরাই অনুধাবন করতে পারছে। এর ফলে অনেক ছাত্রের মধ্যে কাজের ক্ষমতা, মেধা অনেক বেশি থাকলেও নির্যাসের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। মনোঃসংযোগে সমস্যা হচ্ছে। পড়াশোনা থেকে ওদের মন অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছি। কী করণে এটাকে রোধ করা যায় তাঁর কৌশল ঠিক করছি।”
অন্যদিকে পড়াশোনায় মনোযোগ কমার থেকেও বিপদ আরও গভীরে বলে মনে করছেন অভিভাবকেরা। শাসনে হচ্ছে হিতে বিপরীত। অভিভাবক সঞ্জয় বসু বলছেন, “ক্লাস সিক্স থেকে এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ইন্টারনেটের প্রতি ওদের আকর্ষণ দিনে দিনে আরও বাড়ছে। কিছুতেই ওদের আসক্তি কমছে না। ডাক্তারদের কাছে গিয়েও সবসময় সুরাহা হচ্ছে না। আমার মনে হয় এ বিষয়ে মা-বাবাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে।”
কিন্তু, মোবাইলের প্রতি এই আসক্তির কারণ কী? মোবাইলের দুনিয়া থেকে বেরিয়ে খেলার মাঠে যেতে ইচ্ছে করে না? এ প্রসঙ্গে জুলিয়ান ডে স্কুলের পড়ুয়া নীলাস্ক বসাকের উত্তর, “আমরা স্কুলে খুব বেশি হলে ৫-৬ ঘণ্টা থাকি। এখন অনেকেরই ছোট পরিবার। তাই অতিরিক্ত সময়ে অন্য কিছু করার সুযোগ না পেয়ে বাড়িতে একা থাকছে। সেই সময় মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমি দেখেছি আমার বন্ধুরা ফুটবল খেলছে। কিন্তু, খেলছে মোবাইলে। ওদের কখনও খেলার মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তাই অনেকে খেলতে চাইলেও খেলার সঙ্গী পাচ্ছে না।”
আসক্তি কাটাতে শাসনের থেকেও নিয়ন্ত্রণ বেশি জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ছোট পরিবারে বাবা-মা দু’জনেই ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে সময় কাটাতে মোবাইল-ল্যাপটপের হাত ধরে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভেসে যাচ্ছে সন্তান। ধৈর্যের ঘাটতির জেরে অনেক সময় মা-বাবাই সন্তানের হাতে কার্টুন দেখার জন্য মোবাইল হাতে তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু, হাতেখড়ির অভ্যাস মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে সবকিছুই তখন নিয়ন্ত্রণহীন। সেখানেই লুকিয়ে মূল সমস্যা।