কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক নির্দেশ ঘিরে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। গত আড়াই তিন বছরে একাধিক দুর্নীতি মামলায় তাঁর নির্দেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছে। একজন বিচারপতি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন বঞ্চিত, দুর্বলদের ‘কণ্ঠস্বর’। চাকরিপ্রার্থীরা বলেছেন, তিনি ‘ভগবান’, ‘মসিহা’।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেই বিচারপতি, যিনি ঘড়ির কাঁটা ধরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে সিবিআই দফতরে জেরার মুখে টেনে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি সেই বিচারপতি, যাঁর এক নির্দেশে বেনিয়মে পাওয়া চাকরি ছাড়তে হয়েছে সে সময়ের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়েকে।
আবার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্নের মুখে কম সময় পড়তে হয়নি কেন্দ্রীয় এজেন্সিকেও। তাঁকে সামনে রেখে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ হয়েছে, তাঁর উপর ভরসা রেখেই দিনরাত এক করে পথে বসে থেকেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিশ্বাস রেখেছেন, ন্যয় আসবে।
এক সময়ের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়েকে যেমন চাকরি ছাড়তে হয়েছে, একইভাবে যাঁর মামলায় সেই চাকরি হারাতে হয় সেই মামলাকারীকেও চাকরি হারাতে হয় যথাযথ প্রমাণ দেখাতে না পারায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই পদে আরেক যোগ্য প্রার্থীকে চাকরির নির্দেশও দিয়েছিলেন।
তবে একদিকে মামলাকারীদের যেমন ‘মসিহা’ হয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। একইভাবে হাইকোর্টের বিচারপতির সঙ্গে সংঘাতের ছবিও নজরে এসেছে। রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির অনিয়ম সংক্রান্ত এক মামলা। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। যে নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছিল বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ।
বিচারপতি সৌমেন সেনকে ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই সংঘাত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছে। শীর্ষ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করে তাতে। সেই বহু চর্চিত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৫ মার্চ মঙ্গলবার ইস্তফা দিলেন হাইকোর্ট থেকে। শোনা যাচ্ছে, এবার তিনি নাকি রাজনীতিতে যুক্ত হবেন। ভোটেও লড়তে পারেন।