কলকাতা: ব্যালট কীভাবে রাস্তায় গেল? বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে বিডিও বললেন, ‘আমার দায়িত্ব ছিল না।’ ভিডিয়ো ফুটজ দেখতে চাইলেন বিচারপতি। সেটাও নেই কমিশনের কাছে। হুগলির জাঙ্গিপাড়ার ঘটনা নিয়ে যে মামলা হয়েছিল, তার শুনানিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে কড়া ভর্ৎসনা করলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। কী ভাবে ব্যালট পেপার বাইরে এল? কেন এত অভিযোগ সামনে আসছে? কোথায় কমিশনের স্বচ্ছতা? এমনই সব প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি। এই মামলায় কমিশনকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি।
অভিযোগ ছিল, পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনার দিন রাস্তায় পড়েছিল কয়েকশো ব্যালট পেপার। সিপিএমে ভোট পড়া সেই সব ব্যালটে ছিল রিটার্নিং অফিসারের সই। বুধবার সেই সব ব্যালট পেপার পেশ করা হয় বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। এরপরই রিটার্নিং অফিসার এবং বিডিও-কে হাজিরার নির্দেশ দেন তিনি। বৃহস্পতিবার হাজিরা দেন তাঁরা। এদিন আদালতে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, একটা বা দুটো নয়, শয়ে শয়ে ব্যালট পেপার পড়েছিল রাস্তায়।
বিচারপতি রিটার্নিং অফিসারকে প্রশ্ন করেন, “কীভাবে বাইরে এল ব্যালট পেপার? আপনি এগুলো দেখেছেন? কাকে এগুলো ইস্যু করেছিলেন আপনি? প্রিসাইডিং অফিসারের সই আছে?” রিটার্নিং অফিসার উত্তরে জানান, প্রিসাইডিং অফিসারকে দেওয়া হয়েছিল ব্যালটগুলি। তাঁর মাধ্যমে সেগুলি পোলিং স্টেশনের বাইরে যেতে পারে। বিচারপতি জানতে চান, রিটার্নিং অফিসারের কি কোনও দায়িত্ব নেই? ওই বুথে কোনও ভয়ের পরিবেশ ছিল কি না, সেটাও জানতে চান বিচারপতি। রিটার্নিং অফিসার জানান, তেমন কোনও পরিবেশ ছিল না।
প্রিসাইডিং অফিসারের নাম সহ সব তথ্য জানতে চান বিচারপতি। সিসিটিভি ফুটেজও দেখতে চান তিনি। মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের দাবি, গণনার দিন এই ঘটনা ঘটে। কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি।
গণনার সময় কোনও বিরোধী দলের এজেন্ট ছিলেন কি না, কখন গণনা শুরু হয়েছিল? প্রার্থীদের এজেন্টরা কখন ঢুকেছিলেন? সে সব তথ্যও রিটার্নিং অফিসারের কাছে জানতে চান বিচারপতির। এই অভিযোগে কী ব্যবস্থাই বা নেওয়া হল? কমিশন জানিয়েছে, ১০০০ ব্যালট পেপারের মধ্যে ৪০০ ব্যালট ব্যবহার করা হয়নি। সেগুলির মধ্যেই কিছু বাইরে দিয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিশন।
কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। মৌখিক বক্তব্যে আইন অনুমতি দেয় না। এই প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য দাবি করেন, ব্যালট পেপার রাস্তায় যেভাবে রাস্তায় পড়েছিল, সে ক্ষেত্রে অভিযোগ করার দরকার হয় না। কমিশন ব্যবস্থা না নিলে আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া যেতে পারে।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, মৃত্যুর ঘটনা যে ঘটেছে সেটা অস্বীকার করতে পারবে না কমিশন। একজন প্রার্থী ৫ বছর ধরে কাজ করার পর তাঁকে জিততে এইভাবে কেন অশান্তি পাকাতে হবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ক্ষমতা দখলের জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রার্থীদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করে বিচারপতি বলেন, কমিশন কি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন এমনটা হয়েছে বা হচ্ছে?
কমিশনের আইনজীবী কিশোর দত্ত সওয়াল করতে শুরু করলে মাঝপথেই তাঁকে থামিয়ে দেন বিচারপতি।
কমিশনকে বিচারপতি সিনহা বলেন, আপনাদের অফিসার বলছেন যে ব্যালট রাস্তায় পড়েছিল। সেগুলোতে তাঁদের সইও ছিল। তারপরও কেন অস্বীকার করতে চাইছে কমিশন? বিচারপতি আরও বলেন, আদালত অনেক ধৈর্য ধরেছে। ব্যালট পেপার বাইরে! কোথায় নির্বাচনের স্বচ্ছতা?
এদিন ভিডিয়ো ফুটেজ এবং সিসিটিভি ফুটেজ জমা দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। বুথের ভিতরের ফুটেজ রেজিষ্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৬ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি। হাইকোর্টের বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং রেজিস্টার জেনারেলের বিশেষজ্ঞ টিম পুরো ভিডিয়ে খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দেবে।