কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে রাজ্যজুড়ে হইচই। আর সেই মামলায় ‘লাইম লাইট’ কেড়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু। কাকুর ‘গলা’ মেলাতে মরিয়া কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। সূত্রের খবর, কাকুও প্রস্তুত গলা দিতে। তবে এসএসকেএমের এমএসভিপির ভূমিকা এখানে বাধ সেধেছে বলেই ইডি বিশেষ আদালতের পর্যবেক্ষণ। আদালতের নির্দেশেও স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে তা। কথায় আছে, মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া করেগা কাজি? প্রশ্ন উঠছে, এমএসভিপি সত্যিই কি রাজি হননি সেদিন? না হলে বিশেষ কোনও কারণ কি এর নেপথ্যে? এরইমধ্যে আবার কার্ডিওলজির বিভাগীয় প্রধান দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়ও বুঝিয়ে দিয়েছেন, কাকু এসএসকেএমে ভর্তি না হয়ে একবালপুরের নার্সিংহোমেই থাকতে পারতেন। সব মিলিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এসএসকেএমের ভূমিকা নিয়েও।
ইতিমধ্যেই এই মামলায় এসএসকেএমের কার্ডিওলজির বিভাগীয় প্রধানের বয়ান রেকর্ড করেছে ইডি। কাকুর ভারে এবার চিকিৎসকদের অ্যাপ্রনেও কালির দাগ! দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্তদের মতো ডাক্তারেরও বয়ান পিএমএল আইনে (PMLA)। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই ফুঁসে উঠেছেন চিকিৎসকদের একাংশও।
এর আগেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল বা শাসকদলের অন্য নেতারা কোনও আইনি জটিলতায় জড়ানোর আবহে এসএসকেএমে ভর্তি হওয়ায় বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। আদালতে উঠেছে এই উৎকর্ষ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের নাম। ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। এই প্রথমবার আদালতের রায়ে এসএসকেএমের এমএসভিপির ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। নাম উঠে আসছে কার্ডিওলজি বিভাগীয় প্রধান দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়েরও।
চিকিৎসক দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় পিএমএলএ-তে যে বয়ান দিয়েছেন, সেখানে বলেছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র এই এসএসকেএম হাসপাতালে না ভর্তি হলেও পারতেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, তিনি নিজেও কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে রাজি ছিলেন। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র নিজেও মত দিয়েছিলেন। তবে এমএসভিপি পীযূষ রায় আপত্তি জানান বলে ইডির অভিযোগ। যদিও এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেন, “কোর্টের নির্দেশ মেনে চলব।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “রোগীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলার আমি কেউ নই। মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহে আমি আপত্তি জানানোর কে? কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”
চিকিৎসক সংগঠন এএইচএসডির নেতা উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এভাবে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখার কাণ্ডারীদের নাম জড়িয়ে যাওয়া আমাদের কাছে অত্যন্ত হতাশার, বিরক্তির।” অন্যদিকে প্রাক্তন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুনছি চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। তবে এরকম চাপ আসলে তো অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের লোক পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে এরপর। কারণ, নিরন্তর চাপ নিয়ে আর চাপ নিয়েও বদনাম হচ্ছেন। ডাক্তার সমাজ কলুষিত হয়ে যাচ্ছে এ ধরনের কাজে।”