কলকাতা: মালগাড়ির চালক সিগন্যাল ফেল করেছিলেন। তাতেই বড় বিপর্যয়। কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির তদন্ত শুরুর আগেই রেলবোর্ড তা ঘোষণা করে দিয়েছে। রেলবোর্ডের বক্তব্য, দুর্ঘটনা চালকের দোষে। রেলবোর্ড জানায়, মালগাড়ির চালক সিগন্যাল ভেঙে এগিয়ে যান। যদিও রেলেরই আরেকটি সূত্রে জানানো হয়েছে, ৯ লাল সিগন্যাল পেরোনোর ‘পেপার ক্লিয়ারেন্স’ দেওয়া হয়েছিল মালগাড়িকে। সোমবার সকাল থেকে সিগন্যালে ত্রুটি ছিল। দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়িটি যাওয়ার আগেও এই লাইন দিয়ে আরেকটি মালগাড়ি গিয়েছিল। তখনও সিগন্যাল বিভ্রাট ছিল, পেপার সিগন্যাল দেখানো হয়েছিল। কিন্তু রেলবোর্ডের রিপোর্টে সেই বিষয়টিও আড়াল করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরই মালগাড়ির জীবিত সহকারি চালককে মৃত ঘোষণা করেছে রেলবোর্ড। উল্লেখ্য, প্রথমে রেলের তরফে জানানো হয়েছিল, মালগাড়ির চালক ও সহকারি চালকের মৃত্যু হয়েছে। পরে জানা যায়, দুর্ঘটনায় কেবল মালগাড়ির চালক অনীল কুমারের মৃত্যু হয়েছে। সহকারি চালক মনু কুমার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু কেন রেলের তরফ থেকে প্রথমেই দুজনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আনা হল, কেন সঠিক তথ্য যাচাই না করেই সাংবাদিক বৈঠক করে সহকারি চালককেও মৃত বলে ঘোষণা করে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও একটি বিষয়, মৃত ব্যক্তির নামে FIR। প্রথম থেকেই মালগাড়ির চালককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে রেলবোর্ড। মঙ্গলবারই মালগাড়ির মৃত চালক ও সহকারি চালকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। এফআইআর দায়ের করেন এক আহত যাত্রী। কিন্ত চৈতালি দেব নামে এক যাত্রী এফআইআর দায়ের করেছেন বলে জানা যায়। পরে অবশ্য সামনে আসে অন্য তথ্য। অথচ সেই চৈতালি দেবই TV9 বাংলার সামনে বিস্ফোরক দাবি করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই এফআইআর-এর বিরুদ্ধে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরে বাড়ি ফেরেন। তিনি কোনও লিখিত অভিযোগ দায়েরই করেননি। ফলে সেখানেও ধন্দ।
সেই রেল বোর্ডের বয়ান যেন আদালতের রায়ের মতো! দুর্ঘটনার পরই রেলবোর্ডের চেয়ারপার্সন সাংবাদিক বৈঠক করে একেবারেই বিবৃতিই দিয়ে দিয়েছিলেন, মালগাড়ির চালকই সিগন্যাল ভেঙে এগিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু সিগন্যাল বিভ্রাটের কথা তখন প্রকাশ্যেই আনেননি। অনেকেই বলছেন, মালগাড়ির চালককে কার্যত দোষী ঠাওর করেই FIR করা হয়েছে! কীভাবে কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির তদন্ত শেষ আগেই রিপোর্ট, প্রশ্ন থাকছে তা নিয়েও।