‘আপনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক রয়েছে, অনুরোধ করছি সরে যান’, সরাসরি বিচারপতিকে বাণ মমতার আইনজীবীর

বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চেই চলছে মামলার শুনানি। আগের শুনানিতে মুখ্যমন্ত্রীকে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই অনুযায়ী আজ ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

'আপনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক রয়েছে, অনুরোধ করছি সরে যান', সরাসরি বিচারপতিকে বাণ মমতার আইনজীবীর
অলংকরণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Jun 24, 2021 | 1:13 PM

কলকাতা: হাইকোর্টে নন্দীগ্রামে ভোটের ফল বিষয়ক মামলার শুনানিতে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে সওয়াল করছেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভির। বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চেই চলছে মামলার শুনানি। আগের শুনানিতে মুখ্যমন্ত্রীকে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই অনুযায়ী আজ ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে নন্দীগ্রাম বিধানসভার ফল সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হয়।

♦ শুনানির শুরুতেই ক্ষুব্ধ বিচারপতি

শুনানির শুরুতে বিচারপতি কৌশিক চন্দ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে প্রশ্ন করেন, ‘‘১৮ জুনের আগে মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। তখন কেন এই মামলার নিরপেক্ষতা নিয়ে বলা হয়নি?” প্রধান বিচারপতির কাছে পুনর্বহালের জন্য রাজ্য আবেদন করায় কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি চন্দ।

♦ ডেকরাম জানতেন না? প্রশ্ন বিচারপতির

বিচারপতি প্রশ্ন করেন, কবে চিফ জাজের কাছে আবেদন করা হয়? সিঙ্ভি উত্তর দেন, ১৬ তারিখ। বিচারপতি তখন পাল্টা বলেন, “১৮ তারিখ আপনারা আমায় কেন কিছু বলেন নি? কোর্টের কাছে কেন আইনজীবী জানান নি? সারা দেশের কাছে কি দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন? ডেকরাম জানতেন না?”

সিঙ্ভি উত্তর দেন, “মামলাকারী জুডিশিয়াল সাইডেই করতে গেছি।” সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘আমরা জানতাম মামলাটি বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চে যাবে। হঠাৎ ১৬ জুন জানতে পারি আপনার বেঞ্চে এসেছে মামলাটি।’’

♦  মমতার হয়ে আদালতে সওয়াল সিঙ্ভির

সিঙ্ভি প্রশ্ন করেন, “আপনি শুনতে চান বা না চান? আমি বুঝতে পারছি না কেন নিয়ম মেনে বেঞ্চ বদল হবে না। এতে সমস্যা কোথায়? ” বিচারপতি কৌশিক চন্দ বলেন, “এখন আপনার আবেদন চিফের কাছে রয়েছে। আমি কী করতে পারি। সেটা আগে নির্ধারিত হোক।”

♦  আমি কি ছেড়ে দেব? আপনাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে: বিচারপতি

বিচারপতি বলেন, “সারা দেশে এটাই হয় আগে বিচারপতিকে জানাতে হয়। আপনারা আগে প্রশাসনিক স্তরে জানিয়েছেন। সিরিয়াস গিয়ার ইন কনস্টিটিউশন।” বিচারপতি আরও বলেন, “হাইকোর্টের প্রশাসনিক দিক দেখে অনেক কিছু। মামলার দুটি দিক রয়েছে। প্রশাসনিক ও বিচার সংক্রান্ত। কোন জাজ কী শুনবেন সেটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে চিফের ঘরে সিদ্ধান্ত হবে না আমি ছেড়ে দেব?”

এরপর মুখ্যমন্ত্রী আইনজীবী সিঙ্ভি কিছুটা সময় নেন। এরপর সিঙ্ভি জানান, মামলা অনত্র সরানোর জন্য তাঁরা আব্দেন করছেন। বিচারপতি জুডিশিয়ালি বিচার করতে পারেন। সেবিষিয়ে ফের মামলা হতে পারে।

♦  বিচারপতির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সিভ্ঙির

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী ব্যাখ্যা করতে থাকেন, কেন মামলা অন্যত্র সরানোর কথা বলেছিলেন। সিঙ্ভি বলতে থাকেন, কোথায় কোথায় কৌশিক চন্দকে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। কোন কোন অনুষ্ঠানে গিয়েছেন!

♦  ‘আপনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক রয়েছে’ বিচারপতিকে সিঙ্ভি

সিঙ্ভি বলেন, “এই মামলায় অপর পক্ষ বিজেপি। তাই বিচারপতি এই দলের মনোভাব হলে অসুবিধা।”

♦  আপনাকে কে বলল, লিগাল সেলের প্রধান ছিলাম? প্রশ্ন বিচারপতির

বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে নন্দীগ্রাম মামলার শুনানি হলে তা আদেও কতটা নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতার আইনজীবী। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “কোথা থেকে জানলেন আমি বিজেপির লিগাল সেলের প্রধান ছিলাম? আপনি কি জানেন বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে?”

সিঙ্ভি তখন বলেন, “আমার অনেক বন্ধু বিজেপিতে রয়েছে, আমি ভালো করেই জানি। বিজেপির বিভিন্ন ধরনের পরিষদ হয়। সেখানে কয়েকটি সভায় আমি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকও পেয়েছি।” পুরসভার নির্বাচন হয়নি সেই মামলায় কৌশিক চন্দ ছিলেন। এরপর সেই মামলার কথাও তুলে ধরেন সিংভি। অমিত শাহের র‍্যালি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন সিংভি। কৌশিক স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “এখন যখন ভাবি এই মামলাগুলো নিয়ে খুব আনন্দ হয়।”

♦  আপনাকে অনুরোধ করব মামলা থেকে সরে যান

এরপরই বিচারপতিকে এই মামলা থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনেক টুইটের কথা উল্লেখ করেন মমতার আইনজীবী। তুলে ধরেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের টুইট। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “অন্য বেঞ্চে মামলা সরানো নিয়ে আগের দিন শুনানির সময় কেন কিছু বলা হল না?”  চন্দ বলেন, “১৮ তারিখ একটা মামালা এল জাজের কাছে। তাঁকে কিছুই বলা হল না। অর্ডারও দেওয়া হয়নি। কিন্তু মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে গেল। আমি কি প্রভাবিত হয়ে যাব না জাজ হিসেবে?”

সিঙ্ভি উত্তরে বলেন, “একজন কাউন্সিল একজন মামলাকারী হিসেবে জিজ্ঞেস করছি রিকিউসাল পিটিশন নিয়ে কি বিতর্ক আরো বাড়াচ্ছেন না?” সিঙ্ভি আরও বলেন, “আমি বলছি, হতে পারে কিছু অভিযোগ অসত্য। কিন্তু কিছু প্রশ্ন উঠছে। সেটা বিচারপতির বিরুদ্ধে উঠছে। ”

♦ ভেবে দেখবার সময় চাইলেন বিচারপতি

এরপরই বিচারপতি বলেন, “আমায় ভাবার সময় দিন। দেখি কী করা যায়…” নন্দীগ্রাম মামলা হাই কোর্টের অন্য বেঞ্চে সরানোর আবেদন বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।