কলকাতা: ছোট লালবাড়ির লড়াইয়ের দামামা বেজে গিয়েছে। বৃহস্পতিবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশন কলকাতা পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ১৯ ডিসেম্বর ভোট হবে কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে। ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটপর্ব সম্পূর্ণ করবে কমিশন। যদি কোথাও পুনর্নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা থাকে তা হলে তা ২০ ডিসেম্বর হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোটের ফল প্রকাশ হতে পারে সম্ভবত ২১ ডিসেম্বর।
৪ হাজার ৭৪২টি মূল পোলিং বুথ রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ৩৮৫টি অক্সিলারি পোলিং বুথ। ৪০ লক্ষ ৪৮ হাজার ৩৫২ জন ভোটার রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন শুরু হয়ে গিয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১ ডিসেম্বর। স্ক্রুটিনি হবে ২ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৪ ডিসেম্বর।
শুক্রবারই বামেরা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। ১৫-১৬ টি আসনে অন্য দলকে সমর্থনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বামেদের তরফে। দিনভর বৈঠকের পর তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল। ১৪৪ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে শাসকদলের তরফে। শুরু জনসংযোগও।
রাজনৈতিকভাবে আগে কখনই সে ভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি রত্না চট্টোপাধ্যায়। পরে প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর শুরু তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। একদিকে যখন রাজনীতি থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছেন একসময়ের প্রথম সারির তৃণমূল নেতা শোভন, অন্যদিকে তখন সক্রিয় হচ্ছেন রত্না। বিধায়ক হওয়ার পর এবার কাউন্সিলরের দৌড়ে নামলেন তিনি। ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি হিসেবে কলকাতার মেয়র হয়েছিলেন শোভন। সেই ওয়ার্ডেই এবার তৃণমূলের টিকিট পেলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়।
বিস্তারিত পড়ুন: Ratna Chatterjee: ‘সব সময়ই মনে হত আমি কাউন্সিলর’, শোভনের ওয়ার্ডে টিকিট পেলেন রত্না
বাদ গিয়েছে পুরনো বেশ কয়েকজনের নাম। সেই তালিকায় রয়েছেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সীতা জয়সয়ারা, ২ নম্বর ওয়ার্ডে পুষ্পালি সিনহা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পার্থ মিত্র, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রণতি ভট্টাচার্য্য, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাধন সাহা, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে স্মিতা বক্সি, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে সুনন্দা গুহ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে স্বপ্না দাস, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে সত্যেন্দ্রনাথ দে, ১ নম্বর ওয়ার্ডে সঞ্চিতা মন্ডল, ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে কাইজার জামিল, ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইকবাল আহমেদ (সিনিয়র), ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে রতন মালাকার, ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডে মঞ্জুশ্রী মজুমদার, ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডে রতন দে, ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডে অর্চনা সেনগুপ্ত, ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে সুস্মিতা দাম, ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে মধুমিতা চক্রবর্তী, ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডে অশোকা মন্ডল, ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে শিপ্রা ঘটক, ১৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে তপশিরা বেগম, ১৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে আফতাব উদ্দিন আহমেদ, ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডে মমতাজ বেগম।
প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগে থেকেই বেশ কিছু জায়গায় দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছিল শাসক দল তৃণমূল। অবশেষে শুক্রবার দিনভর জল্পনার পর প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হল। ৪ জন বিধায়কের নাম নিয়ে জল্পনা ছিল। ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতির কথা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। তাই ফিরহাদ হাকিম সহ ৪ বিধায়ককে পুরভোটে টিকিট দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, প্রশাসক মণ্ডলীতে থাকা ৪ বিধায়কের পাশাপাশি আরও ২ বিধায়ককে প্রার্থী তালিকায় জাগয়া দেওয়া হয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন: TMC Candidate List: ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি দূরে সরিয়েই ৬ বিধায়ককে টিকিট দিলেন মমতা
১৪৪ টি আসনের মধ্যে ৮৭ জনকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ জন নিজের ওয়ার্ডেই টিকিট পাচ্ছেন, বাকিদের ওয়ার্ড বদল হয়েছে। টিকিট পাননি ৩৯ জন। বিভিন্ন কারণে তাঁদের বাদ দিয়েছে দলীয় নেতৃত্ব। বয়স, দুর্নীতির মতো কারণেই তাঁদের নাম বাদ পড়েছে বলে সূত্রের খবর। ৩৯ জনকে টিকিট দেওয়া হয়নি অর্থাৎ সেখানে নতুন প্রার্থীর নাম থাকছে। পাশাপাশি যে ওয়ার্ড গুলিতে তৃণমূল ক্ষমতায় নেই, সেখানে আরও ১৮ জন নতুন প্রার্থীর নাম বলা হবে। অর্থাৎ এবার কলকাতা পুরসভার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় মোট ৫৭ জন নতুন প্রার্থী স্থান পাচ্ছেন। সংখ্যালঘু প্রার্থী থাকছেন ২৩ জন ও ৪৫ শতাংশ মহিলা টিকিট পেয়েছেন।
বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ঝুলিতে আসেনি কোনও আসন। তরুণ মুখ সামনে এনেও কোনও আশার আলো দেখতে পায়নি আলিমুদ্দিন। কিছুদিন আগে উপ নির্বাচনে সেই বামেদের ফল আলোচিত হয়েছে। না জিতলেও বেশ কয়েকটি আসনে ভোট শতাংশ বাড়িয়েছে তারা। আর এবার পুরভোট। রণকৌশল বদলে, আবারও সর্বশক্তি নিয়ে ময়দানে নামছে বাম শিবির। অন্যান্য দলের আগে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে চমক দিয়েছে বামেরা। নগরবাসীকে কোন কোন পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে চায় তারা, এবার সামনে এল সেই তথ্য।
বিস্তারিত পড়ুন: KMC Election 2021: নয়া অ্যাপে আপনিও হতে পারেন ‘গ্রিন অ্যাডমিন’! কী চমক থাকছে বামেদের ইস্তাহারে?
পুরভোটে তৃণমূল ও বিজেপিকে হারানোই বামেদের মূল লক্ষ্য। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই এই বার্তা স্পষ্ট করল বাম নেতৃত্ব। শাসক দল ও গেরুয়া শিবিরকে পরাজিত করার জন্য কিছু আসনে অন্য দলকে সমর্থন করার বার্তা দিয়েছে বামেরা। সেই তালিকায় কংগ্রেস, আইএসএফও থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক কল্লোল মজুমদার। গতকালই কলকাতা পুরসভার ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আর তারপর সবার আগেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বাম শিবির। বেশির ভাগ আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে তারা।
পড়ুন বিস্তারিত : CPIM Candidate List: তৃণমূল-বিজেপিকে হারানোই লক্ষ্য! কিছু আসনে অন্য দলকে সমর্থনের বার্তা বামেদের
পুরভোটের লড়াই শুরু। প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বামেরা। ১৫ বা ১৬ টি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে না বামেরা। ওই আসনগুলিতে অন্য দলকে বামেরা পূর্ণ সমর্থন করবে বলে জানানো হল সাংবাদিক বৈঠকে। কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক কল্লোল মজুমদার প্রকাশ করলেন প্রার্থী তালিকা।
তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতে পারে শুক্রবারই। কালীঘাটে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। এদিনই তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান। সূত্রের খবর, তালিকা চূড়ান্ত করার আগে পিকের সঙ্গে কথা বলবেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেবে বিজেপি। এলাকার স্থানীয় লোক, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে বিজেপির কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত, এমন ব্যক্তিদের অগ্ৰাধিকার দেওয়া হবে। জনপ্রিয় কোনও নেতা খুব বেশি থাকছে না প্রার্থী তালিকায়। তবে সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিদের রাখার চেষ্টা করা হবে। পুরনো আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যদেরও প্রার্থী করার ভাবনা রয়েছে বিজেপির।
সবিস্তারে পড়ুন: পুরভোটে স্থানীয় নেতাদেরই অগ্রাধিকার, পুরনো আরএসএস কর্মীদেরও জায়গা দেবে বিজেপি!
পুরভোট নিয়ে মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্ট। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় রাজ্য বিজেপি। শুক্রবার দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে রাজ্য সরকার চালায়। সে কারণেই পুরভোটের বিষয়টি নিয়ে আদালতে শুনানি চললেও কমিশনকে ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করতে হল। একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, তৃণমূল কলকাতা দখলে এতটাই মরিয়া, পুনর্নির্বাচনের সময় পর্যন্ত রাখতে চায়নি।
সবিস্তারে পড়ুন: ‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনটা তো রাজ্য সরকারই চালায়’, সকাল সকাল তোপ দিলীপ ঘোষের
শুক্রবারই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারে। অন্যদিকে এদিনই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে বামফ্রন্টও। কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন থেকে এই তালিকা প্রকাশ করবে। বামেদের প্রার্থী ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সিপিএমের হাতে থাকতে পারে ৮০ থেকে ৮৫টি ওয়ার্ড। এরপরই ফরওয়ার্ড ব্লকের নাম রয়েছে। ১০ থেকে ১২টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারে ফব। সিপিআই ৮ থেকে ১১টি ওয়ার্ডে তাদের সংগঠনের মুখকে তুলে ধরতে পারে। আরএসপি দিতে পারে ৯ থেকে ১১টি জায়গায়। গতবার পুরভোটে জেতা কাউন্সিলরদের মধ্যে ৫০ শতাংশকে টিকিট দেওয়া হবে বলে বামফ্রন্ট সূত্রে খবর। প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ আসতে পারে ৫৫ শতাংশ। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একুশের বিধানসভা ভোটের মতোই প্রাধান্য দেওয়া হবে তরুণ মুখকে।
সবিস্তারে পড়ুন: আজই প্রার্থী তালিকা বামেদের, তৃণমূলেও নাম ঘোষণার সম্ভাবনা
বৃহস্পতিবার সকালেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতায় ভোট হবে ১৯ ডিসেম্বর। তবে ভোটের গণনা কবে তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। দুপুরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন ২১ ডিসেম্বর সম্ভবত গণনা হতে পারে। তবে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে গোটা ভোট প্রক্রিয়া শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিন থেকেই নির্বাচনের আদর্শ আচরণ বিধি বলবৎ হয়ে গিয়েছে কলকাতায়।