দরজায় কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই রাজ্যের শেষ বড় নির্বাচন। তাই রাজ্য-রাজনীতির পারদ ছাপিয়ে যাচ্ছে তাপমাত্রার পারদকেও। ভোট-আবহে কেউ বিক্ষুব্ধ, কেউ অভিমানী। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। আবার তাঁদের আশ্রয় দিতে দরজা খুলে দিচ্ছেন অন্যরা। উত্তরের জলপাইগুড়ি থেকে দক্ষিণের মুর্শিদাবাদ, সর্বত্রই দলবদলের ছবি।
মঙ্গলবার সারাদিনের দিন-বদলের হিসেব:
বাংলার রাজনীতির ভরকেন্দ্র বলে পরিচিত নন্দীগ্রামেও দলবদলের হিড়িক। শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে কিছুদিন আগেই পায়ে হেঁটে পৌঁছেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই এবার শাসক শিবিরে ভাঙন। মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিল শতাধিক পরিবার। তৃণমূল বলছে, ‘ওরা স্বার্থসিদ্ধির জন্য দল ছেড়েছে।’
বালুরঘাটে শাসক শিবিরে ভাঙনের ছবি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বালুরঘাটে বিজেপির জেলা কার্যালয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন ২০ জন। বালুরঘাটের সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এদিন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা কর্মীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন। দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকা তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে।
তৃণমূলের পুরনো নেতাদের নতুনরা যোগ্য সম্মান দিচ্ছে না, এই অভিযোগেই তৃণমূল ছেড়েছেন বলে দাবি ওই কর্মীদের। অন্যদিকে সুকান্ত মজুমদারের দাবি, এই যোগদানের ফলে ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির জয় আরও সুনিশ্চিত হল।
উত্তরের এই জেলায় তো সাড়া ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা। যাঁর হাত ধরে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন পঞ্চায়েত সদস্য। এবার সেই তৃণমূল নেতাকে সঙ্গে নিয়ে ফের বিজেপিতে পঞ্চায়েত সদস্য অঞ্জলি সরকার। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বিবেকানন্দ পল্লি এলাকার বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য অঞ্জলি সরকার, তাঁর স্বামী প্রশান্ত সরকার-সহ শতাধিক মানুষ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন মঙ্গলবার।
বিজেপির ফল ভাল না হওয়ায় ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন অঞ্জলি। এরপর প্রায় দু বছর কেটে গেলেও এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। সেই অভিযোগ তুলেই মঙ্গলবার দুপুরে অনুগামীদের নিয়ে ফিরলেন বিজেপিতে। সুমন রায় নামে যে নেতার হাত ধরে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তিনিও এদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
দক্ষিণের পর উত্তর দিনাজপুরেও ঘর ভাঙল শাসক দলের। রায়গঞ্জ ব্লকের শীতগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধান, স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সহ শতাধিক নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দিলেন। বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার এদিন তাঁদের হাতে পতাকা তুলে দেন। বারবার “চোর চোর” স্লোগান শুনতে হয়, সে জন্যই নাকি দলবদল, জানিয়েছেন তাঁরা।
এবার আসা যাক অধীর-গড়ে। গত কয়েকদিনে মুর্শিদাবাদ জেলায় দলবদল হয়েছে অনেক। এবার খড়গ্ৰামে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য, বুথ সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সহ কয়েকশো কর্মী সমর্থক তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের হাত ধরলেন। পারুলিয়া ,কীর্তিপুর, ঝিল্লি,- এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক নেতা-কর্মী এদিন কংগ্রেসের দলীয় পতাকা হাতে তুলে নেন।
কেষ্ট গড়েও একই ছবি। তৃণমূল ছেড়ে সিপিএমে যোগ দিলেন প্রায় ৪০ জন কর্মী-সমর্থক। ঘটনাটি বীরভূমের নলহাটির বাঁন্দখেলা গ্রামের। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন বামফ্রন্টের সারা ভারত কৃষক সভার নলহাটি ২ ব্লকের সম্পাদক তথা সিপিএমের বীরভূম জেলা কমিটির সদস্য খাইরুল হাসান।
প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের সঙ্গ ছেড়ে কংগ্রেসকে বেছে নিলেন মালদহের মানিকচকের একাধিক নেতা-কর্মী। যাঁরা তৃণমূল ছাড়লেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন, মালদহ জেলা কমিটির প্রাক্তন সহ-সভাপতি তথা মানিকচকের তৃণমূল নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন, এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মহম্মদ মাজিরুদ্দিন-সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা এবং দুই শতাধিক কর্মী।