কলকাতা: আপাতত নারদ মামলায় ধৃত চার নেতাকে গৃহবন্দি করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। বাড়ি থেকেই প্রশাসনিক কাজ করতে পারবেন পরিবহন মন্ত্রী তথা পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শুক্রবারের শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির মধ্যে রায় নিয়ে মত পার্থক্য হওয়ায় এই মামলা উচ্চতর বেঞ্চে যাচ্ছে।
গত কয়েকদিনে নাটকীয় মোড় নিয়েছে বছর পাঁচেকের পুরনো নারদ মামলা। এই নিয়ে দ্বিতীয় দিনে পড়ল হাই প্রোফাইল সেই মামলার শুনানি। গত সোমবার পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র ও আর এক নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে এসএসকেএম নিয়ে যাওয়া হয় সুব্রত, মদন, শোভনকে। অন্য দিকে প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। গত বুধবার এই মামলার প্রথম শুনাই ছিল হাইকোর্টে। সে দিন ৪ নেতার জামিন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার অনিবার্য কারণ বশত শুনানি স্থগিত হয়ে যায়। আজ, শুক্রবার ফের শুনানি হয় হাইকোর্টে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলে। সিবিআইয়ের তরফে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ও অভিযুক্তদের পক্ষে সওয়াল করেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি।
চারজনকে হাউজ অ্যারেস্ট করা হোক: তুষার মেহতা
‘এরা যা কিছু করতে পারে। মামলা খুবই গম্ভীর। চারজনকে হাউজ অ্যারেস্ট করা হোক।’ শুনানির শুরুতেই সিবিআই-এর পক্ষে সেই সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর দাবি, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দিলে মামলা প্রভাবিত করতে পারেন নেতারা।
স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না: সিঙ্ঘভি
আগেও অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, তাঁর মক্কেলরা হয় মন্ত্রী, নাহয় বিধায়ক। তাঁদের কোথাও পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আজও সেই একই সওয়াল করলেন তিনি। বললেন, ‘এরা কেউ মন্ত্রী, কেউ বিধায়ক, কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাহলে কেন গ্রেফতার?’ তবে সিবিআই-এর গৃহবন্দি করার সওয়ালে তিনি দাবি করেন যাতে স্বাধীনতার বিষয়টাতে নজর দেওয়া হয়। গৃহবন্দি করা হলে অভিযুক্তদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে বলে মনে করেন তিনি।
দুই বিচারপতির মতপার্থক্য:
এক বিচারপতি জামিনের কথা বললেন। অন্য জনের মত গৃহবন্দি রাখার পক্ষে। নারদ মামলার শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চে দুই বিচারপতির মতপার্থক্য তৈরি হয়। বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযুক্তদের জামিনের পক্ষে ও বিচারপতি জে বিন্দল গৃহবন্দি করার পক্ষে। এই অবস্থায় উচ্চতর বেঞ্চে মামলা নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘দুই বিচারপতির মতভেদ হলে তৃতীয় বিচারপতির কাছে যাবে মামলা। এটাই হওয়া উচিত।’
গৃহবন্দি হয়ে কীভাবে কোভিড সামলাবেন ববি?
ফিরহাদ হাকিম কলকাতার পুর প্রশাসক। তাই কোভিড পরিস্থিতিতে তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসছে। আজ আদালতেও ফের উঠল সেই সওয়াল। আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২৪ ঘন্টা কোভিডের কাজে নিবদ্ধ ববি। কলকাতার যে কেউ সমস্যায় পড়লে ববির ফোনে সমাধান মেলে। ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন তিনি। তাঁর দাবি, উচ্চতর বেঞ্চ যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেটা দ্রুত হোক। আজই হোক সেই শুনানি। হাউজ অ্যারেস্ট করলে ফিরহাদ হাকিম আর সুব্রত মুখোপাধ্যায় যাতে সব কাজ করতে পারে তার আর্জি জানানো হবে।