কলকাতা: শাস্ত্র মতে গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিস, পবিত্র গঙ্গার জল আর নিষিদ্ধপল্লীর মাটির মিশ্রণে তৈরি হয় দেবী দুর্গার মাতৃমূর্তি। নিষিদ্ধপল্লীর মাটি ছাড়া গড়া যায় না মায়ের কায়া। যে নিষিদ্ধপল্লীকে তথাকথিত সমাজ দূরে সরিয়ে রাখে সেই যৌন কর্মী ও তাঁদের সন্তানদের নিয়েই বছরের পর বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে উত্তর কলকাতার রমেশ দত্ত স্ট্রিটের সর্বজনীন।
এই বছর ৭৮ তম বর্ষে পদার্পণ করল এই পুজো। উত্তর কলকাতার আনন্দ মন্দির এই পুজো পর্যালোচনা করে থাকে। একদিকে নিষিদ্ধ পল্লী, অন্যদিকে বস্তি! আর্থিক সঙ্গতি খুব বেশি না থাকায় পুজো করতে একটু অসুবিধা হয়। অনেক সময় নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করেই পুজো করতে হয়। তবুও বন্ধ হয়নি। সাধারণ পরিবার, যৌনকর্মীদের পরিবার মিলিতভাবে এই পুজো করে থাকেন। অংশ নেন অঞ্জলিতে, বিসর্জনে।
এই বছর দোতলা বাড়ির আদলে মণ্ডপটি তৈরি করা হয়েছ। অস্ত্র ধারণ করে মাতৃপ্রতিমা বধ করছেন অসুরকে। ইতিমধ্য়েই পুজোর ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। এখনও পড়ে রয়েছে পুজোর চারটে দিন। ভিড় যে আরও বাড়বে তা এক কথায় মেনে নিচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তা চন্দন খাঁ, সিদ্ধার্থ সরকার, কুন্দন শর্মা ও শঙ্কর সরকাররা।
১৯৯২ সালে যৌন কর্মীদের সন্তান, স্থানীয় বস্তির সন্তানদের ১০ জনকে নিয়ে অবৈতনিক কোচিং ক্লাস শুরু করে এই আনন্দ মন্দির। আজ সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩০। প্রতিদিন এই ক্লাব শিশুদের সর্বতভাবে বড় করার জন্য কঠোর অধ্যাবসায় করে চলেছে। শুধু পড়াশোনা নয়, সামাজিক উন্নয়নের জন্যও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাঁর। কখনও রক্তদান শিবির, শিশুদের পোলিও খাওয়ানো, কখনও বা বিনামূল্যে চিকিৎসা! সব কিছুতেই এগিয়ে আসেন এখানকার কর্মীবৃন্দ।
এখান কার এক পড়ুয়া ইউনিসেফ (UNICEF) এর অনুষ্ঠান ‘ভয়েস অব চিলড্রেন’-এও অংশ গ্রহণ করেছিল। আনন্দ মন্দির প্রতিদিন-প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে যৌন কর্মীদের সন্তানরাও বড় পেশায় নিযুক্ত হয়। সামাজিক দায়িত্বভার গ্রহণ করে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে তাঁরাও সমাজ গঠনের কারিগর হয়ে ওঠে।