সিজার মণ্ডল, কলকাতা: গরু পাচার মামলার তদন্তে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি ও সিবিআই। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বহু ব্যক্তিকে। বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে এই মামলায় গ্রেফতারও করা হয়েছে। সেই মামলাতেই এবার সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতেও নাকি লগ্নি করা হয়েছে গরু পাচারের টাকা! সিআইডি-র হাতে আসা নথি থেকে সেই তথ্য স্পষ্ট হচ্ছে। গরু পাচার মামলায় সম্প্রতি চার্জশিট পেশ করেছে সিআইডি। এনামুলের তিন ভাগ্নের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছে সিআইডি। চার্জশিটেই দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে লগ্নি করেছে ভাগ্নেদের সংস্থা। গরু পাচারের টাকাই লগ্নি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
সিআইডি চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, এনামুলের ভাগ্নের সংস্থা জে এইচ এম গ্রুপকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে। সিআইডি যে নথি উদ্ধার করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণে পাথর কুচি সরবরাহ করেছে ওই সংস্থাই। শুধু পদ্মা সেতু নয়, বাংলাদেশের একটি পরমাণু প্রকল্প ও একটি রেল প্রকল্পে লগ্নি করেছে বলেও দাবি গোয়েন্দাদের। মূলত বীরভূম ও ঝাড়খণ্ড থেকে পাথর সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি। চট্টগ্রাম বন্দরে পাথর নিয়ে পৌঁছেছিল জাহাজ। একেকটি জাহাজে ছিল ৫ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন পাথর। তবে পাচারের টাকা যে লগ্নি করা হচ্ছে, তা বাংলাদেশের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।
সিআইডি-র দেওয়া তথ্যে উল্লেখ, কলকাতার একাধিক বড় নির্মাণ সংস্থার সঙ্গেও চুক্তি হয়েছিল ওই গ্রুপের, মিলেছে সেই নথিও। কোলেট নামে একটি কোম্পানির আড়ালে নির্মাণ ব্যবসায় লগ্নি করা হত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। শুধু পাথর নয়, সিআইডি সূত্রে খবর, উদ্ধার হয়েছে বালি ব্যবসার নথিও। বাঁকুড়ায় বালি খাদানের ইজারা পেয়েছিলেন এনামুলের তিন ভাগ্নে জাহাঙ্গির আলম, হুমায়ুন কবির এবং মেহদি হাসান। আগেই অভিযোগ উঠেছে, গরু পাচারের টাকা থেকে লভ্যাংশ হিসেবে কোটি কোটি টাকা পেতেন তাঁরা।
২০১৮ সালে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন এনামুল হক। অভিযোগ, এরপরই বাংলাদেশ এবং দুবাইতে টাকা সরাতে শুরু করেন এনামুলের ভাগ্নেরা। বাংলাদেশে কয়লা আমদানির ব্যবসাতেও টাকা লগ্নি করা হয়েছিল বলে দাবি সিআইডি-র। এদিকে, গরু পাচার নিয়ে সিবিআই ও ইডি-র তৎপরতা বাড়তেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এনামুলের ওই তিন ভাগ্নে। সিআইডি চার্জশিটে উল্লেখ, দুবাইতে ফ্ল্যাট কিনে সেখানেই পাকাপাকিভাবে রয়েছেন তিন ভাই। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নিজেদের স্ত্রী এবং ছেলেদের নামে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
২০২০ সালে এনামুল এবং তার ভাগ্নেদের বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের অফিসে হানা দেয় ডিআরআই (Directorate of Revenue Intelligence)। তখনই ধরা পরে এনামুলের ভাগ্নেদের সংস্থা থেকে হাওয়ালার মাধ্যমে বাংলাদেশে এবং দুবাইতে টাকা পাচার চলে। প্রশ্ন উঠছে, তারপরও কীভাবে দেশ ছাড়লেন তিন ভাই?
এবার ইডি-র নজর সেই তিন ভাগ্নের দিকে। তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে সিআইডি, জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানাও। কোনও প্রভাবশালীর হাত ধরেই কি এভাবে বালি, পাথর এবং নির্মাণ ব্যবসায় লগ্নি করতেন তাঁরা? সেটাই খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাও। এবার ইডি-র নজরেও ওই তিনজন। জানা যায়, এ রাজ্যে ইস্পাত কারখানা খোলার পরিকল্পনাও ছিল ভাগ্নের। তৈরি হয়েছিল জে এইচ এম ইস্পাত নামে একটি সংস্থা।