কলকাতা: ২১ জুলাই ২০২২। শহিদ মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে সিঁদুরের মেঘ দেখেছিলেন, তার ঠিক দু’দিন পরই তৃণমূলের সেনাপতির আশঙ্কা সত্যি করে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দুয়ারে টোকা মেরেছিলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সে সময় ছিলেন সরকারের শিল্পমন্ত্রী এবং দলের মহাসচিব। সেই মন্ত্রীর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। যেখানেই টোকা মারা হচ্ছে থরে থরে বের হচ্ছে গান্ধী মার্কা নোট। সাম্প্রতিক অতীতে এত কোটি টাকা চাক্ষুষ করার স্বাদ বাঙালি কখনও পেয়েছিল কিনা মনে করতে পারছিলেন না কেউ। এরপর শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন প্রথম কোনও এক হেভিওয়েট নেতা। বান্ধবী অর্পিতারও ঠাঁই হয় শ্রীঘরে। বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন এক নজিরবিহীন অধ্যায়ের ‘বর্ষপূর্তি’ আজ। এই এক বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন আরও অনেক রাঘব-বোয়াল। আদালতও শুনিয়েছে একের পর এক রায়। এই এক বছরে কোথায় দাঁড়িয়ে পার্থ-অর্পিতা, বাংলা যাঁদের ‘অপা’ নামে চেনে।
সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত পার্থ-অর্পিতার কাছ থেকে ১১১ কোটি টাকা নগদ ও বেশ কিছু স্থাবর সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে ইডি প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতির যে মামলা করেছে তাতে চারটি চার্জশিট ফাইল হয়ে গিয়েছে। প্রতিটাতেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রধান অভিযুক্ত ও সহযোগী হিসাবে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম দেখানো হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ৬টি এফআইআর করেছে সিবিআই। যার মধ্যে গ্রুপ-সি মামলাতেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিং-পিন হিসাবে নাম রয়েছে পার্থর।
অর্থাৎ, দুই সংস্থাই নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে পার্থকে মাস্টারমাইন্ড হিসাবে দেখিয়েছে। এদিকে সিবিআই ও ইডি বারবার দাবি করছে এখনও বাকি অনেক তদন্তই। কারণ, এর পিছনে আরও বড় মাথা রয়েছে। সূত্রের খবর, ইডি-র দাবি নিয়োগ দুর্নীতিতে কমপক্ষে সাড়ে তিনশো কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১২৬ কোটির সামান্য বেশি কিছু টাকা তাঁরা উদ্ধার করেছেন। তাঁদের সন্দেহ আরও একশো কোটি টাকার বেশি কোনও ব্যক্তির কাছে গিয়েছে। সেই কিংপিন কে তাই খোঁজার চেষ্টা চলছে। কিছুদিন আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও সেই মাথার কথা বলেছিলেন। একই সুর শোনা গিয়েছিল বিচারপতি অমৃতা সিনহার কণ্ঠেও। সেই তদন্তই এখনও চলছে। যার গতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে।
ইডির দাবি, তদন্তে সবথেকে বেশি পার্থর বিরুদ্ধে গিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠদের বয়ান। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বয়ানও পার্থকে আরও বিপদে ফেলেছে। তাঁর জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যকে পিংলার স্কুল নিয়ে অন্তত চার দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তাঁর বয়ানও গিয়েছে পার্থর বিরুদ্ধে। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায় তদন্তের গতিপ্রকৃতি।