Building Collapse: বুক ফাটা কান্না আর হাহাকারের মধ্যেই নতুন সূর্য্যোদয়, কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন আহিড়িটোলার প্রসুতি
RG Kar Medical College and Hospital: গঙ্গা দেবীকে নতুন করে বাঁচার আলো দেখাচ্ছে নবজাতক। আজই হাসপাতালে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি।
কলকাতা: এ যেন নতুন সূর্যোদয়। চারিদিকে যখন মিশমিশে অন্ধকার, তার মধ্যে থেকে যেন একটি সূক্ষ্ম আশার আলো। নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। আহিড়িটোলায় বাড়ি ভেঙে আজ সকালেই ছোট্ট মেয়েকে হারিয়েছেন গঙ্গা ঘড়াই। মেয়ে হারানোর যন্ত্রণা তাঁর চোখে মুখে স্পষ্ট। এরই মধ্যে গঙ্গা দেবীকে নতুন করে বাঁচার আলো দেখাচ্ছে নবজাতক। আজই হাসপাতালে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি।
দিনের আলো তখনও ফোটেনি। আহিড়িটোলার বাড়িতে সবাই ঘুমোচ্ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধংসস্তুপের তলায় চাপা পড়েন ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা গঙ্গা ঘড়াই। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাঁদের দোতলা বাড়ি। দুর্ঘটনায় নিজের তিন বছরের মেয়েকে হারিয়েছেন গঙ্গা।
গঙ্গাকে উদ্ধারের পর তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর মেডিকেল কলেজে। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। আজ বিকেলে সেখানেই কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি।
বিপর্যয়ের মধ্যও জীবনের জয়গান। হাসপাতাল সূত্রে খবর, গঙ্গা ঘড়াই এবং সদ্যোজাত দু’জনেই ভাল রয়েছে। উভয়ের শারীরিক অবস্থাই স্থিতিশীল। সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের ওজন ২ কেজি ৮০০ গ্রাম বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মা গঙ্গা ঘরাইয়ের দু পায়ে আঘাত রয়েছে। অস্থি বিভাগের চিকিৎসকেরা মা’কে দেখে এক্স-রে করানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সদ্যোজাতেরও এক্স-রে হবে। দু’জনই আপাতত ভাল রয়েছেন। মা এইচডিইউয়ে চিকিৎসাধীন। সদ্যোজাতকে বেবি নার্সারিতে রাখা হয়েছে।
আজ সকালে বাড়ির ধ্বংসস্তুপের ভিতর থেকে তিন বছরের শিশুকে উদ্ধার করে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। আর সেই দিনেই বিকেলে কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন গঙ্গা ঘড়াই।
প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টা ব্যর্থ হয় । ইটের পাজর, ধ্বংসস্তূপের বাইরে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন পরিবার। হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন মা। আপ্রাণ লড়াই করছিলেন দমকল, পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সদস্যরা।
ইটের পাজরের নিচে তখন চাপা পড়েছিল তিন বছরের ছোট্ট শিশু। সাত ঘণ্টার এক টানা লড়াইয়ে আহিরীটোলার ভেঙে পড়া দোতলার বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় সেই শিশু। দমকল কর্মীরা শিশুটিকে একটা বস্তায় শুইয়ে বাইরে নিয়ে আসেন।
তখনই সন্দেহ হয় পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের। কিন্তু উদ্ধারকর্তারা প্রকাশ্যে কিছুই বলেননি তখন। চাদরে পেঁচিয়ে বস্তার করে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয় অ্যাম্বুলেন্সে। উদ্ধারের ধরন দেখে কিছুটা বিপদ আঁচ করতে পারছিলেন প্রতিবেশীরা। বুক ফাঁটা কান্নায় ভেঙে পড়েন মাও। তিনি যে তখনও বাইরে প্রতীক্ষারত। হাসপাতালে নিয়ে যেতেই চিকিত্সকরা নিশ্চিত করেন মৃত্যুর খবর। আর তারপর আজ বিকেলে সদ্যোজাতের জন্ম দিলেন গঙ্গা দেবী।