কলকাতা: গত ৮ অগাস্টের মধ্যরাতের ঘটনা। যে ঘটনায় তোলপাড় গোটা বাংলা। আন্দোলনের রেশ দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছেছে। কলকাতার বুকে হয়েছে গণঅভ্যুত্থান। ক্রাইম সিন ৮ অগাস্টের আরজি করের সেমিনার রুম। সেই রাতে সেমিনার রুমে তিলোত্তমার ওপর ঠিক কত জন অত্যাচার চালিয়েছিলেন? ধৃত সিভিক ভলান্টিয়র কি একাই নাকি ছিলেন আরও কেউ? বিশিষ্ট চিকিৎসকদেরও অনেকে মনে করেছেন, এই ঘটনায় একজন নয়, আরও অনেকেই জড়িত থাকতে পারে। এই মামলার সূত্র এখনও অধরা। ঘটনার দেড় মাস পর সামনে এক বিস্ফোরক বয়ান। যা ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এবার মুখ খুললেন সেই রাতে চিকিৎসাধীন এক রোগীর পরিবার।
সেমিনার রুমেই উদ্ধার হয়েছিল তিলোত্তমার দেহ। আর ঠিক সেই রুমের উল্টোদিকেই স্লিপ স্টাডি রুম। ঘটনার রাতে ১টা পর্যন্ত সেমিনার রুমের উল্টোদিকের ঘরে স্লিপ স্টাডি রুমে ছিলেন আরজি করে চিকিৎসাধীন রোগী মিঠু দাস। মিঠুর ছেলের দাবি, ঘটনার রাতে ১ টা পর্যন্ত নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী-সহ অন্তত ৭ জন জেগে ছিলেন। মিঠুর স্লিপ স্টাডি পরীক্ষা হয় রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। সেই সূত্রে সেখানে অনেকেই ছিলেন।
তারপর সেমিনাররুমে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। মিঠু দাসের ছেলে সায়ন বলেন, “স্যর বলেছিলেন, সন্ধ্যাবেলা থেকে পরীক্ষা করা হবে। ৬.৫০ মিনিট নাগাদ থেকে পরীক্ষা চালু হয়। মায়ে শুয়ে পড়ে। ডাক্তারবাবু মেশিন লাগিয়ে দিয়ে বলেন, যদি মা নাড়াচাড়া করে, মেশিন খুলে যায়, তাহলে আমি এসে ঠিক করে দেব। ১২.১৫ মিনিট নাগাদ থেকে আমি স্যরকে ফোন করি, ২-৩ বার ফোন করি, স্যর ফোন রিসিভ করেননি। ডাক্তারবাবু সাড়ে বারোটা নাগাদ চলে আসেন। মেশিন খুলে দেন। মাকে বেডে দিয়ে চলে যাই।”
সেমিনার রুমকে কী অবস্থায় দেখেছিলেন? প্রশ্ন করতেই সায়ন বলেন, “দরজা ভেজানো, ঘর একদম ফাঁকা ছিল। কেউ ছিলেন না। বাইরের দিকে দু’জন সিস্টার দিদি বসে ছিলেন। স্লিপ স্টাডি রুমের পাশেই আবার ICU রুম চেস্ট ডিপার্টমেন্টের। সেখানেও লোক ছিল, দরজা বন্ধ ছিল। চেস্ট ICU-এর সামনে ওয়ার্ডের যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা চেয়ারে বসে ছিলেন।”
সায়ন আরও বলেন, “মাকে নিয়ে যখন বেরিয়ে আসছিলাম, রুমের বাইরে দুজন সিস্টার দিদি বসেছিলেন। ওঁরা জিজ্ঞাসা করেন, আপনি এদিকে কোথায় ছিলেন? আমি বললাম, মা ভর্তি ছিল। বেড নম্বরও জিজ্ঞাসা করেন। বহিরাগত কাউকে দেখিনি। ওখানকার স্টাফ, সিস্টার দিদি, আমি আর আমার মা ছিলাম। একজন সিকিউরিটি গার্ড ছিলেন। ওঁ আবার জিজ্ঞাসা করলেন, হয়ে গেছে?” তিনি বলেন, “মধ্যিখানে স্লিপ স্টাডি চলার সময়ে একজন এসেছিলেন। ওঁদের ইউনিটের একজন এসেছিলেন। ঘর অন্ধকার ছিল বলে মুখ দেখা যায়নি। পুুরুষ। কোনও ইন্টার্ন আসেননি।” সায়নের কথায়, “ড. অর্ক সেন ছাড়া চেস্টেরই আরেকজন ডক্টর এসেছিলেন। তিনি অর্ক স্যরের খোঁজেই এসেছিলেন।”
অর্থাৎ রোগীর ছেলে সায়নের কথা অনুযায়ী, রাত ১টা পর্যন্ত এমনিতেই সেমিনাররুম চত্বরে নার্সিংস্টাফ-সহ ৭-৮ ছিলেন। এখনও পর্যন্ত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট মেডিসিনের পিজিটি-রা সকলেই মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। তাঁরা যে অসহযোগিতা করছে, সে বিষয়েও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানায় সিবিআই। প্রশ্ন উঠছে, তাঁরা ঘটনার পর জানিয়েছিলেন, তাঁরা সাড়ে ১১টার মতো খাওয়া সেরে নিজেরা নিজেদের মতো গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। নার্সিং স্টাফরা জানিয়েছিলেন, ওই রাতে সেমিনাররুম চত্বরে কেউ ছিলেন না। তাহলে এই বিষয়টাকেই সমর্থন করছে না সায়ন দাসের বক্তব্য। কারণ রাতে ১টা পর্যন্ত সেখানে ৭-৮ মতো ছিলেন। তাঁরা কি তাহলে কিছুই জানতেন না? কিছুই দেখেননি?
আরও প্রশ্ন উঠছে, স্লিপ স্টাডি পরীক্ষা সাধারণত সারা রাত ধরে চলে। কিন্তু মিঠু দাসের ক্ষেত্রে কীভাবে তা সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে বারোটাতেই শেষ হয়ে গেল? পিজিটি অর্ক সেন কেন সন্ধ্যা থেকে পরীক্ষা করালেন? কেন তাঁকে তিন-চার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি? ওই সময়ে তিনি কোথায় ছিলেন? এই বিষয়ে চিকিৎসক অর্ক সেনকে ফোন করা হলেও, কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।