প্রীতম দে
অযোধ্যায় থাকেন রাম। আর তাঁর স্রষ্টা বাল্মীকি কোথায় থাকেন? রাম মন্দির হয়েছে , তাই অযোধ্যায় আমরা ঘুরতে যাচ্ছি । কিন্তু বাল্মীকির বাড়ি চিনিই না। যাওয়া তো দূর অস্ত।
বর্ডারে বাড়ি বাল্মীকির। নেপাল ভারত বর্ডার। লব কুশের আশ্রম। তপোবন। সেই পুরাণের পাতায় বর্ণিত ছবি যেন এখনও একইরকম আছে। আপনারা নিশ্চয়ই ভাবতে শুরু করেছেন সেখানে যাওয়া যায় কি না বা কীভাবে যাবেন ইত্যাদি প্রভৃতি।
আগে বলুন বাল্মীকির নামের মানে জানেন তো? জানেন তো উইপোকা আর বাল্মীকির সম্পর্কের কথা?
বল্মীক মানে উইপোকা। সেই থেকেই উৎপত্তি বাল্মীকির। প্রচলিত কাহিনী হল, প্রথমে ছিলেন দস্যু রত্নাকর। তারপর পাপ বোধ হয়। অনুশোচনা। বিবেক দংশন। তখন তপস্যা শুরু করেন । এমনই তপস্যা যে খেয়ালই নেই কখন উইপোকার ঢিপি হয়ে গেছে তাঁর সারা শরীর জুড়ে।
অদ্ভুত ব্যাপার। উইয়ের বাড়বাড়ন্ত এখনও রয়েছে এই এলাকায়। এখনও এখানে ওখানে উইয়ের ঢিপি। রয়েছে বাল্মীকির আশ্রম। লবকুশের আশ্রম। তপোবনের স্নিগ্ধ পরিবেশ। মহাকাব্য রামায়ণের রচনাকার বাল্মীকিকে আদিকবি বলা হয় কারণ বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনিই প্রথম সংস্কৃত কাব্যে শ্লোকের রচয়িতা।
কী সুন্দর করে ব্যাখ্যা করলেন পর্যটন বিশারদ রাজ বসু। তরাই অঞ্চল হিমালয়ের পাদদেশে। এখানে খরস্রোতা পাহাড়ি নদী হঠাৎ করে শান্ত হয়ে যায়। কোনও ধস সমস্যা নেই। সমস্ত দিক বিচার করে এই তরাই অঞ্চলেই গৌতম বুদ্ধ থেকে শুরু করে বড় বড় আধ্যাত্মিক গুরুরা শান্তি এবং সাধনার জন্য হিমালয়ের পাদদেশে তরাই অঞ্চলকেই বরাবর বেছে নিয়েছেন। বাল্মীকি ও ব্যতিক্রম নন। যে এরিয়াতে বাল্মীকি থাকতেন সেই জায়গাটি এখন বাল্মীকি টাইগার রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়েছে।
ভিজিট তরাই। তরাই আসুন। বুদ্ধ গয়া । পোখরা। দার্জিলিং। চারিদিকে ঘিরে আছে নামকরা পর্যটন কেন্দ্র।
একেবারে বাল্মীকির পাড়ার লোক পর্যটন নিয়েই আছেন। চিতোয়ানে নিজের একটি থাকার জায়গাও করেছেন । নাম দিয়েছেন বনবাস। দেখেই বোঝা যায় যে পর্যটকের তেমন পা পড়ে না এখানে। বাসু ধুঙ্গানা । বাল্মীকির গ্রামের মানুষটি তরাই নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি কলকাতার টি টি এফে এসেছিলেন। বাল্মীকির দেশের লোক। বললেন, ” আপনারা ডুয়ার্স সিকিম ভুটান যান। নেপাল এলেও চেনা জায়গায় আসেন। কিন্তু নেপাল ভারতের বর্ডারে যে কী ইতিহাস আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। আসলে দোষ আমাদেরই। আমরাই এই তরাইকে তুলে ধরতে পারিনি। এবার আমরা চেষ্টা করছি। ”
গত বছর পুজোর আগে বাল্মীকির বাড়ি গিয়ে দেখে এসেছেন পর্যটন বিশারদ সঞ্জীব আগরওয়াল। বুদ্ধগয়া গোরখপুর প্লেনে করে চলে যান কম খরচায়। ট্রেনে গেলে রোখসৌল চলে যান। বিহারের এরকম কয়েকটা অজানা জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। চেতন, পর্সে , বাল্মীকি ৪০০০ বর্গ কিলোমিটার জঙ্গল এলাকা। বুদ্ধগয়া নালন্দা রাজগীর । এসি বাসে করে যাওয়া। কাচের তৈরি ব্রিজের উপরে ঘোরা। সবমিলিয়ে মনে হবে বিদেশে বেড়াতে এসেছেন। তিন দশক ধরে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার থারু উপজাতির সঙ্গে মোলাকাত করুন। মুঘল সাম্রাজ্যের সময় রাজপুত মহিলারা এই অঞ্চলে চলে এসে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেন।
সবমিলিয়ে এ যেন পর্যটনের একটা অজানা বৃত্ত। কেন্দ্রে আছেন রামের সৃষ্টিকর্তা বাল্মীকি মুনি।