কলকাতা: স্বাস্থ্যে থ্রেট কালচার। এই অভিযোগ এখন খবরের শিরোনামে। এবার এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান। টোকাটুকি থেকে তোলাবাজি- নৈরাজ্য সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজে। বাধা দিলে জুটত বদলির হুমকি। বিরূপাক্ষ-বাহিনীর দাপটে ত্রস্ত বিভাগীয় প্রধানরাও। ডিএমই, স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ কর্তাকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করছেন অধ্য়ক্ষ।
কী বলছেন সাগরদত্তের অধ্যক্ষ?
TV9 বাংলার একান্ত সাক্ষাৎকারে সাগরদত্তের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “এখানকার যা পরিস্থিতি আমি এসে ফেস করেছি, সেটা অকল্পনীয়। দীর্ঘ ৩০ বছরের শিক্ষক জীবনে আমাকে এই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়নি। ২০২২ সালে আসার পর থেকেই একটা নাম বারবার আমার কাছে আসত, তাঁকে আমি কখনও চোখে দেখিনি। নাম হচ্ছে বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। তিনি এখানে দুটো ঘর দখল করে ছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কম অভিযোগ পেয়েছি, যাঁরা অন্যান্য ক্যাটাগরি অফ স্টাফ, তাঁদের থেকেই বেশি অভিযোগ পেয়েছি।”
কী ধরনের অভিযোগ?
কে কোন ক্লাস করাবেন, কে করবে, কে হস্টেল পাবে কি পাবে না, সে সব কিছু ঠিক হত বিরূপাক্ষের সিদ্ধান্তেই, জানাচ্ছেন অধ্য়ক্ষ। তিনি বলেন, “আমি নিজে পদক্ষেপ করি। আমি বলেছিলাম লিখিত অভিযোগ জানাতে। কিন্তু কেউ ভয়ে লিখিত দেয়নি। এখনও পর্যন্ত যা যা লিখিত পড়েছে, তা স্বাস্থ্যভবনে জমা দিই। জুলাই মাসে এক ছেলেকে বুঝিয়ে অভিযোগ দায়ের করাই। বরানগর থানার পুলিশ তার অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে আনঅথারাইজড কার্যকলাপের অভিযোগ ছিল। কিন্তু তারপর থেকে আড়াই বছরে আমি ও আমার স্টাফরা বিভিন্নভাবে হেনস্থার শিকার হই। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করতে দেওয়া হয় না, তাদের মিটিং মিছিলে ব্যস্ত রাখা হয়। মার্কস কম পায়। অনেক বিভাগীয় প্রধান বলেও ফেলেন, তাঁরা থ্রেট পেতেন।”
শুধু তাই নয়, অভিযোগ, টুকলি করলে কাদের ধরতে হবে, আর কাদের ধরা যাবে না, সেটাও ঠিক করে দিত বিরূপাক্ষবাহিনী।
সাগরদত্ত মেডিক্যালের UDC বলেন, “কলেজের প্রিন্সিপ্যালের নির্দশে গার্ড দিতে হয়। সেখানেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সেই ফুটেজ সিসিটিভি ক্যামেরাতেও রয়েছে। যদি চোতা তোলা হয়, তাহলে রীতিমতো থ্রেট দেওয়া হয় কেন চোতা তোলা হয়েছে? সেটা ওরাই ঠিক করে দেবে কার চোতা তুলব, কার চোতা তুলব না। বিরূপাক্ষ বাহিনীর দল এখানে রয়েছে। প্রত্যেকেই মেধাবী ছাত্র। তাদের রেজাল্ট সেকথাই বলছে। কিন্তু এখানে এসেই ইউনিয়নে ঢুকে গেল।”
প্রসঙ্গত, আরজি কর কাণ্ডে একাধিক মেডিক্যাল দুর্নীতি সামনে এসেছে। উঠে এসেছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ধৃত সন্দীপ ঘোষের একাধিক দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ। উঠে এসেছে থ্রেট কালচার। আর এই থ্রেট কালচারেই অভিযুক্ত সন্দীপ ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী চিকিৎসক হলেন বিরূপাক্ষ বিশ্বাস।