BHAWANIPUR BYPOLL : শ্রীজীব আপনি…

raktim ghosh |

Sep 11, 2021 | 6:44 PM

BHAWANIPORE BYELECTION : "এরকম ভাবার কারন নেই, দল আমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিল আর আমিও বোকার মত এগিয়ে এলাম"

BHAWANIPUR BYPOLL : শ্রীজীব আপনি...
প্রার্থী হওয়ার পর প্রথমবার মুখোমুখি ভবানীপুরের বাম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস

Follow Us

রক্তিম ঘোষ

কলকাতাঃ ২৪ ঘন্টাও হয়নি তাঁর নাম ঘোষিত হয়েছে ভবানীপুরের উপনির্বাচনের জন্য। বৃহস্পতিবার সাত সকালে ফোন করার পর বললেন, “সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ফোন করবেন প্লিজ। খুব ভাল হয়।” সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ যখন ফোন পৌঁছালো ১০ বিজয় মুখার্জি রোডের বাসিন্দার কাছে, তখন তিনি প্ল্যানিং শুরু করে দিয়েছেন প্রচারের। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে প্রচারে নামবেন। আর নামবেন খোদ পরিবহণ ও আবাসনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ডেরা চেতলায়। প্রচার শুরুর আগে TV9 বাংলায় একান্তে শ্রীজীব।

প্রশ্নঃ কখন জানলেন আপনি প্রার্থী হচ্ছেন?

শ্রীজীবঃ পার্টির গতকাল সিদ্ধান্তের পরেই জেনেছি।

 

প্রশ্নঃ তার আগে জানতেন না?

শ্রীজীবঃ না। আমাদের পার্টিতে তো এরকম হয়না। নির্বাচন এলে পার্টিতে আলোচনা হয়।আর আলোচনা হলেও আমার জানার কথা নয়। কারন, সেই আলোচনায় আমি অংশ না হলে আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এটা পার্টিগত সিদ্ধান্ত।

 

প্রশ্নঃ ২০১৫ সালে এই এলাকা থেকে আপনি পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা এখানে কতটা কাজে লাগবে?

শ্রীজীবঃ কাজে তো লাগবেই। আমি এই এলাকায় থাকি। নির্বাচনে লড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি নির্বাচনে পার্টির সঙ্গে কাজও করেছি। সব মিলিয়ে গত নির্বাচনে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগবে।

 

প্রশ্নঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত এক নামের বিরুদ্ধে আপনি প্রার্থী হয়েছেন বলে  অপরিচিত শ্রীজীবকে বেশি মানুষ এখন চিনছেন। এটাই কি নির্বাচনে আপনার  প্রাপ্তি?

শ্রীজীবঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যার বিরুদ্ধে আমাদের ৩৬৫দিন লড়াই চলে। প্রতিপক্ষে মুখটা কখনও আমি হতে পারি কখনও অন্য কেউ। সব নির্বাচনেই আমাদের পার্টি সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপায়। বিরুদ্ধে প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে আলাদা কিছু নয়। সব নির্বাচনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

 

প্রশ্নঃ কিন্তু সামশেরগঞ্জের বাম প্রার্থীকে তো অত মানুষ চিনছেনা। যতটা আলোচনায় আপনি থাকছেন। এটা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য চিনছে।

শ্রীজীবঃ এটা তো আফটার এফেক্ট। তার উপর ভবানীপুর নিয়ে মিডিয়ার ট্রেন্ড আছে। অস্বীকার করি কি করে। তবে নির্বাচনের গুরুত্ব সামশেরগঞ্জেও যেমন, ভবানীপুরেও তেমন। তবে সবার নজর যেহেতু ভবানীপুরের দিকে, তাই হয়ত বেশি লোকে আমাকে চিনছে। এটা আলাদাভাবে দেখার কিছু নেই।

 

প্রশ্নঃ এবার একটু তেতো প্রশ্ন করছি। আপনি এমন সময় ভোটে দাঁড়াচ্ছেন, যখন বিধানসভায় আপনার দলের বিধায়ক সংখ্যা শূন্য। সংসদেও বাংলা থেকে কোনও বাম সাংসদ নেই। এই অবস্থায় আপনি নির্বাচনী লড়াইয়ে। এটা কি শূন্য থেকে শুরু নাকি বিপদের মুখে দল আপনাকে ঠেলে দিল?

শ্রীজীবঃ এরকম ভাবার কারন নেই, দল আমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিল আর আমিও বোকার মত এগিয়ে এলাম।আমিও দলের একটা অংশ। হ্যাঁ এটা ঠিক, গত কয়েকটি নির্বাচনে আমরা যা ফল করেছি, তাতে আমার লড়াইটা কঠিন। সেটা আমার জন্যও কঠিন, অন্যদের জন্যও।

 

প্রশ্নঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা যা, তাতে নির্বাচনে জেতা অত্যন্ত কঠিন বিরোধীদের। আপনার দলের হেভিওয়েট কোনও প্রার্থী দাঁড়ালে তিনি যদি পরাজিত হন, তাহলে মুখ পুড়বে আপনার দলের।সেজন্যই কি অপরিচিত শ্রীজীব বিশ্বাস?

শ্রীজীবঃ দল কি কঠিন নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থী দাঁড় করায়নি? বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য থেকে অসীম দাশগুপ্ত-তাঁরাও নির্বাচনে হেরেছেন। তাতে কি হয়েছে। আমাদের দলে কেউ হেরে গেলে লজ্জায় বাড়ি থেকে বেরোতে পারব না,এরকম রাজনীতি আমরা করিনা।

 

প্রশ্নঃ এবার তো বামেরা সংযুক্ত মোর্চার প্রতীকে লড়ছেনা। আপনারা বাম প্রার্থীরা নিজেদের দলীয় প্রতীকে লড়ছেন। এটা সুবিধা না অসুবিধা?

শ্রীজীবঃ সংযুক্ত মোর্চার প্রতীক বলে কিছু হয়নি। সব দলই নিজেদের প্রতীকে লড়েছি। পশ্চিমবঙ্গে যদি কোনও ফ্রন্ট থাকে, তাহলে ৪০ বছর ধরে সেটা বামফ্রন্টই। ভবানীপুরে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি ঠিকই। তবে কংগ্রেসের যাঁরা সাধারণকর্মী, ভোটাররা রয়েছেন তাঁরা যাতে আমাদের সমর্থন করেন, আমাদের বার্তা থাকবে তাঁদের উদ্দেশ্যে।

 

প্রশ্নঃ তবে এটাও তো ঠিক, এই নির্বাচনে আইএসএফ, কংগ্রেস আপনাদের সাথে নেই। সেটা তো স্পষ্ট?

শ্রীজীবঃ দেখুন মুর্শিদাবাদে দুটি উপনির্বাচনে  কংগ্রেস আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন করছে।ভবানীপুরের ক্ষেত্রে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। এটা তাঁদের দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে বামফ্রন্ট কখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। আবার আপনাকে বলছি, ভবানীপুরের কংগ্রেস সমর্থক, ভোটার, কর্মীদের উদ্দেশ্যে  অনুরোধ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

 

প্রশ্নঃ আপনি তো এই কেন্দ্রে ঘরের ছেলে। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিুকারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। যিনি নন্দীগ্রামের ভূমিকন্যা ছিলেন না। তাহলে ভবানীপুরের নির্বাচন কি ঘরের মেয়ের বিরুদ্ধে ঘরের ছেলের লড়াই?

শ্রীজীবঃ উনি ঘরের মেয়ে, মানতে রাজি নই।ভবানীপুর কেন্দ্রে উনি কতটুকু সময় দেন? ওনার বাড়ির রাস্তাতেও ঢুকতে পারবেন না। সাধারণ মানুষ ওনার বাড়ির চৌহদ্দিও পেরোতে পারেন না। ওঁর বাড়িও দেখতে পারেননা সাধারণ মানুষ। আর উনি নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে লড়াই করতে গিয়েছেন। আর আমি যতবার নির্বাচনে কাজ করেছি এবং লড়েছি, তা এই কেন্দ্রেই। তাতে তো আমি ঘরের ছেলে বটেই। উনি কতটা ঘরের মেয়ে, সন্দেহ আছে।

 

ঘরের ছেলে বনাম ঘরের মেয়ে

 

প্রশ্নঃ এই নির্বাচনে আপনাদের লক্ষ্য কি? বিজেপিকে সরিয়ে বাংলার প্রধান বিরোধী দলের আসলটা পুনরূদ্ধার করা?

শ্রীজীবঃ আমাদের লড়াই দুজনের বিরুদ্ধেই। কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই। রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই। যদি দেখেন আগামি লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে, দেখবেন ৪০ জন তৃণমূলের নেতা দলে দলে বিজেপি যোগ দিচ্ছেন। কিংবা বিজেপির ফল খারাপ হলে দেখবেন তাঁদের ৪ বিধায়ক ফের তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। পুরো সেনসেক্সের মত খেলা চলছে বাংলায়।এই সেনসেক্স থেকে বাংলার মানুষকে বের করার দায়িত্ব নিয়েছি আমরা।আমাদের যাই শক্তি থাক, সেই শক্তি দিয়ে আমরা ঝাঁপাব। ইডি সিবিআই, দিল্লিতে গিয়ে ভোট আলোচনা-এসবে আমরা নেই। মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানে আমরা ছিলাম। সেখানেই থাকব।

 

 

প্রশ্নঃ আপনি যে কেন্দ্রের প্রার্থী, সেখানে একটা বড় অংশ ভোটার শিখ সম্প্রদায়ের। কৃষক আন্দোলন নিয়ে গোটা দেশে শিখরা গর্জে উঠেছিলেন। বামেদেরও কৃষক আন্দোলনে বড়সড় ভূমিকা ছিল। এবার কি নিজের কেন্দ্রে যখন প্রচার করবেন, শিখ সম্প্রদায়ের কাছে কৃষক আন্দোলনে আপনাদের ভূমিকাও তুলে ধরবেন?

শ্রীজীবঃ অবশ্যই। কৃষক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন। আগামি ২৭শে সেপ্টেেম্বর কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ভারত বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। যে দুটি দল সেই বনধকে সমর্থন করছেনা, তারা হল বিজেপি ও তৃণমূল। আর সেই দুই দলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। সেটা তো আমাদের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার অবশ্যই।

Next Article