SSKM: ‘মৃত’ ব্যক্তির দুটি হাত যুবককে দিল SSKM, টানা ২২ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে মিরাকেল ঘটালেন চিকিৎসকরা

Tanmoy Pramanik | Edited By: অবন্তিকা প্রামাণিক

Jul 16, 2023 | 1:54 PM

SSKM: গত ৯ জুলাই উলুবেড়িয়ায় পথ দুর্ঘটনার শিকার হন বছর ৪৩-এর এক ব্যক্তি। ১৩ই জুলাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ব্রেন ডেথ শুরু হয়।

SSKM: ‘মৃত’ ব্যক্তির দুটি হাত যুবককে দিল SSKM, টানা ২২ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে মিরাকেল ঘটালেন চিকিৎসকরা
হাত প্রতিস্থাপন এসএসকেএম-এ
Image Credit source: Tv9 Bangla

Follow Us

কলকাতা: অসাধ্য সাধন করল রাজ্যের হাসপাতাল এসএসকেএম (SSKM)। ব্রেন ডেথ হওয়া ব্যক্তির দান করা দুটি হাত সংগ্রহ করে তা প্রতিস্থাপন করা হল ২৭ বছরের যুবকের শরীরে। এই ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট  রাজ্যে বা পূর্ব ভারতে এই ঘটনা প্রথম। দেশের মধ্যে পনেরোতম। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শনিবার ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়েছিল অস্ত্রোপচার। শেষ হয় রবিবার ভোর ৩টে নাগাদ। একটানা ২২ ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী মিলিয়ে ৩২ জনের মেডিক্যাল টিম গঠন করে অসাধ্য সাধন করে এ রাজ্যের হাসপাতাল।

এরপর ২৭ ঘণ্টা ভেন্টিলেশনে রেখে দেওয়া হয়েছিল ওই যুবককে। এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ ভেন্টিলেশন খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে ওই যুবককে রাখা হয়েছে সিসিইউ-তে (CCU)। আপাতত তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। বর্তমানে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অধীনে আপাতত চিকিৎসাধীন তিনি। উল্লেখ্য, মরনোত্তর অঙ্গদানে হৃদযন্ত্র,কিডনি, লিভার,ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা শোনা গেলেও এভাবে শরীরের বাইরের অঙ্গ দানের ঘটনা প্রথম।

SSKM অ্যান্ড IPGMER এর ডিরেক্টর মণিময় বন্দোপাধ্যায় বলেন, “এ ধরনের হাত প্রতিস্থাপন প্রথম। সরকারি হাসপাতালের দক্ষতা দিয়েই এই কাজ সম্ভব হয়েছে। রাত তিনটায় শেষ হয়েছে মূল অস্ত্রোপচারের কাজ। সবাই সতর্ক আছি।”

হাত প্রতিস্থাপন SSKM-এ

চলছে অস্ত্রোপচার

হাত প্রতিস্থাপন SSKM-এ

অঙ্গদান করলেন কে?

গত ৯ জুলাই উলুবেড়িয়ায় পথ দুর্ঘটনার শিকার হন বছর ৪৩-এর এক ব্যক্তি। ১৩ই জুলাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ব্রেন ডেথ শুরু হয়। এরপর তাঁর রক্তের গ্রুপ ও কোষ সংক্রন্ত বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। সেই সময় আবার এসএসকেএম-এর প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে বিগত এক বছর ধরে চিকিৎসাধীন বিরাটির এই বাসিন্দা বছর সাতাশের ওই যুবক। তাঁর প্রয়োজন ছিল দু’টি হাত।

ফলে ROTO ও চিকিৎসকদের তরফে ব্রেন ডেথ হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়, দুটি হাত দান করার। প্রথমে এই প্রস্তাব শুনে পরিবারের লোকজন চমকে উঠলেও চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেননি। চলে বোঝানোর পর্ব। কেউ রাজি তো কেউ অরাজি। কিন্তু মৃতের স্ত্রী শেষমেশ সিদ্ধান্তে স্থির থাকেন। আবারও ইতিহাস তৈরি হয় রাজ্যের অঙ্গদানের ক্ষেত্রে। পরিবারের এক সদস্য বলেন,”বাড়ির মানুষটা তো মারাই গেলেন। যদি কারোর উপকার হয় সেজন্যই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথমে আমাদের অস্বস্তি ছিল। কিন্তু কাকিমা প্রথম থেকেই রাজি।”

অস্ত্রোপচারে যুক্ত এসএসকেএম-এর এক অভিজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, “ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে শক লেগে হাত ঝলসে গিয়েছিল। ডান হাতে পড়ে যায় করা। বাম হাত থেকেও না থাকার মতো। আমরা প্রতিস্থাপনের দিকে লক্ষ্য রেখে বিরাটির ওই যুবককে প্রস্তুত রেখেছিলাম। তাঁকে টিকা দেওয়া সহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। স্পেশাল মেডিক্যাল বোর্ড গঠন ছিল। রিজিওনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন বা ROTO তে নাম নথিভুক্ত করানো হয়েছিল।”

নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসকের কথায়, “প্রতিস্থাপন হয়েছে। কিন্তু শরীর এই হাত কতক্ষণ এই গ্রহণ করবে সেটাই চ্যালেঞ্জ। শরীর বাইরের জিনিস রিজেক্ট করে। তাই হাই টক্সিক ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। রক্তসঞ্চালন শুরু না হলে পচে বাদ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে শরীরের অন্য দিক গুলো রয়েছে। কঠোর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এক বছর এভাবেই থাকতে হবে।

Next Article