কলকাতা: প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে র্যাঙ্ক করার চাপ। ভাল করতেই হবে, না হলে সমাজে হারিয়ে যেতে হবে! সেই চাপ নিতেই কি লুকিয়ে ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিল সাউথ পয়েন্ট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র নীলাদ্রি। চিকিৎসক বাবার ছেলে চাপ সামলাতে না পেরে খেয়ে ফেলে রক্ত চাপের ওষুধ। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। পরিবারের তরফে ভর্তি করা হয় বাঘাযতীনের নার্সিংহোমে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। নাকতলার নীলাদ্রি মান্নার মৃত্যুতে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলল পরিবার।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নীলাদ্রি কাউকে অভিভাবকদের না জানিয়ে রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে ফেলে সোমবার। মঙ্গলবার সকাল থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবারের বোর্ড পরীক্ষার্থী নীলাদ্রি। তখন বাবা-মাকে সবটা জানায় সে। তড়িঘড়ি নীলাদ্রিকে বাঘাযতীনের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মায়ের অভিযোগ, বুধবার সকাল থেকে কার্যত কোনও চিকিৎসাই হয়নি নীলাদ্রির। ৪৮ ঘণ্টা নার্সিংহোমে ভর্তি থাকলেও কার্ডিওলজির কোনও চিকিৎসক দেখেননি বলে অভিযোগ।
হাসপাতালের বক্তব্য, কার্ডিওলজির পরিকাঠামো ওই হাসপাতালে নেই। তাহলে প্রশ্ন, ৪৮ ঘণ্টা নীলাদ্রিকে সেখানে না রেখে অন্যত্র কেন স্থানান্তরিত করা হল না?
কিন্তু প্রশ্ন তো আরও আছে। ছেলে রক্তচাপের ওষুধ খেল কেন? মা জানান, লকডাউনের সময় অফলাইনে ক্লাস চলার সময় থেকেই পড়াশোনায় ভাল ফল করার চাপ বাড়তে থাকে নীলাদ্রির। একাকীত্ব ঘিরে ধরে কিশোর মনকে। স্কুলের পড়ার চাপও নিতে পারছিল না সে। নীলাদ্রির কাউন্সেলিং চলছিল বলেও জানায় পরিবার।
স্কুলের সিলেকশন টেস্টে ভাল ফল করার চাপ কাটাতে কখন কিশোর রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে ফেলেছে তা টের পাননি বাবা-মা। স্কুলে যে অস্বাভাবিক চাপ রয়েছে তা বলছেন নীলাদ্রির সহপাঠীদের অভিভাবকেরাও। মায়ের প্রশ্ন, হাসপাতালে ছেলেটা চিকিৎসা পেল না। পড়াশোনার চাপের কথা জানতে দেয়নি ছেলে।
এমন প্রতিযোগিতার দৌড়ে প্রাপ্তি কী? প্রশ্ন সন্তানহারা মায়ের। নীলাদ্রির বাবাও জানান, কোনওভাবেই তাঁদের সন্তানের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ছিল না। তবে মানসিক চাপে যে ছিল, তা স্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ছেলের অ্যাংজাইটি ছিল। বন্ধুকে হারিয়ে বোধহয় একই প্রশ্ন নীলাদ্রির প্রিয় পোষ্য থামস আপেরও।