কলকাতা: দাদা বিপিএল কার্ডের উপভোক্তা। পর্ণশ্রী থানা এলাকায় এক চিলতে বাড়িতেই থাকেন। ডাল ভাত খেয়েই দিন কাটে। বাড়িতে ছেলে বউমা। ছোট্ট সংসার, টুকটাক কাজ করে যা আয় হয়, তা ফুরিয়ে যায় দিনেই। কিন্তু দিব্যি তাঁর সংসার চলছে। আর এভাবেই চালিয়ে যেতে চান সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের দাদা অজয় কৃষ্ণ ভদ্র। রংচটা দেওয়া, সিমেন্টের প্রলেপ উঠে ইটের পাজর বেরিয়ে পড়া পাঁচিল, দশ বাই দশ কামরার ফ্ল্যাট। সেই ফ্ল্যাটেরই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দাদা বললেন, ” আমি ভাইকে বলি, যা দোষ করেছিস স্বীকার করে চলে আয়। ডাল-ভাত, নুন-ভাত খা, শান্তিতে থাক। সাধারণভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাক।”
বুধবারই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের গলার স্বরের নুমনা সংগ্রহ করে কার্যত বড় ‘জয়’ পেয়েছে ইডি। এবার তা ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। দুর্নীতির পিরামিডের চূড়া পর্যন্ত পৌঁছাতে চাইছেন। কালীঘাটের ‘কাকু’কে কাল যখন SSKM থেকে বার করে আনা হয়েছিল, কার্যত, তিনি বিধ্বস্ত, চাদর মোড়া মাথার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে সাদা চুল। স্ট্রেচারে কিছুটা ঝুঁকে। আর ভাইকে টিভির পর্দায় ওই চেহারায় দেখে কার্যত ভেঙে পড়েছেন দাদা অজয়কৃষ্ণ।
পাঁচশো মিটার দূরেই ভাইয়ের প্রাসাদোপম বাড়ি। কিন্তু সেই বাড়ি এখন ‘মালিকবিহীন’। বৃহস্পতিবার নিজের ঘরে বসেই ভাইয়ের সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বললেন তিনি। বললেন, “ওর সঙ্গে আমার মানসিক দূরত্ব আছে। আমি বাজে কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার লোক নই। ও রাজনীতি করে।” তিনি বললেন, “আমার খারাপ লাগে এই রকম কাজে জেলে আছে ভাই।” কথাটা বলার সময়ে মাথা নীচু করলেন তিনি। তিনি বললেন, “এখন ওর কোম্পানির নাম শুনছি। খুব কষ্ট হয় ভাইয়ের জন্য।”
তবে ভাইয়ের প্রতি কিছুটা ক্লেশ, অভিমানের সুরও ধরা পড়ে দাদার গলায়। তিনি বললেন, “আমার রোজগার নেই, ও কোনদিন সাহায্য করেনি।” তিনি বললেন, “সই করারই ক্ষমতা নেই। কিন্তু এখন শুনছি ওই নাকি মাথা।”
পর্ণশ্রীর যে ফ্ল্যাটে থাকেন অজয়কৃষ্ণ। সেখানেই আরও দুটো ফ্ল্যাট ছিল সুজয়কৃষ্ণের। পরে একটু দূরে বাড়ি করে চলে যান। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন বলে জানান অজয়কৃষ্ণ। তিনি বলেন, “অভিষেক এসেছিলেন এখানে একবার। ও আমার পরিচয় দিয়েছিল। আমি অভিষেককে নমস্কার করি। ব্যস এটুকুই। বাকি আমি আর কিছু বলতে পারব না।”
ভাইয়ের যে শরীর ভাল না, সেটা বারবারই বলেছেন তিনি। তবে ভাইয়ের সম্পর্কে আর বিশেষ কিছু বলতে চাইছেন না অজয়। গত বছরই অগস্টে পাড়ায় মার খেতে হয়েছিল তাঁকে। ক্লাবের বচসায় তাঁকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। সে বিষয়টি নিয়ে তিনি এখনও আতঙ্কিত। এখনও বাইরে বেরোলে তিনি হুমকির শিকার হন বলেও দাবি করেছেন। শেষে একটাই কথা বলেছেন, “আমার ভাই যদি শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি যুক্ত প্রমাণিত হয়. তাহলে খুব কষ্ট পাব।”