অঞ্জন রায়
বৃহস্পতিবার রাজপথে বিজেপির বিশাল মিছিল। সামনের সারিতে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, রাহুল সিনহা, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকে। কিন্তু সেই মিছিলে পা মেলাতে দেখা যায়নি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরকে (Suvendu Adhikari)। গুঞ্জন শুরু হয়ে যায় দলীয় কর্মীদের মধ্যে। তার কারণ সপক্ষে জুতসই যুক্তিও দিতে পারেননি বঙ্গ বিজেপির নেতারা। একাংশ বলেছিলেন, শরীর খারাপ তাঁর। তবে, সূত্র বলছে এদিন শুভেন্দু অধিকারী এই মহানগরেই ছিলেন না। পার্থ কাণ্ডে বাংলা যখন উত্তাল, ঠিক সে সময় শুভেন্দু অধিকারী ঢুঁ দিয়ে এলেন নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকের প্রধান কার্যালয়ে। সূত্রের খবর, সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভগবতের (Mohan Bhagwat) সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ভগবৎ-শুভেন্দুর এই সাক্ষাৎ অত্যন্ত তাৎপর্য বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার আরএসএস প্রধান মোহন ভগবতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে যদিও তা জানা যায়নি। শুভেন্দু অধিকারীও মুখ খুলতে চাননি এ বিষয়ে। ওয়াকিবহাল মনে করছে, রাজ্যের সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে তাঁদের। শিক্ষক দুর্নীতি কাণ্ড নিয়েও আলোচনা হতে পারে। সূত্রে খবর, পার্থ কাণ্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকতে পারেন আরএসএস সুপ্রিমো। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এরপর চব্বিশে লোকসভা। এই পরিস্থিতিতে ‘ধীরে চলো নীতির’ পরামর্শ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এরই মধ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন। আর তাতেই বেড়েছে জল্পনার পারদ।
শুভেন্দু-ভগবৎ-এর সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে Tv9 বাংলাকে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “শুভেন্দু দা বড় অপারেশনে ব্যস্ত আছেন। তার কিছুটা ইঙ্গিত মিঠুন দা দিয়েছেন গতকাল। তাই মিছিলে আসতে পারেননি।” উল্লেখ্য, কলকাতায় বিজেপি ঘনিষ্ট অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী সাংবাদিক বৈঠকে জানান, বিজেপির সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলেছেন তৃণমূলের ৩৮ বিধায়ক। এমনকী ২১ জন বিধায়ক খোদ মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। মিঠুনের এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। কারণ, এর আগে খোদ শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, মহারাষ্ট্রের মতোই সরকার ভেঙে যাবে বাংলাতেও। তা-ও চব্বিশের মধ্যেই। শুভেন্দুর দাবি ছিল, রাজ্যে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে হবে। মিঠুন যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা শুভেন্দুর বক্তব্যের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, শুভেন্দু কোন অপারেশনে ব্যস্ত? সে বিষয়েই কি মোহন ভগবতের সঙ্গে আলোচনা করে এলেন? বিজেপির সঙ্গে লোটাস অপারেশন যে ভাবে জড়িত, সেই অপারেশনের কি ইঙ্গিত করলেন সুকান্ত? শুভেন্দু যে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন চব্বিশেই বিধানসভা নির্বাচন, তারই ছক কষতে নাগপুরে যাওয়া? এই সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখনই পাওয়া সম্ভব নয়, তবে গেরুয়া শিবির থেকে ইতিউতি ইঙ্গিতগুলো যে আসছে, তা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।