কলকাতা: ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি। চলতি মরসুমে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি এক্সপ্যান্ডেড সিনড্রম (DES)। এতদিন ডেঙ্গি হ্যামারেজিক ফিভার এবং ডেঙ্গি শক সিনড্রমের উপরই চিকিৎসকরা বিশেষ নজর দিচ্ছিলেন। তবে এ বছর একাধিক রোগীকে দেখার পর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন ডেঙ্গি হ্যামারেজিক ফিভার বা ডেঙ্গি শক সিনড্রমের থেকেও মারাত্মক হচ্ছে এই ডিইএস। আর এর প্রবণতাও অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ৭-৮ দিনের মধ্যে যে জ্বর নিয়ন্ত্রণে চলে আসছিল, এখন তার থেকেও বেশি সময় ধরে জ্বর থাকছে। তার থেকেও চিন্তার বিষয় হল, ডেঙ্গি এক্সপ্যান্ডেড সিনড্রমে একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। লিভার, ব্রেন, কিডনি, প্যানক্রিয়াসের পাশাপাশি কার্ডিয়াকের সমস্যাও হচ্ছে।
চিকিৎসকদের মত, একটা সময় ডেঙ্গি মানেই মাথা ব্যথার কারণ থাকত প্লেটলেট। ডেঙ্গি হলেই প্লেটলেট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে চিন্তায় থাকতেন সকলে। সেই জায়গা থেকে এবার ডেঙ্গি নতুন করে ভাবাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, একটা ভাইরাস দীর্ঘদিন ধরে থাকলে তার মিউটেশন হওয়া স্বাভাবিক।
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় পাল বলেন, “যত দিন যাচ্ছে সেকেন্ডারি ডেঙ্গি বাড়ছে। এরমধ্যে ডেঙ্গি শক সিনড্রম ও ডেঙ্গি হ্যামারেজিক ফিভারের কথা জানতাম। একটায় শরীরের জল বেরিয়ে যায়, আরেকটায় প্লেটলেট কমে যায়। কিন্তু তবে এখন এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গি সিনড্রম বাড়ছে। যা আমাদের ভাবাচ্ছে। আগে এটা এত পাওয়া যেত না। এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গি সিনড্রমে শরীরের মাল্টি সিস্টেম প্রভাবিত হয়। ব্রেন থেকে শুরু করে নানা অর্গান প্রভাবিত হচ্ছে। একজন রোগীর একাধিক অর্গান একসঙ্গেও প্রভাবিত হচ্ছে। ফলে ক্রিটিকাল ডেঙ্গি বছর বছর বেড়েই চলেছে। অনেক কেসই পাচ্ছি যেখানে হার্ট, কিডনি প্রভাবিত হচ্ছে। রোগীকে ভেন্টিলেটরে পর্যন্ত রাখতে হচ্ছে। মারাও যাচ্ছেন।”
এক্ষেত্রে ভাইরাস কোথাও মিউটেট করেছে কি না, কোভিডের মতো ডেঙ্গিরও স্ট্রেনের কোনও সাব-টাইপ তৈরি হয়েছে কি না সেটা বোঝারও সময় এসেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা বুঝতে চাইছেন, ডেঙ্গি এক্সপ্যান্ডেড সিনড্রম শুধুমাত্র কলকাতার কতগুলি হাসপাতাল-নার্সিংহোমেরই ঘটনা, নাকি রাজ্যজুড়ে এই একই দাপট চলছে।