Barun Biswas: ‘সুখ সাধুর ভিটেতে’ ধর্ষিত হন বহু মহিলা, ওদের ত্রাতা ছিলেন বরুণ বিশ্বাসই

Jyotipriya Mallick: ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়র। ঘটনায় বিধায়কের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমিলা রায় বিশ্বাস। পুলিশকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে রোজই নানারকম হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্বাস পরিবারকে।

Barun Biswas: ‘সুখ সাধুর ভিটেতে’ ধর্ষিত হন বহু মহিলা, ওদের ত্রাতা ছিলেন বরুণ বিশ্বাসই
বরুণ বিশ্বাসImage Credit source: TV-9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 28, 2023 | 3:47 PM

কলকাতা: প্রায় দুই দশক আগে সুটিয়া গণধর্ষণকাণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। ঘটনার বিভৎসতায় শিউরে উঠেছিল বঙ্গবাসী। ১৯৯৯-২০০২ সালের সময়টায় রীতিমতো দুষ্কৃতীদের স্বর্গ রাজ্য হয়ে উঠেছিল সুটিয়া। এলাকায় লাগামহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম। সূত্রের খবর, মাত্র দু থেকে আড়াই বছরের মধ্যে প্রায় ৩২টি ধর্ষণ ও ১২টি খুনের ঘটনা ঘটে। এরইমধ্যেই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে সুটিয়া গণধর্ষণ প্রতিবাদ মঞ্চ গড়ে তোলেন মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন) এর শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। মঞ্চের সম্পাদক ছিলেন তিনিই। তাতেই অস্বস্তি বাড়তে থাকে তদানন্তীন শাসকদলের। এরইমধ্যে রাজ্যে হয়ে যায় পালাবদল। ২০১২ সালের ৫ জুলাই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন বরুণ। ফেরার পথে গোবরডাঙা স্টেশনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন এই প্রতিবাদী শিক্ষক। ইডির হাতে বর্তমানে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির পর ফের চর্চা সেই ঘটনা। আজও ছেলের শোকে কেঁদেই চলেছেন বরুণের বাবা জগদীশ বিশ্বাস। কাঁদতে কাঁদতেই বলছেন, যদি বাবা থাকতে ছেলে চলে যায় তার থেকে দুঃখ তো আর কিছু থাকে না। 

 বাংলার বুকে ‘একখণ্ড নরক’

উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার সীমান্তবর্তী জনপথ সুটিয়া। একবিংশ শতাব্দীর একদম গোড়ায় সুটিয়াই যেন ছিল বাংলার বুকে একখণ্ড নরক। সুটিয়াতেই ছিল ঝোপ-ঝাড়ে ঢাকা জঙ্গলের মধ্যে ভাঙাচোরা একটি চালাঘর। এলাকার বাসিন্দারা চিনতেন ‘সুখসাধুর ভিটে’ বলে। অভিযোগ এখানেই বহু মহিলাকে তুলে এনে গণধর্ষণ করা হয়েছে। দাবি-দাওয়া আদায়, তোলাবাজি, লোক পেটানোর কাজও চলত এখানেই। এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতো কার্গিল পার্টির ছেলেরা। এই কার্গিল পার্টিতে ছিল এলাকার প্রায় সমস্ত সামাজবিরোধীদের মেম্বারশিপ। খুন, রাহাজানি, মহিলাদের তুলে এনে গণধর্ষণ, এই যেন ছিল তাদের পেশা-নেশা। সুখসাধুর ভিটেয় নিয়ে গিয়েই চলত অকথ্য অত্য়াচার। দিনের পর দিন এমনই জঙ্গরাজ চলেছিল সুটিয়ায়। তারই প্রতিবাদে এলাকার শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের নিয়ে প্রতিবাদী মঞ্চ গড়ে তুলেছিলেন বরুণ বিশ্বাস। 

নাম জড়িয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়র

বরুণ খুনে ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়র। ঘটনায় বিধায়কের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমিলা রায় বিশ্বাস। পুলিশকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে রোজই নানারকম হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্বাস পরিবারকে। বরুণের মৃত্যুর পরেই তৈরি হয়েছিল বরুণ স্মৃতি রক্ষা কমিটি। বরুণ বিশ্বাসের আদর্শকে পাথেয় করেই সামাজিক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই ছিল এই কমিটির মূল উদ্দেশ্য। এদিকে এরইমধ্যে জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হতেই ফের সুবিচারের আশায় বুক বাঁধছেন বিশ্বাস পরিবারের সদস্যরা। আশায় বুক বেঁধেছে সুটিয়াও। 

ঘটনার ১১ বছর পরেও বরুণ বিশ্বাসের দাদা অসিৎ বিশ্বাস বলছেন তাঁরা বিচার পাননি। দাবি তুলছেন সিবিআই তদন্তের। বলছেন, “বরুণ খুনের পরেই জানা গিয়েছিল ওকে খুন করেছিল সুশান্ত পোদ্দার। টাকার বিনিময়ে করেছিলেন। আমাদের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথা শুনে করেছিলেন। বরুণ মার্ডার হওয়ার ৫ থেকে ৫ দিন পরে ধ্যানেশ নারায়ন গুহ বলে এক ব্যক্তি আমাদের বাড়িতে আসেন। জানান ওনার বাড়ি ঠাকুরনগরে। উনি জানান যখন ওই ঘটনা ঘটে তখন উনি বালুদার অফিসে ছিলেন। উনি বলেন, বরুণ শ্যুট হওয়ার এক মিনিট পরে এনামূল বলে এক সমাজবিরোধী ওনাকে ফোন করেন।” 

এরপরই খানিক ভয়ের সঙ্গে বলেন, “এই তথ্য আমি এতদিন বলতে পারিনি। এখনও বলতে ভয় হচ্ছে। কারণ, বর্তমান সরকার যে জায়গায় যাচ্ছে তাতে বরুণ বিশ্বাসের পরিবারের সঙ্গে কোনও লোক নেই। যে বরুণ বিশ্বাস হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন তাঁদের আজ আমাদের পিছন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই এ ঘটনার সিবিআই তদন্ত হোক। ওকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।”