কলকাতা: স্কুলে সরকারি পাঠ্যবইয়ের জোগান নেই। অথচ খোলা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিনামূল্যের বই। পড়ুয়ারা পিডিএফে বই পড়ছে। অথচ উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলার দু’টি বইয়ের দাম খোলা বাজারে ৫০০ টাকা। টিভিনাইন বাংলার স্টিং অপারেশনে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বেশ কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, উচ্চমাধ্যমিকের সরকারি স্কুলের পাঠ্যবই নিয়ে একটা টানাটানি চলছে। পড়ুয়াদের নাকি পিডিএফের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। এদিকে খোঁজ করে জানা যায়, বই আছে, তবে অন্য জায়গায়। সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন টিভিনাইন বাংলার সাংবাদিক। দেখেন সরকারি পাঠ্য বইয়ের ভালই ‘স্টক’। দোকানি বলেন, “৫০০ টাকা পড়বে দাদা, ফাইভ হান্ড্রেড।” দোকানি আবার প্রশ্ন করেন, “সরকারি স্কুলে পড়ে কি? তাহলে কিনতে হবে।”
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন সচিব দেবাশিস সরকার বলেন, “সরকারি স্কুলের পাঠ্যবই বাইরে পাওয়া গেলে সেই বই বিক্রিকে বেআইনি পদ্ধতিতে বিক্রি বলা হয়। শুধু এটা বলে দিলেই কাউন্সিলের কাজ শেষ হয় না। রাজ্য প্রশাসনেরও কাজ শেষ হয় না। স্পেশাল ব্রাঞ্চ, আইবিকে দিয়ে কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া বা জেলার যে সমস্ত জায়গা থেকে বই আসে সে সমস্ত জায়গাকে নজরদারিতে রাখতে বলে।”
দেবাশিস সরকার প্রশ্ন তোলেন, সরস্বতী প্রেসের ভূমিকা নিয়ে। তিনি বলেন, “সরস্বতী প্রেস থেকে ছাপা জিনিসের একটা লজিস্টিক্স রয়েছে। কী পদ্ধতি কোন পথে সেগুলি জায়গামতো পৌঁছবে তা পূর্ব নির্ধারিত। অত্যন্ত নিরাপদভাবে তাদের তা মেনে চলার কথা। সেখানেও কোনও লিকেজ হল কি না জানতে হবে।”
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “সরাসরি সরস্বতী প্রেসে ছাপা বই বাইরে বিক্রি হওয়া খুব কঠিন। সেটা আমাকে খোঁজ নিতে হবে। তবে একটা অভিযোগ এসেছে যে পিডিএফ থেকে প্রিন্ট আউট নিয়ে সেটাকে বাঁধিয়ে কলেজ স্ট্রিটে বিক্রি হচ্ছে। সেটা অন্যায়। আমরা আজই পুলিশ প্রশাসনকে জানাব।”
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “বই পাইরেসি এখন একটা লব্জ হয়ে গিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে বলব ওরা যেন ব্যবস্থা নেয়।” যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, “এটা আরেকটা দুর্নীতি, পুস্তক দুর্নীতি। কারা বাজারে বিক্রি করছে? সব তৃণমূলের নেতারা। ভোটে খেটেছে, লড়াই করেছে, এবার করেকম্মে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। নিট কেলেঙ্কারির পর এবার পুস্তক কেলেঙ্কারি বাংলায়।”
সূত্রের খবর, ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও এখনও সব স্কুলে পৌঁছয়নি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বই। বেশ কয়েকটি জেলায় এখনও পৌঁছনো বাকি বাংলা ও ইংরেজি বই। স্কুলে স্কুলে পড়াশোনা হচ্ছে পিডিএফ দিয়ে। যা নিয়ে উদ্বেগে শিক্ষকরা। বই খুঁজতে বাম ছাত্র সংগঠন নামছে অভিযানে।