Calcutta High Court: বিচারপতির রায়ে মানহানি হয়েছে, তাই ক্ষতিপূরণ চাই রাজ্যের থেকে! আজব মামলায় কী পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের?

Calcutta High Court: কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতির সিদ্ধান্তের কারণে মানহানি হয়েছে এবং সেই কারণে এক আবেদনকারী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছিলেন হাইকোর্টে।

Calcutta High Court: বিচারপতির রায়ে মানহানি হয়েছে, তাই ক্ষতিপূরণ চাই রাজ্যের থেকে! আজব মামলায় কী পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের?
কলকাতা হাইকোর্ট। ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 09, 2022 | 12:10 AM

কলকাতা : কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) এক বিচারপতির সিদ্ধান্তের কারণে মানহানি হয়েছে এবং সেই কারণে এক আবেদনকারী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছিলেন হাইকোর্টে। সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট তার ক্ষমতাবলে ওই ক্ষতিপূরণের আবেদন প্রত্যাখ্যানের আবেদন গ্রহণ করেছে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর বি সরফ তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, বিচারকের সিদ্ধান্তের জন্য রাষ্ট্রের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। সে ক্ষেত্রে যথাযথ কারণের উল্লেখ করা নেই আবেদনে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, “বাদীর ভুল ধারণা রয়েছে। হাইকোর্টের কোনও নির্দেশের জন্য রাষ্ট্র দায়বদ্ধ নয়। আইনে এর কোন স্থান নেই। দ্বিতীয়ত, এখানে রাজ্য ও হাইকোর্টের মধ্যে কোনও মনিব-ভৃত্যের সম্পর্ক নেই। তাই বিচারপতির কোনও সিদ্ধান্তের জন্য রাজ্যের কোনও দায়বদ্ধতার প্রশ্নই আসে না।”

আদালত আরও জানিয়েছে, আবেদনকারী এমন কোনও আইনের কথাও দেখাতে পারেননি যেখানে বিচারপতির সিদ্ধান্তের জন্য বা তাঁর নির্দেশের জন্য বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যকে বাধ্য করে। সেই সঙ্গে জাজস প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ১৯৮৫-এর কথাও তুলে ধরেন বিচারপতি। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিচারক ও বিচারপতির নিরাপত্তার বিষয়ে এবং সেই সঙ্গে আরও বলা হয়েছে রাষ্ট্রকে কিংবা রাজ্যকে আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে হয়।

উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী ১০ লাখ টাকার ডিক্রি চেয়েছিলেন। তাঁর দাবি ছিল এক বিচারপতির সিদ্ধান্তে তাঁর মানহানি হয়েছে এবং এই ক্ষতিপূরণের দায়বদ্ধতা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের। সেই মতো রাজ্যের থেকে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করে আবেদন জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৫ মে আবেদনকারীর স্ত্রী মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মারা যান। পরে ওই বছরেরই ১৯ নভেম্বর আবেদনকারীর এক আত্মীয় কলকাতায় আবেদনকারীর স্ত্রীর চিকিৎসা করা তিন জন ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪-এ ধারায় (অবহেলায় মৃত্যু ঘটানো) আদালতে মামলা করেছিলেন।

ওই আবেদনকারী পরবর্তীতে দিল্লিতে ন্যাশনাল কনজিউমার রিড্রেসাল কমিশন এবং পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু সেগুলি খারিজ করা হয়েছিল। এরপর ২০০২ সালের ২৯ মে আলিপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় এবং চিকিৎসক বৈদ্যনাথ হালদারকে ৩০৪-এ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে। কিন্তু চিকিৎসক অবনী রায়কে বেকসুর খালাস করে দিয়েছিল। এরপর ২০০৪ সালের ১৯ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গোরা চাঁদ দে একটি রায় দেন, যেখানে দোষী সাব্যস্ত চিকিৎসকদের বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয় এবং চিকিৎসক অবনী রায়ের খালাসও বহাল রাখা হয়। আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কিছু পর্যবেক্ষণও করা হয় হাইকোর্টে এবং রায়টি সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেখানোও হয়েছিল সেই সময়।

তারপরে, সুপ্রিম কোর্টেও একটি আবেদন করা হয়েছিল কিন্তু সেটিও খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে, আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০ ধারা (ফৌজদারী মানহানির) অনুযায়ী বিচারপতি গোরা চাঁদ দে’র বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেটি খারিজ করা হয় ২০১১ সালের ১৬ অগস্ট। আবেদনকারী এরপর হাইকোর্টে একটি রিভিশন পিটিশনও দাখিল করেছিলেন। কিন্তু বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একটি রায়ের মাধ্যমে তা খারিজ করে দেন। এরপর ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আবেদনকারী ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৮০ ধারায় আওতায় স্বরাষ্ট্র সচিবকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের জন্য নোটিস পাঠান। অভিযোগ, রাজ্যের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ। সেই সংক্রান্ত বিষয়েই এবার নিজের পর্যবেক্ষণ জানাল কলকাতা হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন : Manoj Tigga : ‘PAC-কে গুরুত্বহীন করে দিচ্ছে শাসক দল’, একের পর এক বৈঠকে মুকুলের অনুপস্থিতিতে বিরক্ত পদ্ম শিবির