TMC Dharna: বোসের ‘সৌজন্যে’ সন্তুষ্ট অভিষেক, রাজভবনের বাইরের ধরনায় আপাতত ইতি

সৌরভ গুহ | Edited By: Soumya Saha

Oct 09, 2023 | 8:24 PM

C V Ananda Bose: অভিষেক বলেছিলেন, রাজ্যপাল তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত ধরনা অবস্থান চলবে। আজ রাজভবন থেকে বেরিয়ে অস্থায়ী অবস্থান মঞ্চ থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়-সহ অন্যান্য নেতারা অভিষেকের কাছে প্রস্তাব দেন ধরনা আপাতত মুলতুবি করার জন্য।

TMC Dharna: বোসের সৌজন্যে সন্তুষ্ট অভিষেক,  রাজভবনের বাইরের ধরনায় আপাতত ইতি
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
Image Credit source: Facebook

Follow Us

কলকাতা: বিকেলে রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে দেখা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ২০ মিনিটের বৈঠক শেষে রাজভবন থেকে বেরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা আবার গিয়ে বসেছেন রাজভবনের বাইরের ধরনা-অবস্থান মঞ্চে। অভিষেক বলেছিলেন, রাজ্যপাল তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত ধরনা অবস্থান চলবে। আজ রাজভবন থেকে বেরিয়ে অস্থায়ী অবস্থান মঞ্চ থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়-সহ অন্যান্য নেতারা অভিষেকের কাছে প্রস্তাব দেন ধরনা আপাতত মুলতুবি করার জন্য। এরপর মঞ্চে বক্তব্য রাখতে ওঠেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কী কী বললেন তিনি?

  1. অভিষেক বললেন, “রাজ্যপাল বলেছিলেন ‘ঘেরাও নয়, ঘরে আসুন’। আমি বলেছিলাম, উনি তো নিজেই ঘরে নেই। আমারে ঘরে ডাকছেন। আমি কার সঙ্গে দেখা করতে যাব? যাই হোক, চার-পাঁচ দিন পর গতকাল বাংলার রাজ্যপাল ঘরে ফিরেছেন। তিনি বিমানবন্দরে নামার পর বলেছিলেন, তাঁর থেকে কোনও সময় চাওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা সময় চেয়েছিলাম। পরবর্তীতে রাতের দিকে রাজ্যপালের অফিস থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ৯টা ৫০ মিনিটে ফোন করে বলা হয়, ১০টার সময় চলে আসতে। সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ধরনা চলার পর সবাই বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে আমরা এভাবে যেতে পারি না। আমি অনুরোধ করেছিলাম, আজ রাজ্যপালের সুবিধা মতো যে কোনও একটি সময় আমাদের দেওয়ার জন্য।”
  2.  অভিষেক বললেন, “আমাদের বলা হয়েছিল কোনও ফোন নিয়ে যাওয়া যাবে না। কোনও ফটোগ্রাফার যাবে না। কেউ যায়নি, কোনও ফোন নিয়েও যাওয়া হয়নি। আমরা আমাদের দাবি রাজ্যপালের কাছে উপস্থাপিত করেছি। আমাদের সাংসদদের যে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তা রাজ্যপালের কাছে এক মিনিটের জন্যও বলিনি। কারণ, আমাদের কাজই লড়াই করা। বাংলার মানুষের স্বার্থে আমরা লড়ব। আমরা একবারও বলিনি সাংসদদের চুলের মুঠি ধরে, চ্যাংদোলা করে বের করে দেওয়া হয়েছে।”
  3. তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বললেন, “ভুক্তভোগীদের পরিবারের যে সদস্যরা ছিলেন, তাঁরা রাজ্যপালে কাছে নিজেদের জবকার্ড দেখান। এমনকী নিজেদের জবকার্ড দেখিয়ে পারলে, রাজ্যপালের চরণে অর্পণ করে বলেন, আপনি এর বিচার করুন। তাঁরা দু’বছর ধরে কাজ করে বসে রয়েছেন, তাঁদের সংসার চলছে না। তাঁরা প্রশ্ন করেন, কেন কেন্দ্র তাঁদের টাকা আটকে রেখেছে? রাজ্যপালের কাছে কোনও উত্তর ছিল না।”
  4. অভিষেক আরও জানালেন, রাজ্যপাল বোসের বাধ্যবাধকতার কথা বিবেচনা করে তাঁরা রাজ্যপালকে সময়ও দিয়েছেন। বললেন, “রাজ্যপালকে আমরা বলেছি, আপনি ১০-১৫ দিন সময় নিন। প্রয়োজনে তিন সপ্তাহ সময় নিন। তিন সপ্তাহের মধ্যে আমাদের জানাতে হবে, কেন গরিব মানুষের একশো দিনের টাকা বিজেপি সরকার বন্ধ করে রেখেছে? আপনি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেন। জানতে চান। রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে এটা আপনার দায়বদ্ধতা যে বাংলার মানুষকে যদি ভাতে মারা হয়, তার কাছে কৈফিয়ত তলব করা।”
  5. অভিষেক বললেন, “রাজ্যপাল আমাদের কথা শুনেছেন। আমি রাজ্যপালকে বলেছি, এই ভুক্তভোগীদের দোষ কী! দুর্নীতি যদি হয়ে থাকে তদন্ত হবে। কিন্তু দু’বছরে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসের কেউ কোথাও এফআইআর করেনি। দুর্নীতি হয়ে থাকলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়নি কেন?”
  6. তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বললেন, “আমরা দু’বছর ধরে সৌজন্য দেখাচ্ছি। কিন্তু আমাদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আর আপনি আমাদের থেকে সৌজন্য আশা করবেন না। দু’বছর যখন সময় দিয়েছি, আপনাকে নিশ্চিতভাবে দু’সপ্তাহ আরও সময় দেব। আপনি লিখিত কৈফিয়ত চান, কোন আইনে কেন্দ্র বাংলার ২১ লাখ মানুষের টাকা আটকে রেখেছে?”
  7. অভিষেকের বক্তব্য, সদুত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বললেন, “রাজ্যপাল আমাকে কথা দিয়েছেন, দু’সপ্তাহ নয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।  আমি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমি যতদূর শুনেছি উনি ইতিমধ্যেই দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তিনি যখন তৎপরতা দেখিয়েছেন, আমি আশা করছি উনি একটা বিহীত করবেন।”
  8. অভিষেক বললেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে অনুরোধ করেছেন ধরনা প্রত্যাহার করার জন্য। পরবর্তীতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সৌগত রায়দের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। এমনকী দলনেত্রীর সঙ্গেও কথা বললাম। আমি যদিও চেয়েছিলাম, আরও ২৪ ঘণ্টা ধরনায় বসতে, যেহেতু উনি ২৪ ঘণ্টা সময় চেয়েছেন। কিন্তু দলনেত্রী বলেছেন ও দলীয় নেতারা অনুরোধ করেছেন, যেহেতু রাজ্যপাল সৌজন্য দেখিয়েছেন, বাংলার উচিত পাল্টা সৌজন্য দেখানো। সেই কারণে এক বুক আশা, আকাঙ্খা নিয়ে আজকের কর্মসূচি আমরা প্রত্যাহার করছি। রাজ্যপালকে আমরা ২ সপ্তাহ সময় দিয়েছি। আমি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা কেন্দ্রীয় সরকারকে বেঁধে দিচ্ছি। তার মধ্যে যদি কেন্দ্রের তরফে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা না দেখি, তাহলে ১ নভেম্বর থেকে আবার কর্মসূচি শুরু হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। ১ তারিখ যদি কর্মসূচি শুরু হয়, আর থামবে না। যতদিন না মানুষের টাকা আসছে, ততদিন চলবে।”
  9. অভিষেকের হুঙ্কার, “যতদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন, একজন মানুষকেও ভাতে মরতে দেওয়া হবে না।” বললেন, “যদি এই ২১ লাখ লোকের টাকা দিতে অস্বীকার করা হয়, তাহলে আমাদের আইনের শরণাপন্ন হতে হবে। রাজ্য সরকার ঠিক করবে, এদের টাকা কীভাবে দেবে, যেটা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ছিল।”
Next Article