TV9 Explained: রাজ্যের হাতে আর ক্ষমতা থাকবে না! কী আছে কেন্দ্রের আইএএস ক্যাডার রুল সংশোধনী প্রস্তাবে?

TV9 Bangla Explained: কেন্দ্রের যুক্তি, তাদের হাতে আইএএস ক্যাডার যথাযথ নেই। যার কারণে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সূত্রের খবর, কেন্দ্রে একজন আইএএস আধিকারিকের উপর একাধিক বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে।

TV9 Explained: রাজ্যের হাতে আর ক্ষমতা থাকবে না! কী আছে কেন্দ্রের আইএএস ক্যাডার রুল সংশোধনী প্রস্তাবে?
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jan 22, 2022 | 11:51 AM

কলকাতা: আমলার বদলি নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্রের টানাপোড়েন এবার কার্যত কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আগামী ২৫ জানুয়ারি ‘ডেডলাইন’। তার মধ্যেই সব রাজ্যকে জবাব দিতে হবে কেন্দ্রের পাঠানো খসড়া প্রস্তাব নিয়ে তাদের কী মত। এই প্রস্তাবের মোদ্দা বক্তব্য, ১৯৫৪ সালের আইএএস (ক্যাডার) আইনে সংশোধনী এনে নিজের হাতে ক্ষমতা রাখবে কেন্দ্র। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছে অবিজেপি শাসতি রাজ্যগুলি। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরব পশ্চিমবঙ্গ। ইতিমধ্যে দু’দুটি খোলা চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগও করেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। কী আছে কেন্দ্রের এই খসড়া প্রস্তাবে? কেনই বা কেন্দ্র তৎপর হচ্ছে আইএএস আইন সংশোধন করতে?

আইএএস (ক্যাডার) আইনে কী বলা আছে?

১৯৫৪-র আইএএস (ক্যাডার) আইনের ৬(১)ধারা অনুযায়ী রাজ্যের অধীনে থাকা কোনও ক্যাডার অফিসারকে ডেপুটেশন চাইলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক। কেন্দ্র এবং রাজ্যের আলোচনার ভিত্তিতে সেই আধিকারিককে বদলি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে আধিকারিকের নিজস্ব ইচ্ছাওকে প্রাধান্য দিতে হবে। যদি কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে এ বিষয়ে সংঘাত তৈরি হয়, তা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সূত্র খুঁজতে হবে। অর্থাৎ কেন্দ্র চাইলেই আধিকারিককে যখন খুশি ডেকে নিতে পারবে না। রাজ্যের অনুমতি (নো অবজেকশন) একান্ত প্রয়োজন।

কেন কেন্দ্র এই আইন সংশোধন করতে চাইছে?

কেন্দ্রের যুক্তি, তাদের হাতে আইএএস ক্যাডার যথাযথ নেই। যার কারণে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সূত্রের খবর, কেন্দ্রে একজন আইএএস আধিকারিকের উপর একাধিক বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। সূত্রের খবর, মাত্র ১০ শতাংশ আইএএস অফিসার (মিড লেভেল) স্থানান্তরিত হয়েছে ২০২১ সালে। ২০১৪ সালে ছিল ১৯ শতাংশ। ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (DoPT)-এর তথ্য বলছে, ২০১১ সালে ৩০৯ ডেপুটেশনের জায়গায় ২০২১ সালে ডেপুটেশন হয়েছে মাত্র ২২৩। নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রে ৪০ শতাংশ ডেপুটেশন পদ বরাদ্দ রয়েছে। রাজ্যের অধীনে থাকা আইএএস আধিকারিকদের কেন্দ্র ডেপুটেশন চাইলে সেখানে কাজ করা বাধ্যতামূলক। বাস্তবিক ক্ষেত্রে সেভাবে ডেপুটেশন হচ্ছে না বলে মত কেন্দ্রের। তাই আইন সংশোধনের পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

এতদিন পর কেন আইন সংশোধন?

সূত্রের খবর, কেন্দ্র কোনও আইএএস আধিকারিককে চাইলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেঁকে বসে রাজ্য। প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হওয়ার যুক্তি দেওয়া হয় রাজ্যের তরফে। কোনও রাজ্য রাজি হলেও আধিকারিককে নো অবজেকশন দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়মসি করে। এরফলে বদলি প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাবও লক্ষ্য করা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় তার অন্যতম উদাহরণ বলে মনে করে ওয়াকিবহাল মহল।

নতুন প্রস্তাবিত খসড়ায় কী বলা হচ্ছে?

আইএএস ক্যাডার আইন সংশোধনী করে কেন্দ্র চাইছে, বদলির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকবে। রাজ্য নিজের ইচ্ছে মতো ভিটো প্রয়োগ করে কোনও আধিকারিককে আটকাতে পারবে না। যদি রাজ্য ও কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতও হয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের হাতেই থাকবে। পাশাপাশি, কেন্দ্র যখনই আধিকারিককে তলব করে, রাজ্যের অনিচ্ছা সত্ত্বেও চলে আসতে হবে সেই আধিকারিককে। অর্থাৎ নতুন আইনে রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্যগুলির কী মত?

অধিকাংশ রাজ্যই কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে বিরোধিতা করেছে। এর মধ্যে এনডিএ শাসিত রাজ্যও রয়েছে। জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ওড়িশা, বিহার, মেঘালয়, মধ্য প্রদেশ প্রস্তাবিত খসড়ার বিরোধিতা করে জানিয়েছে, বর্তমান আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই।

ক্যাডার বিধি সংশোধনী খসড়া প্রস্তাবের বিরোধিতা করে দু’দুটি চিঠি লেখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মনে করান, তিনি একসময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের কতটা অসুবিধা হবে তা নিশ্চয়ই তিনি বুঝবেন বলে আশাপ্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী।

উল্লেখ্য, প্রথমে ২০ ও ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্র চিঠি দিয়ে ৫ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যের মত জানতে চায়। এরপর ফের আরও একটি চিঠি ১২ জানুয়ারি ডিওপিটি পাঠায়। সেখানে জবাব দেওয়ার মেয়াদ ২৫ জানুয়ারি। সূত্রের খবর, রাজ্যের তরফে সহযোগিতা না মিললে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সংসদে আগামী অধিবেশনে ক্যাডার আইন সংশোধনী বিল পেশ করা হতে পারে বলেও জানা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন- Republic Day Tableau : বিশ্লেষণ : প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য তরজা! কীভাবে হয় এই ট্যাবলো নির্বাচন?